ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

স্ট্রেস কী, কেন, কোথা থেকে এলো-৩

ডা. সানজিদা শাহরিয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
স্ট্রেস কী, কেন, কোথা থেকে এলো-৩

আগের পর্বে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স নিয়ে কথা শুরু হয়েছিল। চলতি পর্বে থাকছে বিস্তারিত।



ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স
কী কী জিনিস বা ঘটনা আপনার মধ্যে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স করে? এটি বাস্তবের কোনো ঘটনা হতে পারে যেমন- রাস্তার মধ্যে কোনো পাগলা ষাঁড় আপনাকে তাড়া করছে অথবা বসের কাছে আগামীকাল ছুটি চাইতে গেলে কী তুলকালাম হবে, সেটি ভেবেই আপনি অস্থির হয়ে গেছেন।

বাস্তব ঘটনা    
▪ কাছে পিঠে বোমা ফাটার শব্দ বা বন্দুকের বা ককটেলের আওয়াজ।
▪ বর, বউ বা প্রেমিক, প্রেমিকার সঙ্গে ফাটাফাটি ঝগড়া বা ছাড়াছাড়ি।
▪ অফিসে সবার ইনক্রিমেন্ট হয়েছে, আপনারটি হয়নি।

কল্পনা
▪ এক্সক্লুসিভ খবরটি নিজের দোষে মিস করলেন, এখন সম্পাদককে কী বলবেন!
▪কী করে বর, বউ বা প্রেমিক, প্রেমিকাকে আবার আপনার জীবনে ফেরত আনবেন।
▪কী বলে বেতন বাড়াবেন।
 
বাস্তবে বা কল্পনায় যাই কারণ থাকুক আপনি স্ট্রেস হলেন। আপনার শরীর এ মানসিক স্ট্রেসজনিত শারীরিক প্রতিক্রিয়া ঘটাবার জন্য প্রস্তুতি নেবে। এরপর ধাপে ধাপে নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো ঘটতে থাকবে।

যেকোনো কারণে স্ট্রেস (বাস্তবে ঘটেছে বা কল্পনায় ভবিষ্যতে ঘটবার আশঙ্কা করছেন)।

দেহ প্রতিক্রিয়া দেখাবার জন্য প্রস্তুতি নেবে।

নিউরনে অনুরনন (স্নায়ু কোষে উত্তেজনা)

রক্তে হরমোন নিঃসরণ

রক্তচাপ বাড়বে (অ্যাড্রেনালিন, নর অ্যাড্রেনালিন, কর্টিসলের প্রভাব)

হৃদস্পন্দন বাড়বে (পালস বেড়ে যাবে, বুক ধকধক করবে)
               
ঘাম হবে

স্ট্রেসের দৈহিক প্রতিক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় রক্তে চর্বি ও চিনির মাত্রা বেড়ে যাবে। এ বাড়তি চিনি ও চর্বি আপনার পরিপাক তন্ত্র থেকে সংগৃহীত হয়ে হাত-পায়ের পেশিতে পৌঁছে যাবে যা আপনার দেহকে মারামারি করতে (ফাইট) বা দৌড়ে পালাতে (ফ্লাইট) সহায়তা করবে।

আপনি যখন ভারী পরিশ্রমের কাজ করেন তখন আপনার দেহ ঘামে, পালস বাড়ে, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয়। পরবর্তীতে যখন বিশ্রাম নেন আবার দেহ প্রশান্তিকর অবস্থায় ফিরে আসে। স্ট্রেসের ফলে সৃষ্ট কেমিকেলগুলো দেহে মেটাবলাইজ হয়ে যায়।

কিন্তু সমস্যা হলো, আপনি কোনো পরিশ্রম করলেন না, শুধু আপনার স্ট্রেস হলেও দেহ একই প্রতিক্রিয়া দেখায়। অসুবিধা শুরু হয় তখনই যখন স্ট্রেসের প্রাথমিক ধাক্কাটা খুবই ট্রমাটিক বা ভয়াবহ হয় মনের জন্য। কারণ, যত ভয়াবহভাবে মনের ওপর চাপ পড়বে ঠিক তত ভয়াবহভাবেই শারীরিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। এখানেই কিন্তু শেষ নয়। এ ঘটনা যদি বারবার ঘটে অর্থাৎ আপনি তা হলে স্ট্রেসের ক্রনিক ভিকটিম হয়ে গেছেন।
 
যদি আপনার উপযুক্ত ব্যায়াম ও রিলাক্সেশনের মাধ্যমে স্ট্রেস রিলিজ না হয় তবে দেহে এসব ক্ষতিকারক কেমিকেল জমতে থাকবে। ফলশ্রুতিতে আপনার স্মৃতিশক্তি আক্রান্ত হবে, ভুলে যাবেন প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য, দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune system) দুর্বল হয়ে পড়বে। সেইসঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা স্ট্রেস আক্রান্ত ব্যক্তির কমে যাবে।

ট্রমা টিপস (স্ট্রেস ও স্মৃতি শক্তি) 
স্ট্রেসের জন্য রক্তে কর্টিসল নামে হরমোন বাড়ে। রক্তে কর্টিসল বাড়লে নিউরো ট্রান্সমিটারের কাজে বিঘ্ন ঘটে। নিউরো ট্রান্সমিটার হলো সেইসব কেমিকেল, যা স্নায়ুকোষে তথ্য আদান-প্রদানের কাণ্ডারী।

গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে বেশি মাত্রায় কর্টিসলের উপস্থিতি আমাদের চিন্তা ও বিবেচনা শক্তিকে স্তিমিত করে। শুধু তাই নয়, রক্তে উচ্চমাত্রার কর্টিসল আমাদের স্মৃতি থেকে কিছু মনে করার কাজকেও বাধাগ্রস্ত করে।

এদিকে, গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো রক্তে কর্টিসল লেভেল বাড়ার কারণে গ্লুকোজ মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে পেশিতে চলে যায়। তাই চিন্তা-ভাবনার আগেই হাত চলে। শুধু তাই নয়, মস্তিষ্ক থেকে গ্লুকোজ বের হয়ে পেশিতে চলে গেলে আমাদের নতুন স্মৃতি তৈরির কাজও ব্যাহত হয়।

খেয়াল করে দেখবেন, খুব রেগে যখন মারামারি বা ঝগড়া করেন তখনকার অনেক স্মৃতিই কিন্তু আপনার মনে থাকে না। রাগের মাথায় মানুষ কিনা বলে!

মুল কথা 
দেহের ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স উদ্দীপ্ত হয় যখন কোনো বাস্তব বা কাল্পনিক বিপদের আশঙ্কা আমাদের শারীরিক বা মানসিক নিরাপত্তাকে বিনষ্ট করে। আমাদের দেহ বাস্তব বনাম কাল্পনিক বিপদের আশঙ্কার পার্থক্য বুঝতে পারে না। তাই সত্যিকারের বিপদজনক পরিস্থিতি অথবা মানসিক চাপের জন্য যদি কেউ সম্ভাব্য বিপদজনক পরিস্থিতি কল্পনা করে, উভয় ক্ষেত্রে দেহ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়।

আমাদের দেহে স্ট্রেস রিঅ্যাকশন হলে হার্টবিট বাড়ে, ঘাম হয়, পেশি সংকুচিত হয়, রক্তে কর্টিসল বাড়ে। কিন্তু রক্তে কখনই সুগার বা চিনি কমে না কারণ, অ্যাড্রেনালিন নামে কেমিকেল রক্তে দ্রুত চিনির ঘনত্ব বাড়ায়, যা আমাদের পেশিতে প্রবাহিত হয়ে আমাদের দ্রুত লড়তে বা পালাতে সাহায্য করে।

একবার আশঙ্কিত বিপদ বা স্ট্রেস মোকাবেলা করবার পর আমাদের দেহে স্ট্রেস হরমোন ক্রমাগত জমা হতে থাকে, যদি সেটিকে আমরা ব্যায়াম বা রিলাক্সেশনের মাধ্যমে দূর না করি। তাই স্ট্রেসের পর ব্যায়াম বা ডিপ রিলাক্সেশন অবশ্যকরণীয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এসএস/

** স্ট্রেস কী, কেন, কোথা থেকে এলো-২
** স্ট্রেস কী, কেন, কোথা থেকে এলো-১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।