ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

আলোয় আলোয় বেড়ে উঠুক আমাদের আগামী

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৫
আলোয় আলোয় বেড়ে উঠুক আমাদের আগামী

ঢাকা: আমাদের দেহের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি অংশ আমাদের চোখ। আর প্রায়ই আমাদের চোখ নিয়ে পড়তে হয় নানা রকম সমস্যায়।

তাই আমাদের চোখের প্রতি দিতে হয় অন্যকরকম যত্ন এবং এই যত্ন সবসময় নেওয়া উচিৎ। চোখের দৃষ্টি নিয়ে সমস্যা প্রধানত ৪ ধরনের, যেমন: ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি, দূর দৃষ্টি ত্রুটি, বার্ধক্য দৃষ্টি ত্রুটি, বিষম দৃষ্টি ত্রুটি।  

চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ যদি ২ মিটারের বেশি দূরের জিনিস অস্পষ্ট দেখে তাহলে তিনি মাইয়োপিয়া বা ক্ষীন দৃষ্টি ত্রুটিতে ভুগছেন।

অনেক বাবা মাকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, স্কুলের সবচাইতে পড়ুয়া ছেলেটিই চশমা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তারা হয়তো বা জানেন না তাদের এই ধারণাটি ভুল। এশিয়ার অনেক শহরে স্কুল পাস করা অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯০% চোখের সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে মাইয়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টিই বেশি। বিজ্ঞানীরা এক সমীক্ষার ভিত্তিতে এই তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করেন।

গবেষকদের মতে, চোখের এ সমস্যার অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে স্কুলে শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম ও বেশির ভাগ সময় বাইরের আলো থেকে দূরে থাকা। গবেষকদের মতে প্রতি ৫জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী এই সমস্যায় ভুগছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দৃষ্টিশক্তিও হারাচ্ছে চিরতরে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়ান মর্গান বলেন, একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এ সমস্যায় ভুগতো। যা কিনা বর্তমানে বেড়েই চলেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই সমস্যাটির পেছনে কয়েকটি বিষয় জড়িত। পড়াশোনার বিষয়ে কঠোর পরিশ্রম এবং সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকা। অধ্যাপক মর্গান যুক্তি দেখিয়ে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক শিশু ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্কুলে পড়াশোনা এবং হোম ওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ঘরের কম আলোতে দৃষ্টি সীমার খুব কাছাকাছি বই রেখে পড়ালেখা এবং বাইরের আলোতে খেলাধুলা না করা তাদের চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ঘরের আলোর পাশাপাশি ভারসাম্যের জন্য ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আলোর সংস্পর্শ তাদের চোখকে সুস্থ রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীদের মতে ‘ডোপামাইন’ নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ অক্ষিগোলককে বাড়তে দেয় না। তাই ডোপামাইনের পরিমাণ যত বেশি হবে, দৃষ্টিক্ষীণতাও তত কম হবে। আর তাই দিনের আলোর সংস্পর্শ যত বেশি পাওয়া যাবে, চোখে ডোপামাইনের মাত্রাও তত বেশি হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জেনেটিক বা বংশীয় কারণে মাইয়োপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি হতে পারে। বাবা মা এদের যদি কারো ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে ৪০% সম্ভাবনা থাকে সন্তানেরও ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি হবার। কিন্তু বাবা মায়ের দৃষ্টি শক্তি যদি ভালো হয় তাহলে এই ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি হবার সম্ভাবনা ১০% নিচে।
 
আপনার সন্তানদের এই ক্ষীণ দৃষ্টি ত্রুটি সমস্যা থেকে রক্ষা করতে চাইলে আপনাদের নিজের থেকে নিতে হবে কিছু পদক্ষেপ। বাইরে খেলাধুলা করা ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিনোদন। এতে ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ ঘটার পাশাপাশি এর সৌর রশ্মি ছেলেমেয়েদের মাইয়োপিয়া রোধে বেশ কার্যকর। তবে এক্ষেত্রে শিশুদের জন্য দৈনিক ১ থেকে দেড় ঘণ্টা করে সপ্তাহে কমপক্ষে ১০-১৪ ঘণ্টা বাইরে খেলাধুলায় সময় দেওয়া উচিৎ।

এছাড়াও কিছু পরামর্শের মধ্যে রয়েছে:
ক) টিভি এবং কম্পিউটারে থাকার সময় এক নাগাড়ে তাকিয়ে না থেকে প্রতি ৩০ মিনিটে একবার করে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেওয়া ভালো।
খ) বই কিংবা অন্য কোনো প্রিন্টেড কিছু পড়তে হলে ন্যূনতম দূরত্বে রেখে পড়া ভালো।

এছাড়াও বাসার কম আলোর লাইট পরিবর্তন করে ফ্লিকারবিহীন লাইট বা এলইডি লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।

সূত্র: বিবিসি অনলাইন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৫
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।