ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

প্রয়োজন ৩ লাখ, আছে ৪৮ হাজার নার্স

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
প্রয়োজন ৩ লাখ, আছে ৪৮ হাজার নার্স ...

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক এবং নার্সের অনুপাত হতে হবে ১:৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তত ৩ জন নার্স থাকতে হবে। সেই হিসাবে দেশে প্রায় ৩ লাখ নার্সের প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারিভাবে কর্মরত আছেন মাত্র ৩৪ হাজার। সারাদেশে নিবন্ধিত নার্স আছেন ৪৮ হাজার। যা চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। এতে করে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পেশাগত উৎকর্ষতা সাধন এবং দায়িত্বপ্রবণ হলে বর্তমানে নিযুক্ত নার্স দিয়ে আরও ভাল সেবা পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও নার্সিং কাউন্সিলকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নার্সিং পেশার উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও রোগীরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। এমনকি সাধারণ নার্সরাও হচ্ছেন অধিকার বঞ্চিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রকৃত মেধাবী নার্সিং অফিসারদের অবমূল্যায়ন করা, ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে নার্সিং পেশা দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে নার্সিং পেশা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে। এতে করে নার্স এবং রোগী উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নার্সিং পেশায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।  
নার্সিং পেশার মান সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও নার্সিং কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের অপসারণ করে সৎ ও যোগ্য লোক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা কথা উল্লেখ করেন ইকবাল হোসেন।

জানা গেছে, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে রহিমা খাতুন, সাহাজাদী হারুন, জোহরা বানু, আক্তার বানুর মতো কয়েকজনের হাত ধরে এই পেশার যাত্রা। সেই সময় নার্সিং পেশাকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নার্সিংয়ের জন্য পৃথক প্রশাসন কাঠামো তৈরি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেন। ২০০৯ সালে পুনরায় ১৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর পদসৃষ্টিসহ ২০১০ সালে প্রায় ২০০০ জন নার্স, ২০১৩ সালে ৪১০০ জন নার্স এবং ২০১৬ সালে ইতিহাসের রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ১০ হাজার নার্সকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আরও ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। এত নিয়োগের পরেও বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নার্সের পদ শূন্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যাপ্ত সংখ্যক নার্স নিয়োগের পাশাপাশি বর্তমান সরকার সেবা পরিদফতরকে অধিদফতরে রূপান্তরকরণ ও নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা প্রদান এবং প্রথম শ্রেণির নার্সিং পদ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতে এম.এস.সি নার্সিং কোর্স চালুসহ সরকারিভাবে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট অনুমোদন করা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সরকারি ৬২টি নার্সিং প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ২১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর সরকারি নার্সিং প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৫ হাজার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১১ হাজারের বেশি নার্স  নার্সিং কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত হন।

রোববার (১২ মে) এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নার্সেস বলিষ্ট কণ্ঠস্বর, স্বাস্থ্য মানবিক অধিকার’। এবারের নার্সিং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই  দিবসটি উপলক্ষে রোববার রাজধানীর মুগদায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় একটি র‌্যালি এবং সকাল সাড়ে ৯টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর আড়াইটায় স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের পক্ষ থেকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সকাল ১১টায় রাজধানীর বারডেম মিলনায়তনে ডায়াবেটিক সমিতির বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১২ জন নার্সকে ‘মাহবুব-উজ-জামান অ্যাওয়ার্ড- ২০১৯’ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

আধুনিক নার্সিং-এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসাবে পালন করা হয়। তিনি ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মানব সেবায় বিশেষভাবে উৎসাহী ছিলেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের মানবেতর জীবন অনুভব করে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তাদের সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। প্রদীপ হাতে তাদের সেবা করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কারণে তাকে তখন থেকেই ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।