ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

রাজধানীর ফার্মেসিতে অবৈধ ‘বেবিফুড’

আদনান রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৪
রাজধানীর ফার্মেসিতে অবৈধ ‘বেবিফুড’

ঢাকা: মাতৃদুগ্ধ, বিকল্প শিশু খাদ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকার ফার্মেসিগুলোতে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে বেবিফুড।

মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে বিএসটিআই অনুমোদনহীন এসব বেবিফুড খেয়ে শিশুদের স্বাস্থ্যহানির আশংকা করছেন পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা।



২০১৩ সালের প্রণয়নকৃত মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইনে ০-৫ বছরের পর্যন্ত সবাইকে শিশু (বেবি) এবং তাদের জন্য প্রস্তুতকৃত খাদ্যকে বেবিফুড বলা হয়েছে।

আইনটির ৪ এর (২-ঈ) ধারায়, কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র বা ঔষধ বিক্রয় কেন্দ্রে এসবের বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার কথাও উল্লেখ রয়েছে।

তবে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইনকে তোয়াক্কা না করে ফার্মেসিগুলোতে জুনিয়র হরলিক্স, বায়োমিল, সেরেল্যাক, ন্যান, ল্যাকটোজেন ও নিডো দুধের মতো বেবিফুড বিক্রি হচ্ছে। আর বেশিরভাগই সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করায় সেগুলোতে বিএসটিআইয়েরও কোন অনুমোদন নেই।

বিগত বছরগুলোতে ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন বাংলাদেশে ‘ভারতীয় বা বিদেশী ঔষধ বিক্রি না করা’ এবং ‘ফুড সাপ্লিমেন্টারি বিক্রি না করা’ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও এর কোন বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

রাজধানীর অভিজাত এলাকার ফার্মেসিগুলোতে এসব বেবিফুড বিক্রির প্রবণতা ধরা পরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে। এদের মধ্যে রয়েছে কলাবাগানের সুপরিচিত লাজ ফার্মা এবং নিউ তাজরীন ফার্মেসি, বারিধারার অ্যাপোলো হাসপাতালের অধীনস্থ অ্যাপোলো ফার্মেসি, বনানীর প্রেসক্রিপশন এইড, ফার্মেসি প্লাস, সোনার বাংলা মেডিকেল ও কেয়ার ফার্মেসি, গুলশানের প্লাস ফার্মা, অ্যাপোলো ও তামান্না ফার্মেসি উল্লেখযোগ্য।

বেবিফুড নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনিস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা বাংলানিউজকে বলেন, কোন প্রাকৃতিক উপাদান ড্রাই করলে তার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। বেবিফুড মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে কাজ তো করছেই না উল্টো বাধাগ্রস্ত করছে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ।
২০১৩ সালের এই আইনটির পাশাপাশি ‘ঔষধ ব্যতীত অন্য পণ্য’ বিক্রি করে ১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যাক্টও লঙ্ঘন করছে ফার্মেসিগুলো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফার্মেসিগুলোকে শুধুমাত্র ঔষধ বিক্রির জন্য লাইসেন্স প্রদান করে ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন। দেশী ঔষধ বিক্রি ও ঔষধ ছাড়া অন্য কোন পণ্য বিক্রি করা যাবে না বলে উল্লেখ থাকে লাইসেন্সে। তবে অভিজাত এলাকার ফার্মেসিগুলো এসব শর্ত বার বারই ভঙ্গ করছে।

বছরের পর বছর থেকে অভিযান চললেও টনক নড়ছে না ফার্মেসি মালিকদের। বেবিফুড প্রস্তুতকারক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় অফারে এগুলো বিক্রিতে আকৃষ্ট হচ্ছেন তারা।

এসব বন্ধে ঠুনকো চেষ্টা চালিয়েই নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করলো ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে পত্রিকায় কয়েকবার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে, মামলা, জরিমানাও হয়েছে তবুও ফার্মেসিগুলো আমাদের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করে না। ”

পত্রিকাগুলোতে দু’দফায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও এসবের জন্য বিগত বছরগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ হাজার ৬শ’ চল্লিশটি মামলা, ড্রাগ কোর্টে ৪৬টি মামলা, ৮ কোটি টাকার নগদ জরিমানা ছাড়াও ৮০ কোটি (১০ মিলিয়ন ডলার) টাকার ঔষধ জব্দ করা হয়েছে। তবুও অতি মুনাফার লোভে এগুলো বিক্রিতে পিছপা হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।

মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন লঙ্ঘনে ৫ লাখ টাকা এবং ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও আইনটি প্রণয়নের পর এর বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত কোন নজরদারি কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাছাড়া অনেক ফার্মেসি ব্যবসায়ী জানেই না যে বেবি ফুড বিক্রি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইনটি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ‘প্রমোট বিএমএস ল’ বিডি’ নামে একটি অনলাইন সংগঠন। সংগঠনটি বাংলানিউজকে জানায়, “বিষয়টি শুধু অবৈধই নয়, এটা আইনের সরাসরি লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এসব ফার্মেসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার দিন দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাই এসব ফার্মেসির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা এবং ফার্মেসির মালিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

এছাড়াও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর চমকপ্রদ প্রচারণা এবং বিশেষ বিশেষ অফার থেকে ফার্মেসিগুলিকে বিরত রাখতে অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।