ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

অজ্ঞাত রোগ: ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছেছে মেডিকেল টিম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
অজ্ঞাত রোগ: ঠাকুরগাঁওয়ে পৌঁছেছে মেডিকেল টিম অজ্ঞাত রোগে নিহতদের বাড়িতে এলাকাবাসীর ভিড়। (ফাইল ফটো)

ঠাকুরগাঁও: অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা নির্ণয়ে ঢাকা থেকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)  ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম ঠাকুরগাঁও এসে পৌঁছেছে। 

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেডিকেল টিমের সদস্যরা ঠাকুরগাঁওয়ে এসে পৌঁছায়।
এর আগে ওই টিমের সদস্যরা সকালে রংপুরে পৌঁছে মৃত এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আক্রান্তদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই পরিবারের আরো এক নিকটাত্মীয় এই রোগে আক্রান্ত হন। তাকে দুপুরে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সর্বশেষ আক্রান্ত নারী হলেন নিহত আবু তাহেরের শ্যালিকা গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম। তার বাড়ি সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামে। এ নিয়ে হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি অন্যরা হলেন- কহিনুর বেগম (২০) এবং তার ছেলে  আবীর (২ বছর) সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম, মৃত ইউসুফ আলীর শ্বশুর রবিউল ইসলাম (৪৫), অ্যাম্বুলেন্স চালক মোতালেব। তাদের রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  

একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামজুড়ে মৃত্যু আতঙ্ক বিরাজ করছে। সর্বশেষ মৃত মেহেদী হাসানকে তার আত্মীয় ও নিকটজনরা দাফন করেন। বর্তমানে নিকটজন ছাড়া কেউ তাদের বাড়িতে যাচ্ছেন না। মেহেদী হাসানকে দাফনের পর ওই গ্রামে সর্তকতা জারি করে মাইকিং করলে স্থানীয়রা আবু তাহেরের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  আক্রান্ত এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে অবাধে চলাচল না করার জন্য নির্দেশনা জারি করে মাইকিং করার পর স্থানীয়রা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।

মঙ্গলবার সকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সোমবার প্রশাসন ওই এলাকার ভান্ডারদহ উচ্চ বিদ্যালয় ও ভান্ডারদহ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়।

তবে  ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আক্রান্ত এলাকায় অবাধে চলাফেরা বন্ধে চৌকিদার এখনো নিয়োজিত রয়েছেন। আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শের জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)  থেকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম বিকেলে ঠাকুরগাঁও এসে পৌঁছেছে।  

এর আগে ওই টিমের সদস্যরা সকালে রংপুরে পৌঁছে মৃতদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

উচ্চ পর্যয়ের মেডিকেল টিমটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান নেওয়াজ। তবে  চিকিৎসকরা বলছেন এটা ভাইরাস জনিত রোগ না। ভাইরাস ছড়ালে গ্রামবাসী বা প্রতিবেশীরাও আক্রান্ত হতেন। কিন্তু আক্রান্তরা একই পরিবারের ও আত্মীয়।

ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, এখন পর্যন্ত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।

ওই পরিবারের নিহত তাহেরের বড় ছেলে ইউসুফের স্ত্রী কোহিনুর ও তার ২ বছরের শিশু আবীর রংপুরে চিকিৎসাধীন। ঢাকার আইইডিসিআর টিমের সদস্যরা তাদের স্যাম্পল সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নে ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবু তাহের  (৫৫), তার জামাতা   হাবিবুর রহমান ছুটু (৩৫), তাহেরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫), তার ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪ ) মারা যায়।

আবু তাহেরের  জামাতা হাবিবুর রহমান ৬ বছর দুবাইয়ে ছিলেন। ৬ মাস আগে তিনি সেখান থেকে দেশে ফেরেন। তিনি বিদেশ থেকে ওই ভাইরাসের জার্ম বহন করে নিয়ে এসেছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। তবে হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম এবং তার ২ ছেলে-মেয়ে এখনও সুস্থ রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।