ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ব্যথা-দুশ্চিন্তা নিরাময়ে রিফ্লেক্সোলজি ম্যাসাজ

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
ব্যথা-দুশ্চিন্তা নিরাময়ে রিফ্লেক্সোলজি ম্যাসাজ

ঢাকা: রোগ নিরাময়ে জুড়ি নেই ম্যাসাজের। দাঁত, কিডনি, হৃদপিণ্ডের সমস্যা, দুশ্চিন্তা দূর করা প্রভৃতি রোগেও দারুণ কার্যকরী ম্যাসাজ।

রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজ রয়েছে। এর মধ্যে রিফ্লেক্সোলজি ম্যাসাজ আবার বিশেষ জনপ্রিয়।


রিফ্লেক্সোলজি ম্যাসাজকে সহজ ভাষায় বলা য়ায় ওষুধের বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা। শুধু পায়ের নির্দিষ্ট স্থানে চাপ প্রয়োগ বা ম্যাসাজ করে রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতিবিশেষ।

এবার আসা যাক বিস্তারিত বর্ণনায়।

আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গেই মাথা, হাত ও পায়ের সংযোগ রয়েছে। যদি পায়ের রিফ্লেক্সোলজির কথাই বলি তাহলে পায়ের বিভিন্ন পয়েন্ট যেমন আঙুল, ফুট বল, গোড়ালি ও পায়ের পাতার বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মস্তিষ্ক, চোখ, কান, হৃৎপিণ্ড, লিভার, কিডনি ও অন্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংযোগ রয়েছে। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বিশেষ চাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে ওই অংশের যাবতীয় অবসাদ দূর হয়ে যায়, বাড়ে রক্ত সঞ্চালন।


প্রাচীন চীন ও মিশরের চিকিৎসা পদ্ধতিতে রিফ্লেক্সোলজির ব্যাপক ব্যবহার ছিলো। পরবর্তীতে ১৮০০ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এই পদ্ধতির ম্যাসাজ জনপ্রিয়তা পায়।

আগেই বলা হয়েছে, পায়ের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংযোগ রয়েছে। ডান ও বাম পা মিলিয়ে রয়েছে মোট ৫৮টি পয়েন্ট, যার সঙ্গে আমাদের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব জড়িত। এসব পয়েন্টে চাপ প্রয়োগের পর পায়ের অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি হয়। যেমন, কিছু স্থান বালির মতো, কিছু গ্রানাইট আবার অনেকগুলো অংশ নরম অনুভূত হয়। যথাযথ চাপ প্রয়োগের ফলে ওইসব এলাকার টিস্যু ঘিরে রাখা টক্সিন সহজেই বেরিয়ে আসে, যা শরীরকে রাখে বিষমুক্ত।

চলুন তবে জেনে নিই পায়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:


আঙুল
হাতের মতো পায়েও রয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কনিষ্ঠা। ডান ও বাম পায়ের পাঁচটি আঙুলের সামনের বা মাথার অংশের সঙ্গে রয়েছে মস্তিষ্কের সংযোগ। যেখানে দুটো পায়েরই তর্জনী ও মধ্যমা নিয়ন্ত্রণ করছে চোখ ও অনামিকা। কনিষ্ঠা নিয়ন্ত্রণ করছে কান।

ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির বাঁ পাশে ও বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির ডানপাশের  ওপরের অংশের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে নাকের এবং নিচের অংশে রয়েছে মেরুদণ্ডের সংযোগ। আবার একই আঙুলের ডান পায়ের ডান পাশ ও বাঁ পায়ের বাম পাশের ওপরের অংশে রয়েছে করোটিসংক্রান্ত স্নায়ূর বৃহত্তম পাঁচ জোড়া, মাথার সামনের অংশ, চোখ, চোয়াল ও মুখের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হাড় (ম্যান্ডিবুলার)।

আবার ঠিক এর নিচের অংশে রয়েছে লঘু মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্কের ডাটা। বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙুলের নখের নিচের অংশে রয়েছে পিটুইটারি গ্রন্থি। আবার দু’পায়ের বৃদ্ধা আঙুলের জয়েন্টের সঙ্গে রয়েছে ঘাড়ের সংযোগ। তর্জর্নী, মধ্যমা ও অনামিকার পয়েন্টের সঙ্গে রয়েছে কাঁধ ও বাহুর সংযোগ।


পায়ের পাতা
পায়ের পাতার কনিষ্ঠা বরাবর ফুট বলের ওপরে রয়েছে মাথা, কাঁধ ও ঘাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত একজোড়া ত্রিকোণ পেশি। পায়ের পাতার মাঝ বরাবর রয়েছে ফুসফুস ও শ্বাসনালীর শিরা-উপশিরা।

এবার আসি থাইরয়েড প্রসঙ্গে। বৃদ্ধা ও তর্জনীর সংযোগস্থল থেকে শুরু করে বৃদ্ধার ফুট বলের একটু নিচ পর্যন্ত বাঁকানো অংশে রয়েছে থাইরয়েড।


পাতার ওপরের অংশ
ডান পায়ের পাতার ওপরের শক্ত অংশের শুরুতে রয়েছে পাকস্থলি, যেখানে বাঁ পায়ের ক্ষেত্রে রয়েছে লিভার। পায়ের ওয়েভি অংশে রয়েছে গ্রহনী (পাকস্থলির ঠিক নীচে অবস্থিত ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশ)। পায়ের ওপরের শক্ত হাড়ের সঙ্গে রয়েছে কিডনি ও পায়ের বাঁ গোড়ালিতে রয়েছে ব্লাডার ।


পায়ের তালু
পায়ের হিলের শুরুতে রয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্র ও শেষাংশে সংযুক্ত নিতম্ব।
সমগ্র পায়ের বৃদ্ধা থেকে পায়ের পাতার শক্ত হাড় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চোঁয়াল, দাঁত, গলা, ঘাড়, টনসিল, থাইরয়েড, মধ্যকান প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের।

আর উল্লেখযোগ্য পয়েন্টগুলো হলো- ডান পায়ের পেছনের অংশে প্রজনন অঙ্গ, নিতম্ব, গর্ভাশয় প্রভৃতি, যেখানে বাঁ পায়ের ক্ষেত্রে প্রজনন অঙ্গ, নিতম্ব ও ডিম্বাশয়।

এসব স্থানে সঠিক পরিমাণে চাপ প্রয়োগের ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে। এতে বিশুদ্ধ রক্ত, অক্সিজেন, পুষ্টি ও এন্টিবায়োটিক শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবাহিত হয়। যা দুশ্চিন্তা, ব্যথা, দাগ, ইনসমোনিয়া দূর করে শরীর ও মনে শান্তি ফিরিয়ে আনে।  

রিফ্লেক্সোলজি ম্যাসাজের আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:

পায়ে ম্যাস্যাজের আগে হালকা গরম পানিতে পা পরিষ্কার নিতে হবে। ম্যাসাজের ত্রিশ মিনিট আগে অতিরিক্ত পানি পান করা বা ভারী খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে হজমে সমস্যা হতে পারে। এমনকি গোসলের পরপরই ফুট ম্যাসাজ করাও উচিত নয়।

তবে ম্যাসাজ বিশেষজ্ঞ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ প্রয়োগের পদ্ধতি জেনে এ চিকিৎসায় অগ্রসর হওয়া ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।