ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

কম খরচে বিশ্বমানের শিক্ষা আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজে

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
কম খরচে বিশ্বমানের শিক্ষা আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত ৩ শিক্ষার্থী। ছবি: বাংলানিউজ

ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে: প্রায় ৩০০ বিঘা জায়গার ওপর সুবিশাল ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম, অডিও ও ভিজুয়াল পদ্ধতিতে পাঠদান, স্ক্যানার। কী নেই এই মেডিকেল কলেজে? বর্ণনায় মনে হতে পারে রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের কোনো মেডিকেল কলেজ। 

কিন্তু না, এটি মফস্বল শহর যশোরের পুলের হাট আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রত্যক্ষ না করলে এই মেডিকেল কলেজের বিশালতা অনুমান করা অসম্ভব।

স্থানীয় শিক্ষিত-শ্রেণীরই অবাক লাগে, এই এখানে এতো বড় ক্যাম্পাসে সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষাদান করছে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। শিক্ষার মানও অন্য যে কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজের তুলনায় কয়েকগুণ ভাল, তা সচেতন শিক্ষিত-শ্রেণীই বলেন। আর শিক্ষা ব্যয়? সেটা সরকার নির্ধারিত কোর্সের চেয়েও অনেক কম।  
আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসবুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সবুজ প্রকৃতির চাদরে মোড়ানো আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সাজানো-গোছানো পরিপাটি পুরো ক্যাম্পাস। নজর কাড়ে কলেজের বিশাল হল রুম, একশ’ ফিটের ইনডোর স্টেডিয়াম, কনফারেন্স রুম, অত্যাধুনিক লেকচার থিয়েটর, ল্যাবরেটরিজ এবং মিউজিয়াম।  

প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদনে কেবল ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠান আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ পাঁচ বছর মেয়াদী এমবিবিএস শিক্ষাদান করছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধীনে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে সরকার অনুমোদিত ৬৫ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখার সুযোগ পান। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে যাত্রার পর এখন পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচ মিলিয়ে এই মেডিকেল কলেজে ২৭৯ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এ বছরই প্রথম ব্যাচের ৩০ জন শিক্ষার্থী এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২৬ জন উত্তীর্ণ হয়ে ইন্টার্নশিপও শেষ করে ফেলেছেন। এখান থেকে এমবিবিএস করার পর দেশ ও দেশের বাইরের যে কোনো হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজে চাকরির সুবিধা পাচ্ছেন তারা।  

আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা ব্যয়
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ার ক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত মাসিক বেতন ৮ হাজার টাকা, আর ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, এর সঙ্গে ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ টাকা। আর আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় একজন শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ দিচ্ছে।

অবশ্য এর চেয়ে কমেও পড়ার সুযোগ রয়েছে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেলে। সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ গরিব-মেধাবী কোটায় ৩ জন ভর্তির সুযোগ থাকলেও আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজে এর চেয়ে বেশি গরিব-মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। গত শিক্ষাবর্ষেও ৪ জন বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন এই মেডিকেল কলেজে।  
 
শিক্ষার ব্যয় ও মানের ব্যাপারে কথা আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. খান শাকিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার মানের ব্যাপারে আমাদের প্রতিষ্ঠান অদ্বিতীয়। আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিনের একটাই চাওয়া, যেটাই করবো নাম্বার ওয়ান হতে হবে।  

কোর্স অফার
আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির ১৮ মাসের মাথায় প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় (অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি) পাস করতে হয়। এর ১২ মাস পর কমিউনিটি মেডিসিন এবং ফরেনসিক মেডিসিনের ওপর পরীক্ষা হয়। তার ১২ মাস পর হয় তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষা (ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স , প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি)। ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা হয় তারও ১৮ মাস পর ( মেডিসিন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ, সার্জারি এবং এর সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ, গাইনোকলজি অ্যান্ড অবস)।

কথা বলছেন ডা. খান শাকিল আহমেদ।  ছবি: বাংলানিউজভর্তির যোগ্যতা
নিরিবিলি পরিবেশে গড়ে ওঠা এই মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চমাধ্যমিকে (এইচএসসি) পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থাকতে হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা মিলিয়ে মোট জিপিএ ৮ থাকতে হবে। তবে কোনোটাতেই জিপিএ ৩.৫ এর নিচে হওয়া যাবে না।
 
বাছাই প্রক্রিয়া
স্বল্প খরচে পড়াশোনার জন্য পরিচিত হয়ে ওঠা আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির যোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর রাখা হয় এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের জন্য। এসএসসির জিপিএ’র সঙ্গে ৮ গুণ এবং এইচএসসির জিপিএ’র সঙ্গে ১২ গুণ করার পর দুই ফলাফল যোগ করে যা দাঁড়ায়, তা ১০০ এর মধ্যে প্রাপ্ত ফল ধরা হয়। এরপর বাকি ১০০ নম্বরের জন্য হয় লিখিত পরীক্ষা। সবমিলিয়ে যারা সবচেয়ে বেশি নম্বর পাবে, তারাই ক্রমান্বয়ে ডাক পাবে ভর্তির জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
এসএম/এইচএ/

** বাড়ি থেকে রোগী এনে চোখের ফ্রি অপারেশন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।