ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

ইতিহাস জুড়ে আছে নারী

ডা. এস এম আতিকুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
ইতিহাস জুড়ে আছে নারী

রূপা আর তামিম। দুজনে একই সঙ্গে পড়ত।

ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়েও আছে। দু’জনেই ভালো চাকরি করছে, সংসারেও স্বচ্ছলতা আছে। বিয়েতেও কোনো সমস্যা হয়নি। হাসি-খুশিতেই কাটছিলো ‍তাদের দিন।

কিন্তু একটা পর্যায়ে সব কিছুই কেমন যেন বেসুরো লাগে রূপার কাছে। সংসার-মেয়ে-চাকরি সব কিছুই যতটা পারছে ঠিক-ঠাক সামলাতে চেষ্টা করছে। বলা যায় সব্যসাচির মতো। তব‍ুও অফিস থেকে ফিরতে একট‍ু দেরি হলে শাশুড়ি মুখ ভার করে বসে থাকেন, একটু ঊনিশ থেকে বিশ হলে তামিমও চাকরি ছেড়ে দিতে বলে।

বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সব থেকেই মোটামুটি বিচ্ছিন্ন রূপা। আগের সেই আমিকে আর খুঁজে পায়না সে। সব কিছুই আছে তবুও যেনো কিছুই নেই। ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা।

নাম-চরিত্র কাল্পনিক হলেও  আমাদের দেশের এ অবস্থা থেকে এখনো খুব বেশি নারী বের হয়ে আসতে পারেনি। শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে না হলেও পরিবারেই হয়ত এমন মানসিক নির্যাতনের শিকার হন নারীরা। অথচ এটা যে একটা নির্যাতনের পর্যায়ে পড়তে পারে এমনটা মনেই করেন না পরিবারের সদস্যরা। এমনকি ওই নারীটি নিজেও হয়ত বিষয়টি ঠিক উপলব্ধি করতে পারেন না। ভাবেন বিষয়গুলো তো এমনই, সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকে তো এমনই চলে আসছে!

কিন্তু আসলেই কি তাই? নারীরাও বিজয়ের হাসি হাসতে জানেন, হাসাতে জানেন।   

সেদিন মিরপুরে যখন চলছিল  বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ক্রিকেট লড়াই। ঠিক তখন আরেকটি ক্রিকেট লড়াই চলছিল কক্সবজারে। দুই ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে পাকিস্তানের নারী ক্রিকেট দলকে  ৪৩ রানে হারাল বাংলাদেশের প্রমীলারা। ৪৪ ওভার ১ বলে ১০৯ রানেই অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা। সে যাত্রায় বাংলাদেশিদের মান রক্ষা পেল । ক্রিকেট পাগল একটা জাতি সেদিন কতটা কষ্ট পেত যদি নারীরা না জিতত।

গণজাগরণ মঞ্চ তথা শাহবাগের আন্দোলনের কথা মনে আসলে ডা. ইমরান এইচ সরকারের কথা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে আররেকটি মুখ আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। সে হল লাকী। লাকীর কণ্ঠ শাহবাগকে উজ্জীবিত করেছিল। বাংলাদেশের কোন আন্দোলনে নারী ছিল না ? ৯০’র গণ আন্দোলনে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদানের কথা এ জাতি কখনো ভুলবে না।

ভোলেনি যে তার বড় প্রমাণ হলো ফখরুদ্দিনের সরকার অনেক কিছু করতে পারলেও মাইনাস টু ফর্মুলা সফল করতে পারেনি। দুই নেত্রীর প্রতি মানুষের ভালোবাসাই তাদের রাজনীতিতে ফিরিয়ে এনেছে।

রাজনীতিতে পুরুষ এবং নারীর আচরণের কিছু ভিন্নতা আছে। এই ভিন্নতা শুধু আমাদের দেশে নয় অন্যান্য সমাজেও লক্ষ্য করা যায়। পুরুষ নেতাদের মধ্যে ভোগবিলাশ আমোদ ফুর্তির যে স্থুলতা দেখা যায় নারী নেত্রীদের মধ্যে ততটা দেখা যায় না।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এদেশের  নারীরা ছিল পুরুষদের পাশে। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে। যুদ্ধাহতের সেবা করেছে। আর বিসর্জন দিয়েছে সম্ভ্রম। নারীদের এ বিজয় গাঁথা, যার প্রেক্ষাপট আমাদের এই বাংলাদেশ।

শুধু বাংলাদেশ কেন? সারা বিশ্বের ইতিহাস জুড়ে আছে নারী। এবারের বিশ্ব নারী দিবসে তাই পিছন ফিরে দেখা। সেইসব সোনালী অতীতকে প্রেরণা হিসেবে নেওয়া। কারণ এবারের ২০১৪ বিশ্ব নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতীপাদ্য হল ‘ইক্যুয়ালিটি ফর উইমেন ইজ  প্রোগ্রেস ফর অল’ বা ‘অগ্রগতির মূলকথা, নারী-পুরুষ সমতা’।  

ডা. এস এম আতিকুর রহমান
মানসিক বিশেষজ্ঞ, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।