ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

সুখি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ১০ নিয়ম

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
সুখি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ১০ নিয়ম

আপনি কি সুখি? প্রশ্নটা যত সহজ মনে হয় আসলে তত সহজ না। এই প্রশ্নের ভেতর আরো অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে।

মানুষ সুখি হয় কিসে? সুখি হওয়ার উপায় কি একটি না অনেকগুলো? সুখ কি সত্যিই মাপা যায়?

আপনি যদি একজন অর্থনীতিবিদ অথবা সমাজ বিজ্ঞানী হয়ে থাকেন, তাহলে মানুষ কতটা সন্তুষ্ট সেটা বোঝার জন্যে আপনাকে হয়ত বিভিন্ন সায়েন্টিফিক সার্ভের ওপর নির্ভর করতে হবে। খুব ধার্মিক কোনো ব্যক্তি আবার এই সন্তুষ্টি বোঝার চেষ্টা করবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে।

কে সুখি শুধু তাই নয়, সুখ কী তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। কোনো সমাজে সুখ হচ্ছে সৌভাগ্য, আর কোথাও কোথাও সুখি মানুষের অর্থ একজন ভালো মানুষ, আবার অন্য কারো কাছে সুখ মানে আরাম-আয়েশ স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন।

মানুষের জীবনের গল্পগুলোর মতোই বদলে যায় সুখের সংজ্ঞা। তাই তো এমন অসংখ্য গল্প খুঁজে পাওয়া যাবে যেখানে জীবনের কঠিনতম সংগ্রামে লড়েও মানুষ সুখে আছে, সুখি মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করছে। সুখি মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সুখি হওয়ার দশটি টিপস নিয়ে এই আয়োজন।

১. সুখি দেশে বসবাস
বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মানুষেরা কতটা সুখি এ নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। Happy Planet Index মনে করে সুখের সাথে একটা দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদির সম্পর্ক রয়েছে। তাই সুখি দেশে বসবাসকারী মানুষেরা তুলনামূলক বেশি সুখি। এছাড়া দেখা গেছে, শিক্ষার হার যাদের মধ্যে বেশি তারা তুলনামূলক বেশি সুখি।

২. সমস্যার সমাধান খোঁজা
সমস্যায় ডুবে না থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার অভ্যাস মানুষকে সুখি করে। প্রথমে শুনে কিছুটা গুরুত্বহীন মনে হতে পারে কিন্তু এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ মানুষই সমস্যায় এমনভাবে ডুবে যান যে কোনো সমাধানই আর চোখে পড়ে না। সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করলে কোনো একটা বিষয় ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অভ্যাস তৈরি হয়। এতে মানুষ বেশ পজিটিভ হয়ে ওঠেন এবং সমস্যায় আক্রান্ত না হয়ে সমাধান খুঁজে পান সহজেই।

৩. সাধারণ জীবন যাপন
অনেক কিছু করার চাইতে অল্প কিছু অর্থপূর্ণ কাজ করা বেশি ভালো। বর্তমানে অনেক মানুষ এই কথাটি ভুলতে বসেছেন। নির্দিষ্ট একটি সময়ে যেকোন একটি কাজ মনোযোগ দিয়ে করলে—অর্থাৎ মাল্টিটাস্কিং না করলেই মানুষ সুখি থাকে। আবার, খুব বেশি বিলাসবহুল জীবন মানেই কিন্তু সুখি জীবন নয়। সবাই অসাধারণ জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখলেও সুখ ধরা দেয় সেই সাধারণ জীবনেই।

৪. ব্যায়াম
শরীর ও আত্মার যোগাযোগ নতুন আবিষ্কার নয়, অনেক পুরনো ব্যাপার। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করার সুফলটা মনের ওপরও পড়ে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার হার খুব কম। ব্যায়াম করলে স্ট্রেস সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমতে থাকে। তাই স্ট্রেস কমানোর জন্যে হলেও নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করা খুব জরুরী। তাছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে মস্তিষ্ক থেকে এন্ডরফিন নামের ব্যথানাশক হরমোন নিঃসৃত হয়। এন্ডরফিন শারীরিক ক্লান্তিও দূর করে।

৫. সব ধরণের অনুভূতি মেনে নেয়া
পজিটিভ-নেগেটিভ সব ধরনের অনুভূতি নিয়েই জীবন। জীবনে দুঃখ, বেদনা, হতাশা, বিষণ্ণতা থাকবেই। এইসব ইমোশন কিভাবে কাজ করে বুঝতে পারলে তা মেনে নেয়া সহজ হয়। সব ধরনের অনুভূতি মেনে নেয়ার মধ্য দিয়েই সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া যায়। আর, এটাই সুখি হওয়ার দশটি মন্ত্রের একটি।

৬. প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো
মানুষ যতই শহরে থাকুক না কেন, প্রকৃতির প্রতি তার আলাদা টান থাকবেই। মনে মনে কে না স্বপ্ন দেখে সমুদ্রের ধারে কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় ঘর বেঁধে নিজের মতো বাস করবে! প্রকৃতির কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষ বিভিন্ন রোগ-শোকে কম আক্রান্ত হন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায় এমন জানালার কাছের বেডের রোগীরা হাসপাতালের অন্য রোগীদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

৭. কেনা সুখ
সুখ কি কেনা যায়? না, সুখ হয়ত সরাসরি কেনা সম্ভব নয়। তবে, পছন্দের জিনিস কেনার মধ্যদিয়ে সুখি হওয়া সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, সবসময় অর্থকষ্টে বাস করেন, এমন মানুষ কিছু টাকা পেলে বেশ সুখি হয়ে ওঠেন। আয় বাড়লে মানুষ সুখি হয়—তবে তা একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্তই। অনেক টাকার মালিক কিংবা দু’হাতে টাকা উড়ায় এরকম মানুষ সাধারণত সুখি হয় না।

৮. মেডিটেশন
গবেষণায় দেখা গেছে মেডিটেশন করলে সুখে থাকার প্রবণতা বাড়ে। ধ্যান বা মেডিটেশন, যোগব্যায়াম—এসবের চর্চা করলে মন এবং শরীর দুটোরই উপকার হয়। যেমন, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তারা তুলনামূলক কম অসুস্থ হন। তাছাড়া, তারা স্ট্রেসজনিত কারণে সহজে রেগে যান না।

৯. পজিটিভ সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা
পজিটিভ সাইকোলজি—সাইকোলজির একটি শাখা। মানুষ কিসে সুখি হয়—এ নিয়ে পজিটিভ সাইকোলজির বিস্তর গবেষণা কাজ রয়েছে। সাইকোলজি বেশিরভাগ সময় নেগেটিভ ইমোশন ও মানসিক সমস্যা নিয়েই বেশি আলোচনা করে। পজিটিভ সাইকোলজির কাজ ঠিক উল্টো। পজিটিভ সাইকোলজি আসলেই বিজ্ঞান কিনা এ নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও, পজিটিভ সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করলে ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন বই পড়লে মানুষ বেশ পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবনের দিকে তাকাতে পারে।

১০. অসুখি হন
শুনতে আশ্চর্য শোনাতে পারে। কিন্তু সুখি হওয়ার প্রথম শর্ত এটাই—অসুখি হওয়া! তাছাড়া সবসময় সুখের মধ্যে থাকলে সুখ অনুভব করা যায় না। জীবনের অসুখি সময়গুলো কাটিয়ে ওঠার পরই মানুষ ছোট ছোট বিষয়ের মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে শেখে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
এফএম/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।