ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

অ্যানথ্রোপোফোবিয়া: কাটিয়ে উঠুন ভয়

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫
অ্যানথ্রোপোফোবিয়া: কাটিয়ে উঠুন ভয়

ঢাকা: চোদ্দ বছরের মেয়ে জিনি। সাধারণত এ বয়সের মেয়েরা উচ্ছল আর হাসিখুশি থাকে।

কিন্তু জিনির বেলায় ব্যাপারটা পুরোপুরি আলাদা। সে বেশিরভাগ সময় একা থাকে।

বাড়িতে আত্মীয়স্বজন বা কোনো মেহমান এলে ছুটে চলে যায় নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। মাঝে মাঝে মা অনেক ডাকাডাকি করলেও আত্মীয়দের সামনে আসতে চায় না। স্কুলেও তাই। বন্ধুরা সবাই মিলে হাসাহাসি আর খেলায় মেতে থাকে, কিন্তু জিনির ইচ্ছে করলেও কথা বলতে পারে না।

স্কুলে মিস পড়া জিজ্ঞেস করলে উত্তর জানা থাকা সত্বেও মুখ ফুটে বলতে পারে না সে। কেমন যেন ভয় লাগে। তার মনে হয়, কথা বলার সময় তার কণ্ঠস্বর সবার কাছে কেমন বাজে শোনাবে। উত্তর ঠিক হবে কী, হবে না!

সবসময়ই জিনির মনে হয়, ক্লাসে ঢোকার সময় সবাই বুঝি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে কটুক্তি বা সমালোচনা করছে। সারাক্ষণ তার ভেতরে একটা অস্বস্তি কাজ করে। মনোবিজ্ঞানে জিনির এ রোগটির নাম অ্যানথ্রোপোফোবিয়া।


সাধারণত অ্যানথ্রোপোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ভিড় দেখলে ভয় পায়। নিজেকে সবসময় তুচ্ছ মনে করে। অনেক সময় অনেক গুণের অধিকারী হওয়া সত্বেও কাজে হাত দিতে পারেন না তারা। কেমন একটা দ্বিধায় ভোগেন। সবসময় মনে হয়, সবাই বুঝি তাকেই দেখছে।

লক্ষণ

নিজের কাজ ও কথাকে যুক্তিহীন মনে হওয়া। সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। এক্ষেত্রে অনেকে বন্ধুদের সঙ্গে শপিংয়েও যেতে দ্বিধাবোধ করেন। কারণ তাদের মনে হয়, তাদের পছন্দ বা বাজেট নিয়ে বন্ধুরা কিছু ভাবতে পারে। সবার সামনে খেতে অস্বস্তি হয়। হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করে ও গলা শুকিয়ে আসে।



কারণ

অ্যানথ্রোপোফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই যদি কেউ ছোট পরিসরে বেড়ে ওঠেন তাহলে স্বাভাবিকভাবে এটা হতে পারে। এছাড়াও ছোটবেলা থেকে যদি কাউকে ভয় পেয়ে থাকেন বা কোনো দুর্ঘটনা দেখে থাকেন, তাহলেও অ্যানথ্রোপোফোবিয়া হতে পারে। অনেক সময় পরিবার থেকে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য যেমন, তুমি পারবে না, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না, তুমি ভয় পাও এসব কথাগুলোও একসময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও অতীতের কোনো বাজে অভিজ্ঞতার কারণেও ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।



সমাধান

অ্যানথ্রোপোফোবিয়া এক দিনে হয় না। নির্দিষ্ট কারণে অ্যানথ্রোপোফোবিয়া হলেও দীর্ঘদিনের জীবন যাপনের ফলেই তা আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। তাই হঠাৎ করেই সেরে ওঠা সম্ভব নয়। তবে এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই।
নিজেকে বলুন, পৃথিবীতে প্রত্যেকেই তার নিজের প্রয়োজনে এসেছে। আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। আপনার প্রয়োজন পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে থাকতে পারে। আর সেখানে যেতে আপনার কোনো বাধা নেই। নিজেকে বোঝান, পৃথিবী আপনার। জীবন একটাই। আর এ মূল্যবান জীবন পালিয়ে বেড়ানোর নয় বরং প্রাণভরে উপভোগ করার।



সবাই আচরণ ও বাহ্যিক গঠনের দিক থেকে আলাদা। তবে তাই বলে কেউ পিছিয়ে থাকবে তা কেন! ধীরে ধীরে জড়তা কাটান। আর তা শুরু হোক আজকেই। বন্ধুদের ফোন করুন। হয়তো প্রথমে অস্বস্তি লাগবে। কোনো পার্টি বা বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করুন। প্রশংসা করুন। বাড়ির সবার সঙ্গে গল্প করুন। একসময় সব সংশয় কেটে যাবে। ভালো থাকুন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।