ঢাকা: যেসব কিশোর-কিশোরী ১৫ বছর বয়সের মধ্যে ভীষণভাবে গথ সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাদের বিষণ্নতা রোগ হওয়ার ঝুঁকি তিনগুণ বেশি থাকে বলে দাবি করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরও দাবি করেন, নিজের শরীরের ক্ষতি করার কারণে ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি, প্রায় পাঁচগুণ।
সম্প্রতি মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের দ্য ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড গবেষক ড. লুসি বোস।
তিনি বলেন, গথই বিষণ্নতার একমাত্র কারণ এটা আমরা বলছি না। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যদের তুলনায় গথ সংস্কৃতির ধারক কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক বেশি বিষণ্নতায় ভোগে এবং নিজের শরীরের ক্ষতি করে।
অতীতের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সমসাময়িক গথ সংস্কৃতির ধারক কিশোর-কিশোরীরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের শরীরে ক্ষতি করে। অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক বা বন্ধুদের প্রভাবেও তারা এমন কাজ করে থাকে।
গবেষণায় অভিভাবক এবং শিশুদের উপর করা দ্য ইউকে অ্যাভন লঙ্গিচুডিনাল-এর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১৫ বছরের মধ্যে যেসব কিশোর-কিশোরী গথ উপ-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে নিজের শরীরের ক্ষতি করে তাদের ক্ষেত্রে যৌবনের শুরুতে বিষণ্নতা রোগ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।
প্রায় ৩ হাজার ৬শ ৯৪ জন কিশোর-কিশোরীদের ওই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী এদের প্রত্যেকের ভেতরেই বিষণ্নতার লক্ষণ পাওয়া যায়।
প্রাথমিকভাবে গবেষকরা মনে করছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী গথ সংস্কৃতিতে ঝুঁকে নিজেদের শরীরের ক্ষতি করছে, ভবিষ্যতে তারা বিষণ্নতায় ভুগবে। তবে
এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ এবং ব্যক্তি নিজেও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ব্যক্তির মানসিক অবস্থা, আচরণ, মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
এটি একটি পর্যবেক্ষণীয় গবেষণা হওয়ায় চূড়ান্ত করে কোনো কারণ ও প্রভাব ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, যোগ করেন গবেষকরা।
তাদের মতে, এ গবেষণা গথ সংস্কৃতির যারা বিষণ্নতায় ভুগছেন, তাদের সহায়তা করতে সূত্র হিসেবে কাজ করবে।
গবেষণা সহযোগী যুক্তরাজ্যের দ্য ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের গবেষক ড. রেবেকা পেয়ারসন বলেন, যেসব কিশোর-কিশোরীরা বিষণ্ন বা নিজেদের ক্ষতি করার প্রবণতা রয়েছে তারা গথ সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন।
ভিন্নভাবেও বলা যেতে পারে, যেসব কিশোর-কিশোরী গথ সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট তাদের আচরণে বিচ্ছিন্ন ও আঁতলামিভাব বেশি প্রকাশ পায়।
ইংরেজি মুভিতে মাঝে মাঝেই আমরা দেখি কেউ কেউ চুল কালো করে, কালো নেলপলিশ আর কালো লিপ্সটিক দিয়েছে। তাঁর পরনের পোশাকটিও পুরো কালো।
ভ্যাম্পায়ার ভেবে ভুল করবেন না যেন, এরা বেশিরভাগ গথ কালচারের অনুসারী। উঠতি বয়েসি টিনেজারদের ভেতর এটা বেশি দেখা যায়।
গথ সংস্কৃতি
হিপ্পির মতন গথও একটা সাবকালচার। কালো, আঁধার, শীতল- এই তিনটা শব্দ বোধকরি এদের বর্ণনার জন্যে সবচেয়ে নিখুঁত।
গথ আসলে আমরা যাকে বলতাম ‘পাঙ্ক’ বা ‘রক-বয়েজ’ তার বর্তমান রূপ। আশির দশকে ইংল্যান্ডেই এর সূচনা। রক গান, ডেথ রক, পোস্ট পাঙ্ক, হেভি মেটাল ইত্যাদি গানের কট্টর ফ্যানরা সাধারণত এ কালচার অনুসরণ করতে পছন্দ করেন।
মাঝে মাঝে কিছু এক্সট্রিম লেভেলে গথরা নিজেদের ভ্যামাপায়ার দাবি করে থাকেন। বেশিরভাগ সময়ই মজা করার জন্যে অবশ্য।
হাতে, কানে, পাঞ্চ করা থাকে, কাঁটা লাগানো, ট্যাটু করা, গলায় কাঁটাওয়ালা ব্রেসলেট, গায়ে কালো জ্যাকেট এদের সঙ্গী। আমেরিকা বা ব্রিটেনে আবার উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা অনেকেই প্রথমে গথ থাকে, আবার পরে বদলে যায়। তাই এখনো এটা অতো জনপ্রিয় নয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
এটি/এএ