সৃষ্টিশীলতা আসে দেবতার কাছ থেকে। এমনটাই বিশ্বাস করত প্রাচীন গ্রিসের লোকেরা।
সাইকোলজিস্ট জে ফিলিপ রাশটন পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, সৃষ্টিশীলতার সাথে বুদ্ধি ও বিভিন্ন মুড ডিজঅর্ডারের সম্পর্ক আছে। সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ইউনিপোলার ডিপ্রেশনের শিকার ৩ লাখ লোক আর তাদের রিলেটিভের ওপর পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে যাদের সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার আছে, তাদের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি বেশি। তাদের ভাইবোনদের মধ্যেও ক্রিয়েটিভ কাজ করার ঝোঁক বেশি। তবে যারা ইউনিপোলার ডিপ্রেশনের শিকার, তাদের মধ্যে এরকম কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায় নি।
তার মানে কি ক্রিয়েটিভিটি আর সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক রোগের মধ্যে সত্যি সত্যি কোনো সম্পর্ক আছে? বিভিন্ন সাইকোলজিস্ট পরিচালিত অনেকগুলো গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল এরকমটাই সমর্থন করে। তার মানে নানা রকম মানসিক রোগের সাথে ক্রিয়েটিভ কাজ কর্মের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারের সাথে এই সম্পর্ক আরো নিবিড়। মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং কার্যকলাপের পেছনে দায়ী বিভিন্ন জিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারের জন্যে নির্দিষ্ট কিছু জিন দায়ী। এই ধরনের জিনের সংখ্যা যে মানুষের মধ্যে যত বেশি, তার এই দুই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। তবে অনেক সময় শরীরে ‘রিস্ক জিন’-এর উপস্থিতি থাকার পরেও অনেক মানুষের মধ্যেই কোনো রকম মানসিক অসুস্থতা দেখা যায় না। কিন্তু এই মানুষটিই যদি জড়িত থাকেন বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজে, তাহলে তার মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া বা ম্যানিক ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ মানুষটির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।
বিভিন্ন জিন যেগুলো সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার-এর জন্যে দায়ী, সেই জিনগুলোই মানুষের ক্রিয়েটিভিটির উৎস। এমনটাই ইঙ্গিত দেয় এই গবেষণার ফলাফল। ক্রিয়েটিভ কাজের প্রতি ঝোঁক বাড়তে থাকলে, সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার-এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে পারে। তবে এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে, সিজোফ্রেনিয়া কিংবা বাইপোলার ডিজঅর্ডার ক্রিয়েটিভ মানুষের জন্যে উপকারী। কাজের প্রয়োজনেই ক্রিয়েটিভ মানুষদের চিন্তা করতে হয় বাক্সের বাইরে। সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনার চেয়ে তাদের চিন্তা ভাবনার ধরণ অনেক অন্য রকম হয়। তারা অনেক বেশি অনুভূতিপ্রবণ বা সেনসিটিভ হয়ে থাকেন। বাস্তবতা আর কল্পনার সূক্ষ্ম ফারাকটুকু অনেকসময়ই ধরতে পারেন না তারা। তাদের নিজেদের বাস্তবতা বাস্তবের চেয়ে অনেক ভিন্ন হলেও, আশেপাশের বাস্তবতা থাকে আগের মতোই। কোনটা বাস্তব আর কোনটা মনগড়া—এই টানাপোড়েনের স্ট্রেস থেকেই মানসিক রোগে ভোগার সম্ভাবনা বাড়িয়ে চলেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এফএম/টিকে