ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

দুঃখ নয়, আনন্দে বাঁচুন...

মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৫ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪
দুঃখ নয়, আনন্দে বাঁচুন...

আমরা সবাই অতীত স্ম‍ৃতি হাতড়ে বেড়াই। কখনো অতীতের এ স্মৃতি মনে করে আপনার ঠোঁটের কোণে আপনাআপনি হাসির সূক্ষ একটা রেখা ফুটে উঠবে, আপনার চোখগুলো জ্বলজ্বাল করে উঠবে।

আবার কখনো অতীতের কথা মনে করে আপনার মুখে পড়বে বিষাদের ছায়া, চোখ জলে ছলছল।

জীবনের অতীত অভিজ্ঞতাগুলো অনেক সময়ই আমাদের জীবনে ইতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলে না। অতীত অনেক সময়ই আমাদের জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গী পালটে ফেলতে পারে। নিজের সম্পর্কে চরম অবহেলা, দুঃস্বপ্ন, প্রতিদিনের বিরহকাতরতা কিংবা নিজের সম্পর্কে হীনমন্যতা কিংবা বিষণ্ণতা জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য সম্পর্কগুলোকেও বিষিয়ে তুলতে পারে। যা আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার পরিপন্থি, আদতে যার কোনো প্রয়োজনই হয়ত আমাদের জীবনে নেই।   

জীবনের অতীত দুঃখগুলোকে ঝেড়ে ফেলুন, দেখবেন আপানার জীবন হয়ে উঠবে আনন্দময়, স্বাধীন আর সম্ভাবনাময়। তবে সময় সব ঠিক করে দেবে এমন ভাবারও কোনো অবকাশ নেই, বরং নিজের চেষ্টায় নিজেকে গড়ে তুলুন।

আপনি তো অন্যদের মতো নন, আপনি আপনার নিজের মতোই। কাজেই আর এক সেকেন্ডের জন্যও অতীতকে মনে করে দুঃখ কাতরতা নয়, পেছনে তাকানো নয়, সময় ঘুরে দাঁড়ানোর।  

অতীত মনে করে চোখের জল ফেলা আর নিজেকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের চারপাশ ঘিরে থাকা এ বিষণ্নতাগুলো সত্যিই খুব ক্লান্তিকর। আনন্দে বাঁচুন। যা করতে ভালো লাগে, যা আপনার ক্ষতির কারণ হবে না তা করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন নিজেকে কেমন মুক্ত মনে হচ্ছে। আর এর মাধ্যমেই হয়ত আপনি আপনার জীবনের সমস্যাগুলো সমাধানের পথ খুঁজে পেয়ে যাবেন।

জীবনের অতীত কিসসাগুলো খতম করুন দেখবেন সত্যি সত্যি জীবনের দিক পরিবতর্ন হয়েছে আপনার। নিজেকে ঘ‍ুরে দেখার আর ফিরে পাবার সুযোগ পাবেন আপনি।

আপনি যদি আপনার অতীত জীবনের কষ্টগুলো বহন করেন, একটা সময় নিজেকে নিজেই এর শিকার বলে মনে হবে আপনার কাছে। সবসময় ভাবুন আপনার সঙ্গে ভালো কিছু একটা ঘটবে। আপনি যদি আপনার কষ্টের কথা মনে না করে ভিন্ন বা ইতিবাচক কিছু একটা ভাবেন তবে দেখবেন আপনি ভালো আছেন।    

কোনো কিছুর জন্যই তো জীবন থেমে থাকে না। আপনারও থেমে নেই। কেন শুধু শুধু একে আঁকড়ে ধরে আছেন আপনি। ভাবুন যা ঘটে গেছে তা ঘটে গেছে। তা ঘটার ছিলো বলেই ঘটেছে। যন্ত্রণা তো বাধ্যতামূলক নয়। সেখানে আপনি বরং আপনার শান্তি ও আনন্দকে সামনে নিয়ে আসুন। এর মধ্য থেকেই ভালো কিছু বের হয়ে আসবে যা আপনাকে সামনে পথ চলার, নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা দেবে।

অন্যদের সম্প্রর্কে অতিরিক্ত সচেতন হওয়ার দরকার নেই। কে কি ভাববে, বা ভাবলো তা খুব বেশি খেয়াল করার দরকার নেই। যতটুকু না ভাবলেই নয় ততটুকুই শুধু খেয়াল রাখুন। অন্যদের প্রতি আপনার প্রত্যাশা কী আর কী তারা করেনি, এটা ভাবার খুব কি দরকার! এতে কী এসে যায় আপনার? নিজের হৃদয় খুলে দেখুন এবং খুঁজে দেখুন যা ঘটেছে তা আপনার হৃদয়কে কতোটা নাড়া দিয়েছে।

ক্ষমার জন্য এক মুহ‍ূর্তও বিলম্ব নয়। বিশ্বাস করুন, ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই! কেননা এটা আপনাকে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি ফেলবে যে আপনার প্রতীক্ষা দীর্ঘায়িত হবে, তবে তা ক্ষমার জন্য নয়, আনন্দ আর সুখের জন্য।   

এর পরিবর্তে শুধু একটা জিনিস নির্ধারণ করুন যার মাধ্যমে আপনি শান্তি চান, যার মাধ্যমে আপনি শ‍ান্তি পেতে পারেন। ওই বিষয়টিকে আপনার জীবনের পথ প্রদর্শক হিসেবে নির্ধারণ করুন যা জীবনকে আরও উন্মুক্ত করে দেবে এবং আপনার কাছে জীবন আরও অর্থবহ হয়ে উঠবে।   

নিজের অভ্যন্তরীণ জগতের দিকে তাকান এবং জানুন সেখানে কিভাবে আপনি আপানর খারাপ মুহূর্ত এবং বেদনাদায়ক স্মৃতি পুষে রেখেছেন। কিভাবে এগুলো আপার ভেতরে ডালপালা ছড়াচ্ছে এবং আপার অগোচরে কিভাবে এটা প্রকাশিত হচ্ছে। তবে বলবো না এগুলো আপনি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন, এটুকু্ মনে রাখলে চলবে যে থাক না এগুলো নিজের মতো, শুধু আপনার এতে তেল-জল দেওয়ার দরকার নেই।

পথ চলতে চলতে আপনার যখন মনে হবে যে কোনো একটা স্মৃতি হাতড়ে আপনি এর সঙ্গে অনেকদূর যেতে পারছেন তখন মনে করবেন এটা আপনার জীবনের সোনালী স্মৃতি। এ ধরনের স্মৃতিগুলোকে পরিপুষ্ট করুন। দেখবেন একে শাণিত করলে আপনি এক ধরনের শান্তি ও স্বস্তি পাচ্ছেন। প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে আপনার মন। আর যদি অতীতকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তবে দেখবেন অতীতের স্মৃতি আপনার পিছু ছাড়ছে না। আপনি যেখানেই যাচ্ছেন কোনো না কোনো ভাবে তা আপনার সামনে এসেই হাজির হচ্ছে।  

কথায় আছে, দুঃখ ভাগ করলে কমে আর আনন্দ ভাগ করলে বাড়ে। এটা কি শুধুই কথার কথা! নিজেকে দিয়েই যাচাই করে দেখুন না!! যদি আপনি আপনার দুঃখগুলোকে একটা দীর্ঘসময় নিজের মধ্যে চাপিয়ে রাখেন তবে একটা সময় এটা আপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। আপনার নিজেকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গীটিই হয়ত পালটে যাবে। যা হয়ত আপনার জন্য নেতিবাচক হবে। একটা বিষয় মনে রাখবেন ভেঙে পড়া মানুষ শুধু আপনি একাই নন, আপনার চেয়ে অনেক বেশি কষ্টে আছে অন্য কেউ। পর্দার পেছনের দুঃখগুলো থেকে চোখ ফিরিয়ে সামনে চেয়ে দেখুন, সামনের পথ আর‍ও অনেক সুন্দর।

পেছনের স্ম‍ৃতি আকড়ে থাকলে দেখবেন তা আপনাকে শুধু পেছনেই নিয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে আপনি নিজেকে নিজে উন্মুক্ত করুন। দেখুন নিজেকে কেমন তাজা এবং সতেজ লাগছে!

আপনি যদি এ গল্পের চরিত্র না হন, তবে আপনি যা আছেন তাই থাকুন। কষ্ট পাবেন না, এখানেই থাকুন দেখবেন অতীতের দুঃখময় স্মৃতি থেকে আপনি কত দূরে...

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৩ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।