ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

মানসিক রোগ: কিছু প্রচলিত ধারণা

সৃজনী আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
মানসিক রোগ: কিছু প্রচলিত ধারণা

আমাদের অনেকেরই ধারণা ‘মানসিক রোগ’ বিষয়টি  শুধু বড়দের জন্য প্রযোগ্য। ছোটদের মানসিক রোগ হয় না।

তাই যখন শিশুরা এ ধরনের সমস্যায় ভোগে তখন আমাদের সচেতনতার অভাবে তা হয়ত কালক্রমে বেড়ে যেতে পারে। আর তাই আজ আমরা শিশুদের মানসিক রোগ নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারণার কথা জানবো।

প্রচলিত ধারণা-১: শিশুদের মানসিক রোগ হয় না।
প্রকৃত তথ্য: শিশুদের মানসিক রোগ হয়। অনেক মানসিক রোগ শৈশব কালেই শুরু হয়। চিকিত্‍সা করলে এই রোগগুলো পরবর্তীতে ব্যক্তিত্ব গঠনে খারাপ প্রভাব কম ফেলে। তাই শিশুদের আচরণে অস্বাভাবিকতা, বয়স অনুযায়ী যথাযথ আচরণ না থাকা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে পরামর্শ প্রয়োজন।

প্রচলিত ধারণা ২: মন দুর্বল থাকলে কিংবা ইচ্ছাশক্তি কম থাকলে মানসিক রোগ হয়। তাই নিজের মনকে সবল করতে পারলেই মানসিক রোগ থাকবে না।
প্রকৃত তথ্য: বিষয়টির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নাই। কিছু কিছু মানসিক রোগে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, কিন্তু বেশির ভাগ রোগে বিষয়টিকে মানসিক দুর্বলতা বললে প্রকৃত চিকিত্‍সা থেকে রোগীকে দ‍ূরে ঠেলে দেওয়া হবে।

যেমন- অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারের কথা ধরা যায়। এ রোগে নিজের মন থেকে একটি সন্দেহ, চিন্তা, ছবি বা বিতর্ক আসে যা রোগী দ‍ূর করার চেষ্টা করে। কিন্তু দ‍ূর করতে গেলে উদ্বেগ আসে, উদ্বেগ কাটাতে রোগী তখন কোনো কাজ করে বা চিন্তা করে। যা ঐ চিন্তা, ছবি, সন্দেহ বা বিতর্ককে প্রশমন করে। এসব রোগী তার ইচ্ছাশক্তি বা দুর্বলতার দোহাই দিলে সে আরও বিপন্ন বোধ করে। অথচ চিকিত্‍সার মাধ্যমে তার লক্ষণ অনেকটা ভালো হয়।

আরও একটি উদাহরণ হচ্ছে বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার। এ রোগের একটি পর্যায় হচ্ছে ‘ম্যানিয়া’। যেখানে আত্মবিশ্বাস খুব বেশি থাকে।

প্রচলিত ধারণা ৩: মানসিক রোগীরা সাধারণত অপরাধপ্রবন। ভাংচুর, মারামারিই মানসিক রোগের লক্ষণ।
প্রকৃত তথ্য: এই ধারণাটি খুব প্রচলিত একটি ধারণা। এমন ভেবে নিয়ে রোগীর সঙ্গে খুবই অযৌক্তিক আচরণ করা, তাকে দ‍ূরে ঠেলে দেওয়া এও প্রচলিত। অনেক রোগী নিজেও এ বিষয়টি মনে করে নিজেকে মানসিক রোগীর তালিকায় দেখলে বিপন্ন বোধ করেন। কিন্তু অপরাধপ্রবনতা নিয়ে মনোবিদ, মনোচিকিত্‍সক, সমাজবিজ্ঞানীরা বহু গবেষণা চালিয়ে এরকম সরল কোনো সম্পর্ক পাননি।

সহজভাবে বলা যায় অপরাধপ্রবনতা এক দুইটি মানসিক রোগের অংশ, বেশির ভাগ মানসিক রোগের সঙ্গে এর সম্পর্ক নাই। আবার মানসিক রোগের একটা বড় অংশ নিউরোসিসে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে আচরণে এরকম বৈশিষ্ট্য থাকে না।

প্রচলিত ধারণা ৪: মানসিক রোগের চিকিত্‍সায় ব্যবহৃত ওষধু ঘুম বাড়িয়ে দেয় এবং নেশা তৈরি করে। এই ওষুধ সারা জীবন খেতে হয়।
প্রকৃত তথ্য: বৈজ্ঞানিক ভাবে এমন কোনো বিষয় নেই। রোগের পর্যায় অনুযায়ী অনেক ওষুধই কম বেশি এমনকি বন্ধও করা যায়।

উপর্যুক্ত বিষয়গুলো আগেও বিভিন্ন লেখায় আলোচিত হয়েছে, তবু এ বিষয়গুলো গুরুত্বের কারণে পুনরায় আলোচনা করা হলো।


প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের। আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব পর্যায়ক্রমে জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।

 

আপনার সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই আপনার সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।

আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ জানাতে আমাদের ই মেইল করুন[email protected] 

সৃজনী আহমেদ
এম ডি, ফেজ এ, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বি এস এম এম ইউ

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
এসএটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।