ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ল্যাবএইডের ভুল চিকিৎসায় ফেসবুকে ঝড়

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৩
ল্যাবএইডের ভুল চিকিৎসায় ফেসবুকে ঝড়

ঢাবি: ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারা গেলেও তাদের কোনো বিচার হয় না বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার পোস্ট ডক্টরাল ভিজিটিং ফেলো মোকলেস রহমান নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসী।

বাংলানিউজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, আমরা এমন এক দেশে জন্মগ্রহণ করেছি যেখানে কারো কোনো জবাবদিহিতা নেই।

ডাক্তাররা মানুষ মারলেও আনন্দ ফ‍ূর্তিতে থাকেন, তাদের কোনো বিচার হয় না।

ল্যাবএইডের ভুল চিকিৎসায় নিজের বাবার করুণ মৃত্যুর বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ল্যাবএইডের ক্যান্সার স্পেশালিস্ট আমার বাবাকে পাঁচটি কেমোথেরাপি দিয়ে বলেন যে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু এর মাত্র ১৪ দিন পর আমার বাবার সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে তিনি আমার সামনেই ধুঁকে ধুঁকে মারা যান।

গত মঙ্গল ও বুধবার ল্যাবএইডের ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন সম্পর্কিত বাংলানিউজের সংবাদগুলো ফেসবুক পাতায় শেয়ার হলে তাতে আলোচনার ঝড় ওঠে।

এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কিত সংবাদে কমপক্ষে ৫১জন পাঠক মন্তব্য করেছেন। সংবাদগুলো শেয়ার করেছেন প্রায় ১৭০০ পাঠক, আর লাইক দিয়েছেন সহস্রাধিক।

মোকলেস রহমান নামের এ পাঠক আর লিখেছেন, মেডিকেল বিষয়ে আমার জ্ঞান থাকায় এসময় আমি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি যে ওরা (ল্যাবএইডের ডাক্তাররা) কতটা নির্বোধ আর জ্ঞানশূন্য।

কিডনি স্পেশালিস্ট যিনি আছেন উনিতো কিডনি নষ্ট করার জন্য বসে আছেন। আমার বাবার ক্রিয়েটিনিন মাত্র ১.৪ ছিল। কিন্তু ওনার চিকিৎসার জন্য তিনি দিয়েছেন ১৪টা মেডিসিন। এতগুলো ওষুধ খেলে যে কারো কিডনি ইম্পায়ারমেন্ট হবে। ল্যাপারোস্কপিক সার্জন আমার বাবার ভুল অপারেশন করিয়েছেন। যার ফলে ক্যান্সার সেল তার সারা শরীরে ছড়িয়েছে।

রোকেয়া বেগম নামের এক পাঠক লিখেছেন, এই মৃত্যুপুরী আমার বোনকে কেড়ে নিয়েছে। জানি না আরো কত বোন অকালে মারা গেছেন। এই যদি হয় ‘কেয়ার’ এর নমুনা, তাহলে আমার দাবি ল্যাবএইড তুলে দেয়া হোক।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার লি. নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এক পাঠক লিখেছেন, এতো নতুন কোনো ঘটনা নয়, ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। এরা প্রফেশনাল না, কারণ প্রফেশনালরা বেশি টাকার বিনিময়ে ভালো সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করে। বরঞ্চ বলা যেতে পারে এরা চ‍ূড়ান্ত কমার্শিয়াল... মুনাফাখোর।

এভাবে আরও অনেক ভুক্তভোগী পাঠক ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্ধ
প্রতিক্রিয়া লেখেন।

উল্লেখ্য, ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমের ভুল চিকিৎসা হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে এর ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত বুধবার ল্যাবএইডের সামনে কয়েকশ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।

পরে ল্যাব এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শামীম বিষয়টি নিয়ে মাসুমের পরিবারসহ তার বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার লিখিত প্রস্তাব দিলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। শুক্রবার তাদের ফের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

এদিকে ল্যাবএইডের ডাক্তার আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে ভুক্তভোগী মাসুম। এ সময় তার পরিবারের সদস্যসহ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাসুমের জীবনকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া এবং তার পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে দেওয়ায় ল্যাবএইডের কাছে এক কোটি টাকা ক্ষতিপ‍ূরণ দাবি করা হয়। এছাড়া অভিযুক্ত ডাক্তার আমজাদ হোসেনের দৃষ্টান্তম‍ূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

একই দাবিতে অপরাজেয় বাংলার সামনে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের উপস্থিতিতে মানববন্ধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত মঙ্গলবার বিভাগ অবরোধ ও আমরণ অনশন কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিভাগের চেয়ারম্যান ল্যাবএইডের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিলে অবরোধ ও অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ চিঠির মাধ্যমে ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা দায় অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের ওপর দায় চাপিয়ে প্রত্যুত্তর পাঠায় তারা।

অবশেষে গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ল্যাবএইডের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে ল্যাবএইডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ডা. শামীম আলোচনায় বসার লিখিত আশ্বাস দেয়।

তবে এসময় তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ল্যাবএইড যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে লাগাতার আন্দোলনের কর্মস‍ূচি দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য একই হাসপাতালের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার ফলে ২০১১ সালের আগস্টে মারা যান বিশিষ্ট সংগীত গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মৃদুল কান্তি। হাইকোর্টেও মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ায় মৃদুল কান্তির পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা দেয় ল্যাবএইড।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৩/আপডেট: ১২১৫
এসএ/এএ/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।