ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের দৌরাত্ম্য

হবিগঞ্জ: ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আধিপত্য, ডাক্তারদের কমিশন আদায়ের মহোৎসব আর দালালদের দৌরাত্ম্যে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেন হয়ে উঠেছে ‘অনিয়মের আখড়া’। এমন ‘অনিয়মের’ কারণে ভুগতে হবে বলে রোগীদের এই সরকারি হাসপাতালের সামনে থেকেই ভুলিয়ে বাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে।

এতে একদিকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। অন্যদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দরিদ্র লোকজন।

দিনের পর দিন এই অনিয়ম চলতে থাকলেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অনেকটাই নিরুপায়। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় দালালদের নির্মূল করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকের সামনে ফরিদ আহমেদ নামে এক লোক বসে আছেন। ডাক্তার কথা বলার আগেই তিনি রোগীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। জিজ্ঞেস করা হলে জানান, তিনি এখানে রোগী নিয়ে এসেছেন। অথচ পরে জানা যায় তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত।

এছাড়া হাসপাতালের প্রধান ফটক, জরুরি বিভাগসহ একাধিক স্থানে ওঁৎ পেতে আছেন স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিকদের ‘নিয়োজিত’ কয়েকজন যুবক। রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যান পাশ্ববর্তী প্রাইভেট ক্লিনিকে।

ছবি: বাংলানিউজচুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেটের বিপরীতে অবস্থিত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় শত শত রোগীর ভিড়। ডাক্তারের জন্য অপেক্ষমান গাজীপুর এলাকার আঞ্জব মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি তার স্ত্রী পিয়ারা খাতুনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। সেখানে প্রবেশের পরই এক ব্যক্তি হাসপাতালে ডাক্তার নেই বলে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে এসেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হানিফ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) অসুস্থ হয়ে তিনি সরকারি এ হাসপাতালে আসেন। জরুরি বিভাগে আসার পরই তাকে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এক যুবক। পরে তার সঙ্গে বেশি টাকা নেই জানালে ওই যুবক ছেড়ে দেন হানিফকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসিক মেডিকেল অফিসাররা সরকারি সেবার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিদিনই প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা দিচ্ছেন।  

এছাড়া হাসপাতালে আসা রোগীদের নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে। প্রাইভেট হাসপাতালে নির্ধারিত ফি’র পাশাপাশি রোগীপ্রতি ১০০ টাকা করে কমিশনও পাচ্ছেন তারা।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএমে আজমিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কেউ জানায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত করলে দালাল নির্মূলে কাজ করা হবে।  

তবে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যাপারটি তিনি অবগত বলে জানিয়েছেন।

হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুচীন্ত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দালালের উৎপাত চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি পুরাতন সমস্যা। প্রতিটি ক্লিনিক এবং ফার্মেসির দালাল রয়েছেন এখানে। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের সহজেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
আরএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।