ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

মানসিক রোগ: বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৩
মানসিক রোগ: বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার

‘বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার’ এমন একটি মানসিক রোগ যা নাম দিয়ে চেনা যায়। ‘বাই’ শব্দের অর্থ ‘দুই’, আর ‘পোলার’ মানে মাথা।

অর্থাৎ এই রোগটির দু’টি মাথা বা দু’টি দিক থাকে।

এক দিকে থাকে ‘ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা’ অন্যদিকে থাকে ‘ম্যানিক কন্ডিশান’। অর্থাৎ একদিকে তিনি প্রচণ্ড বিষণ্নতায় ভোগেন, সবসময় তার মন খারাপ থাকে। অন্যদিকে ম্যানিক কন্ডিশানের কারণে ব্যক্তি নিজেকে অনেক বড় মনে করতে থাকেন, যখন তখন ক্ষেপে যান, সব কিছুতেই অতি চঞ্চলতা কাজ করতে থাকে। খাবার দরকার নাই, ঘুম দরকার নাই, যেন সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা এসে লোকটির ওপর ভর করে।
001
দু’টি দিক থাকলেও রোগ মূলত একটিই। নাম ‘বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার’।

ডিপ্রেশন বা ম্যানিক এক একটি এপিসোড বা পর্যায়। সাধারণত, দুই থেকে ছয় মাস, কখনো কখনো আরো বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। তবে নিয়মিত চিকিৎসার ভেতর থাকলে তা কমে আসে।

কেন হয়?
কেনো এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয় তার সঠিক কোনো কারণ এখনো তেমন ভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বংশ পরম্পরায় এই রোগের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নিকট আত্মীয়দেরর কারো এ রোগ থাকলে তা পরবর্তী জেনারেশনেরও দেখা দিতে পারে।

এর আগের লেখায় (মানসিক রোগ: একটি গল্প ও কিছু কথা) আমরা দেখি শান্ত নামের শান্ত ছেলেটি হঠাৎ করে চঞ্চল হয়ে যায়। শান্ত ছেলেটি হঠাৎ চঞ্চল হয়ে ওঠার একটি বড় কারণ হতে পারে, এই ‘বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার’। হঠাৎ অবাদ্ধ হয়ে যাওয়া বা বেয়াদব হয়ে যাওয়া নয় বরং একটি মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়া। কি হচ্ছে, কি হবে তা না ভেবে, আচরণে পরিবর্তন আসার সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত।
002
রোগীর স্বজনদের যা যা মনে রাখা প্রয়োজন: এটি এমন একটি রোগ যা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় থাকলে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন কাটানো সম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা না করে সবাই ভুল বুঝে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন উপদেশ দিতে থাকে। মনে রাখতে হবে, উপদেশে কোনো রোগ সারে না। শারীরিক রোগ যেমন উপদেশে সারানো যায় না,  তেমনি মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও একই কথা মনে রাখতে হবে।

স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন এবং রোগাক্রান্ত অবস্থার পরিবর্তনের মাঝে পার্থক্য থাকে, যা একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়। তবে অবশ্যই উভয় ক্ষেত্রেই বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। 00320

সতর্কতা:  
‘বাইপোলার অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার’ রোগটির একটি দিক হলো, এটি একবার হলে চিকিৎসায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও মনে রাখতে হবে এ রোগের সমস্যাগুলো আবার যেকোনো সময় ফিরে আসতে পারে। সমস্ত উপসর্গ দূর হয়ে গেলেও এ রোগ আর হবে না, এমনটা বলা সম্ভব নয়।

লোকে কি বলবে বা কুসংস্কারের ভাবনা না ভেবে বরং চিকিৎসার স্মরণাপন্ন যত দ্রুত হওয়া যাবে ততই মঙ্গল।

চিকিৎসার উদ্দেশ্য:
মূল উদ্দেশ্য ডিপ্রেশন বা ম্যানিক পর্যায়ের সিম্পটমগুলোকে কমানো হলেও, এই রোগের চিকিৎসার আরো কিছু দিক থাকে। যেমন- রোগটির সমস্যাগুলো যাতে বার বার ফিরে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা, সেই সঙ্গে ডিপ্রেশনের কারণে অতি খারাপ মনকে ভালোর দিকে রাখা এবং অতি ভালো থাকা মনকে (ম্যানিক পর্যায়) স্বাভাবিক অবস্থায় রাখাও এ রোগের চিকিৎসার উদ্দেশ্য। মনের অবস্থাকে স্বাভাবিক বা মাঝখানে রাখাই চিকিৎসার একটি বড় দিক।
004201
চিকিৎসা: এ ধরনের রোগে আক্রান্ত রোগীতে সেবনের জন্য নানা ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে থেরাপিও।

মুড স্টেবিলাইজার: মুড স্টেবিলাইজার দিতে হবে। অর্থাৎ মুডকে স্টেবল রাখার জন্য এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। বিষণ্নতা বা ম্যানিক পর্যায় কোনো দিকেই যেনো অতিরিক্ত ঝুঁকে না পড়ে সেজন্য মনকে মাঝখানে ধরে রাখতে ব্যবহার করা হয় মুড স্টেবিলাইজার।

এন্টিডিপ্রেশন্ট: অতিরিক্ত খারাপ হয়ে যাওয়া মন বা ডিপ্রেস্ট মনকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার জন্য এধরনের ওষুধ ব্যবাহার করা হয়।

এন্টিসাইকোটিক: ম্যানিক পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য এন্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবাহার করা হয়।

সেই সঙ্গে প্রয়োজন মতো ঘুম বা অস্থিরতা কমানোর জন্যও কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
00520
সাইকোথেরাপি: সাধারণত সিম্পটম যখন বেশি থাকে তখন সাইকোথেরাপি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। তবে ফ্যামেলি এডুকেশন বা সাইকোএডুকেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দিক। যার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের রোগটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা নির্দেশনা দিয়ে, কখন কি করতে হবে সেসব বিষয়ে শতর্ক করে তোলা হয়।

আপনাদের মতামত এবং সমস্যার কথা জানিয়ে আমাদের ই-মেইল করতে পারেন     [email protected]  এই ঠিকানায়।

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১ , ২০১৩
এসএটি/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।