ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে কমছে চিন্তাশক্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে কমছে চিন্তাশক্তি ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার দক্ষতা ও চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। এতে বিশেষ করে শিশু-কিশোরেরা শিকার হচ্ছে ‘সাইবার বুলিং’য়ের। যা পরে তাদের ঠেলে দিচ্ছে মানসিক অসুস্থতার দিকে।

বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চালানো বিভিন্ন জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।

এ উপলক্ষে বুধবার (১০ অক্টোবর) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য-‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য’।  

মানসিক সমস্যা দূর করার পাশাপাশি এ ধরনের জটিল কিন্তু সমাধানযোগ্য রোগের ক্ষেত্রে তরুণদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা।  

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৯০ ভাগ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ও গেমার ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী। গবেষকদের মতে, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার। গবেষণার জরিপের তথ্য অনুসারে, দেশে কিশোর-কিশোরীরা ‘সাইবার বুলিং’-এর শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইন গেমসে আসক্তদের সাইবার বুলিং-এর ঝুঁকি বেশি। (Cyber Bullying- মূলত কোনো শিশুকে প্রলুব্ধ বা হেয় করা, ভয় দেখানো এবং মানসিক নির্যাতন করা বোঝাতে ‘সাইবার বুলিং’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করা হয়)। যা পরিবর্তীকালে ওই কিশোর-কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্য অসুস্থ করে তোলে।

সব মানসিক অসুস্থতার অর্ধেক শুরু হয় ১৪ বছর বয়সে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা থেকে যায় অগোচরে। বয়ঃসন্ধিকালে এ রোগের কারণে বিষন্নতা দেখা দেয়। এ রোগের তৃতীয় প্রধান লক্ষণ বিষন্নতা। এছাড়া ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার কারণও মানসিক রোগ। আত্মহত্যা এ রোগের দ্বিতীয় প্রধান লক্ষণ।

তাছাড়া বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অনেক দেশে বয়স্কদের মধ্যে অ্যালকোহল এবং অবৈধ ওষুধের ক্ষতিকর ব্যবহার মানসিক অসুস্থতার প্রধান কারণ। অনিরাপদ যৌনতা বা বিপজ্জনক ড্রাইভিংও মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। অল্প বয়সে মানসিক স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের প্রতি ছয়জনের একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক রোগ সাধারণত ১৪ বছর বয়সে শুরু হয়, যা প্রাথমিক অবস্থায় পরিলক্ষিত হয় না। অবসাদ এ রোগের প্রধান লক্ষণ। যে কারণে এ বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। যা বিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় অন্যতম প্রধান কারণ। বেঁচে থাকলেও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে বাঁচে তারা।

যৌন সমস্যাও কিশোর-কিশোরীদের আরেকটি প্রধান মানসিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকেই কিশোর-কিশোরীরা যৌন সমস্যার বিষয়ে ভুল ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা এ থেকে মুক্তি পেতে রাস্তায় যৌন ওষুধ বিক্রেতা এবং কবিরাজদের স্মরণাপন্ন হয়। এতে করে রোগ তো সারেই না বরং দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। ফলে মানসিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে তারা।

কিশোর-কিশোরীদের মানসিক রোগের বিবরণ দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, মানুষ একেবারে পাগল হয়ে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাকে ওষুধ দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু মানসিক সমস্যা যদি শারীরিক সমস্যায় রূপান্তরিত হয় তাহলে সেটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশ লক্ষ্য করা যায়। একে বলা হয় কনভারশন ডিজঅর্ডার। যার কোনো নিউরোলজিক্যাল কারণ নেই। যেমন রোগী মনে করছে সে হাঁটতে পারে না। তার মস্তিষ্কের এমন নির্দেশনার কারণে ধীরে ধীরে তার পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। এসব মানসিক সমস্যা থেকে এ বয়সীদের নিরাপদে রাখতে অবিভাবকদের ভূমিকাই মূখ্য।  

এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র মানসিক রোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফাতেমাতুজ্জোহরা বলেন, সাধারণত মস্তিষ্কের নিউরো ট্রান্সমিটারের তারতম্যের কারণে মানসিক রোগ হয়। এসব রোগীরা একটি কাজ বারবার করতে থাকে। যেমন শুচিবায়ু। কিন্তু এটিকে কোনো বাবা-মাই প্রথমে গুরুত্ব দিতে চান না। পরে জটিল আকার ধারণ করলে তারা চিকিৎসকের কাছে যান। এছাড়া অনেক অভিভাবক সন্তানদের বেশি স্বাধীনতা দেন। ফলে সন্তানরা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। বাস্তবতা বা পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। ধীরে ধীরে তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আবার কিছু সন্তানকে অতিরিক্ত শাসনে রাখা হয়। ফলে তারা হীনমন্য হয়ে বেড়ে ওঠে। বাবা-মায়েদের মূলত সন্তানকে মূল্যায়ন করা উচিত, কিন্তু নিয়ম-নীতির ভেতর থেকে।

বিএসএমএমইউ’র মানসিক রোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বাংলানিউজকে জানান, আগে মানসিক রোগের ক্ষেত্রে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসতো না। এ বিষয়টিকে অনেকে গোপন রাখতে চাইতো। তাছাড়া দেশের মানসিক রোগীদের একটি বড় অংশ যৌন সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু সামাজিক কারণে এ বিষয়টি আমাদের দেশে পড়ানো হতো না। ফলে এ সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব হতো না। তবে বর্তমানে বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যা ইতিবাচক। এতে সচেতনতা বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮
এমএএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।