ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

‘বোনরে নিয়া ২দিন হাসপাতালে, একটা ডাক্তার আইয়া দেখলো না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
‘বোনরে নিয়া ২দিন হাসপাতালে, একটা ডাক্তার আইয়া দেখলো না’

হবিগঞ্জ: ‘আমার বইনডারে লইয়্যা দুইদিন ধইরা হাসপাতালে ভর্তি। একটা ডাক্তার আইয়াও দেখলো না। এইহানে ভর্তি থাকলেও ডাক্তার দেখাতে হয় ডায়াগনস্টিকে যাইয়া। একটা সরকারি ওষুধও পাওয়া গেলো না দুইদিনের মধ্যে। আইজকা বিকালে রোগী লইয়্যা অন্য জায়গায় চইলা যাইমু।’

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুকের ব্যথা নিয়ে ভর্তি আরজুদা আক্তারের বড় ভাই ছাবু মিয়া এভাবেই আক্ষেপ করে কথা বলছিলেন বাংলানিউজকে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিলো তার।

 

উপজেলার পীরের বাজার এলাকার বাসিন্দা ছাবু মিয়া বলেন, গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে আমার বোনের বুকে ব্যথা হলে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। কিন্তু সারাদিন চলে গেলেও কোনো ডাক্তার না আসায় চলে যাই পার্শ্ববর্তী সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানকার ডা. তানভীর আহমেদ আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ভর্তি থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু দুইদিন হাসপাতালের বেডে থাকার পরও কোনো ডাক্তার আসেননি রোগী দেখতে।  চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।  ছবি: বাংলানিউজক্ষুব্ধ ছাবু মিয়া সরকারি হাসপাতালের দুর্দশা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, শুক্রবার বিকেলে আবারও ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. তানভীর আহমেদকে দেখিয়ে তার বোনকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন।

চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবায় এমন অবহেলা নিয়ে একই অভিযোগ করেন উপজেলা লাতিরগাঁও গ্রামের হাছেনা আক্তারও। শ্বাসকষ্টের রোগে আক্রান্ত তার স্বামী ছামির হোসেনকে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে ভর্তি করেন হাসপাতালে। কিন্তু শুক্রবার সকাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসকও তাকে এসে দেখেননি। হাছেনা বলেন, নার্সরা এলেও তারা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৫ জন ভর্তি কমপ্লেক্সে। অথচ জরুরি বিভাগে নেই কোনো আবাসিক মেডিকেল অফিসার। সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন মো. সজল মিয়া নামের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক। এই তিন ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন সজলের পরামর্শে। এই ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছ থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয় ১৫ রোগীকে। চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেই কোনো চিকিৎসক।  ছবি: বাংলানিউজএ বিষয়ে চুনারুঘাট বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা সাজিদুল ইসলাম বংলানিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিয়মিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে প্র্যাকটিস করেন। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা।

উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সোহেল আরমান বাংলানিউজকে বলেন, চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের ছত্রছায়ায় থেকে সরকারি চিকিৎসকরা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।

মানবাধিকার কর্মী শেখ মো. হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীরা এসে বসে থাকেন, চিকিৎসক না পেয়ে ইন্টার্নদের দিয়েই চিকিৎসা করান। প্রভাবশালী কেউ হাসপাতালে এলে ফোন পেয়ে তারা আসেন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

যোগাযোগ করলে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর বাংলানিউজকে বলেন, একজন প্রতিমন্ত্রী হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা। বিষয়টি নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলাপ করবো। কথা বলছেন চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী।  ছবি: বাংলানিউজএ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুমিন উদ্দিন চৌধুরীর বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার দায়িত্বে ছিলেন ডা. রাসমিনা আক্তার।

ডা. রাসমিনাকে হাসপাতালে না পেয়ে ফোন করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজ শুক্রবার। তাই আমি আসবো না। শনিবার এলে আমাকে পাওয়া যাবে। তবে হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনেক অভিজ্ঞ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টার্নদের চিকিৎসা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।