ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

জেসন ফার্মার ৫০ টাকার অ্যানেসথেসিয়া ৭০০ টাকা!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
জেসন ফার্মার ৫০ টাকার অ্যানেসথেসিয়া ৭০০ টাকা!

ঢাকা: অস্ত্রোপচারের জন্যে প্রয়োজনীয় লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার চরম সংকট বাজারে। আর যদিও পাওয়া যাচ্ছে, ৫০ টাকার একটি ফাইল বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত।

তবে ওষুধ অধিদপ্তর ও কোম্পানি বলছে, বাজারে পণ্যটির সরবরাহ চলছে স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসের একচেটিয়া ব্যবসাই বাজারে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া সংকটের মূল কারণ।

ছোটখাট অস্ত্রোপচার, বিশেষ করে দন্ত চিকিৎসার জন্য অত্যাবশ্যকীয় এ অ্যানেসথেসিয়া। রোগীর শরীরের নির্দিষ্ট অংশ সাড়হীন করতে কাজ করে এটি।
সূত্র জানান, লোকাল অ্যানেসথেসিয়া হিসেবে লিডোকেইনের এ অ্যানেসথেসিয়া বাজারজাত করে মূলত জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস। জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসের জেসোকেইন-এ নামের কেমিক্যালটি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৭শ টাকায়।

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সহ-প্রচার ও জনসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জ্যোতির্ময় দাস বাংলানিউজকে বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার সংকট। জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি এটি তৈরি করে না। এর ফলে মনোপলি তৈরি হয়েছে। মাঝে কিছুদিন গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস এটি সরবরাহ করলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, দন্ত চিকিৎসায় লোকাল অ্যানেসথেসিয়া অপরিহার্য। বাজারে আরও কিছু অ্যানেসথেসিয়া থাকলেও সেগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই লিডোকেইনের ওপরেই আমাদের নির্ভর করতে হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে বিএসএমএমইউর ফটক ঘেঁষা ফার্মেসি নিশাত, ইত্যাদি ও শাহাবাগ ফার্মেসিতে খোঁজ করেও জেসোকেইন-এ পাওয়া যায়নি। নিশাত ফার্মেসির বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ টাকার জিনিস ৫শ টাকায় বিক্রি করতে হয়। তাই রাখি না। তবে আজিজ সুপার মার্কেটের ফার্মেসিগুলোতে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এ অ্যানেসথেসিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যতদূর জানি এখন আর প্রোডাক্টটির সংকট থাকার কথা নয়। এখন যদি কোম্পানি কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে, সেটা ভিন্ন কথা। তবে মাঝখানে কয়েক মাস জোসেকেইনের উৎপাদন বন্ধ ছিল।

তিন মাস এ অ্যানেসথেসিয়ার কাঁচামালের সরবরাহ ছিলো না বলে জানিয়েছেন জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপণন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মমিনুল হাসান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এপ্রিল, মে, জুনে কেমিক্যালটির সংকট ছিল। তবে জুলাই থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। বাইরে বেশি দাম নিলেও আমাদের ধানমন্ডি ৬ নম্বরের ডিপো থেকে সঠিক মূল্যেই জেসোকেইন কেনা যাবে।

তাহলে বাজারে দাম বেশি কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝের কয়েক মাস বেশি দামে কিনে মানুষের অভ্যাস হয়ে গেছে। এখনো তাই বিক্রেতারা হয়তো বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জেসোকেইন রয়েছে।

শুধু চিকিৎসক নন, রোগীরাও রয়েছেন সমস্যায়। শহীদ নামে একজন দন্ত চিকিৎসা নেওয়া রোগী বলেন, অস্ত্রোপচারের জন্য বেসরকারি ক্লিনিক থেকে আমাকে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া কিনতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি পুরো মগবাজার ঘুরে কোনো ওষুধের দোকানে জোসোকেইন পাইনি।

জ্যোতির্ময় বলেন, বাজারে অ্যানেসথেসিয়ার এ ঘাটতি নিয়ে গত বুধবার জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসকে আমরা জানিয়েছি। তারা বলছে সমস্যা নেই। তাহলে আমরা পাচ্ছি না কেন! এটা বোধগম্য নয়।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ও বিএমএ’র সাবেক সভাপতি রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ওষুধ প্রশাসনের উচিত যে কোনো ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স দেওয়ার আগে শর্ত জুড়ে দেওয়া। যেন কেউ চাইলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
এমএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।