ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ক্যানসার মানেই মরে যাওয়া নয়: ডা. সোমনাথ দে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
ক্যানসার মানেই মরে যাওয়া নয়: ডা. সোমনাথ দে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. সোমনাথ দে। ছবি: জিএম মুজিবুর 

সাভার (ঢাকা) ফিরে:  ক্যানসার মানে মরে যাবো, ক্যান্সার মানেই বহু ব্যয়, চিকিৎসায় সব শেষ হয়ে গেলো- সেটা নয়। এখানে বহু রোগী সফল চিকিৎসায় রোগমুক্ত হয়েছেন। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তারা এখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।  

বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এমন কথা বললেন এনাম ক্যানসার সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অনকোলজি অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোমনাথ দে।  

আরও পড়ুন: বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে এনাম ক্যানসার সেন্টার
সেবায় অনন্য সাভারের এনাম মেডিকেল

তারই তত্ত্বাবধানে ঢাকার অদূরে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যান্সার সেন্টারে মরণব্যাধি ক্যানসারের বিরুদ্ধে চলছে সফল চিকিৎসা।

 ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. সোমনাথ দে।  ছবি: জিএম মুজিবুর 

শনিবার (১৫ জুলাই) ক্যান্সার সেন্টারের নিজ চেম্বারে বসে বাংলানিউজের মুখোমুখি হন ডা. সোমনাথ দে। ক্যান্সার নিরাময়ের চিকিৎসা, ব্যয় ও আনুসঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে বাংলানিউজের সাথে খোলামেলা কথা বলেন ভারতের স্বনামধন্য এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সর্বশেষ প্রযুক্তি নিয়ে এনাম হাসপাতালের স্বতন্ত্র এই সেন্টারটি ইতোমধ্যেই মানুষেরর আস্থায় পরিণত হয়েছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সারের মতো অনেক ক্যানসারই এখন যথাযথ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাচ্ছে। চালুর পর তো গত ৬ মাসে আমাদের এখানেই অন্তত এক হাজার ক্যানসার রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।  
 
তিনি বলেন, অত্যাধুনিক ইন্টারলুমিনাল ব্রেকিথেরাপি দিয়ে আমরা খাদ্য নালীর ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন অধ্যায় সূচনা করেছি। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ১০ জন রোগি এখানে এ রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন।  ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. সোমনাথ দে।  ছবি: জিএম মুজিবুর 

অত্যাধুনিক মেশিন ও প্রযুক্তিতে অভিনব পদ্ধতিতে ব্রেকিথেরাপিতে বাংলাদেশই পাইওনিয়র বলেও জানান ডা. সোমনাথ দে।  
 
তিনি বলেন, যে সব রোগি রেডিও থেরাপি, কোমো থেরাপি সম্পূর্ণ করেছেন তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগমুক্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০০ জনের বেশি রোগিকে। অত্যাধুনিক রেডিও (আইএমআরটি, আইজিআরটি) থেরাপি নিয়েছেন ১৫০ জন।  
 
ডা. সোমনাথ বলেন, মানুষের ধারণা ক্যানসার ট্রিটমেন্ট মানে প্রচুর ব্যয়। কিন্তু যথাযথভাবে রোগ নির্ণয় করে ট্রিটমেন্ট করা হলে ব্যয় কমে আসবে। ক্যানসার মানে মানে যুদ্ধ। নির্দিষ্ট টার্গেট করে শত্রুকে আঘাত করতে হবে।  
 
তিনি বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষ, একজন কৃষক বা রিকশাচালক সুস্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, এটাই আমাদের বড় অর্জন। আমাদের বিভাগ বিশ্বমানের। রেজাল্টগুলো হাতে নিয়েই আমরা একথা বলছি। ’

এনাম ক্যানসার সেন্টার হলিস্টিক অ্যাপ্রোচে কাজ করে জানিয়ে ডা. সোমনাথ বলেন, আমরা কোনো রোগিকে ফেরাইনি। কেউ অর্থের অভাবে এখান থেকে চলে যায় নি। রোগির আর্থিক অবস্থা দেখে ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। এখানে ১০৩ বছরের রোগিও রেডিও থেরাপি নিয়েছেন।  
 
তিনি বলেন, অন্য হাসপাতাল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এলে আমরা তার চিকিৎসা করছি। এখানকার চিকিৎসা খরচ অন্য হাসপাতালের তুলনায় অনেক কম। অনেক ক্ষেত্রেই অন্য হাসপাতালে ৬/৭ লাখ টাকা খরচ হলেও আমরা এখানে মাত্র ৫০/৬০ হাজারের মধ্যেই চিকিৎসা করছি।   
 
নিম্নবিত্ত রোগিরাই এনাম ক্যানসার সেন্টারে বেশী আসেন জানিয়ে ডা. সোমনাথ বলেন,  সব শ্রেণির রোগিই এখানে আসতে পারেন। যারা আরলি স্টেজে আসবেন তারা চিকিৎসায় সুস্থ হবেনই।  
 
তিনি বলেন, আমি এখানে আছি ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৭ দিন। আমরা যে সময় দিচ্ছি তা  কেউই রোগিকে দেবে না। আর খরচও অন্য যে কোনো হাসপাতালের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। এখানে বিশ্বমানের যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো রয়েছে। সাফল্য ৮০ শতাংশ, যা উল্লেখযোগ্য বলেই মনে করি।  
 
অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ট্রিটমেন্টে বাড়তি খরচ হয় জানিয়ে ডা. সোমনাথ বলেন, যার যেটুকু প্রয়োজন এখানে সেটুকুই দেওয়া হয়। আমরা দেখছি ৯০-৯৫ শতাংশ কেসেই যারা বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন তাতে টাকা বিনা কারণে টাকা ব্যয় হয়েছে। এখানে আসার পর যারর নির্দিষ্ট যা দরকার, সে ট্রিটিমেন্ট করছি।  
 
ডা. সোমনাথ বলেন, এনাম হাসপাতালের সেন্টারটি ক্যান্সার চিকিৎসায় ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হয়ে উঠেছে। এখানে যথেষ্ট আন্তরিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ৯ জন চিকিৎসক ছাড়াও ৪৫ জনের মতো স্টাফ রয়েছেন এই সেন্টারে। এখানে আমরা দিনে ৬০/৭০ জনকে রেডিওথেরাপি ও ৫০ জনকে কেমোথেরাপি দিতে পারি।  
 
বিভিন্ন দেশে কাজ করে আসা ডা. সোমনাথ বলেন, ভারতে তিনটি ক্যানসার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। মিশনারি স্কুলে পড়ার কারণে আমি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী। আমি সব জেনেই এখানে এসেছি। মানুষ তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাচ্ছে, এটাই আমার সুখ! এনাম মেডিকেল কর্তৃপক্ষও যথেষ্ট আন্তরিকভাবে আমাদের দেখছে।

তিনি বলেন, ক্যান্সার মানেই জমিজমা সব শেষ হয়ে গেলো- এই ধারণা পাল্টে দিয়ে আমি বলি, জমি বিক্রির দরকার নেই। নগদ যে টাকা সেটাই দিয়ে শুরু করেন।  
 
পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকায় বেড়ে উঠেছেন জানিয়ে ডা. সোমনাথ বলেন, দরিদ্র মানুষের টাকা না থাকার দুঃখটা আমি ফিল করেছি। ছোটবেলায় দেখেছি অনেক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তাই এমবিবিএস করার পরে আমি ক্যানসার রোগীদের নিয়ে কাজ শুরু করি।  
 
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল গ্রাজুয়েশন শেষে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ ভেলর, টাটা মেমোরিয়ালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন সোমনাথ। এমএসসি ডিগ্রি অর্জন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস থেকে। কার্ডিং ইউনিভার্সিটির অনারারি লেকচারার ছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্যানসার সংস্থার সদস্য ছিলেন।  

 বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।