ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

দুর্যোগ ও মানুষ: অ্যাসেসমেন্ট বা অনুসন্ধান পরবর্তী মানসিক সেবা

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৩
দুর্যোগ ও মানুষ: অ্যাসেসমেন্ট বা অনুসন্ধান পরবর্তী মানসিক সেবা

সাবধানতা অবলম্বন করেই হোক কিংবা অসাবধানতাবশতই হোক, কারণে বা অকারণে ঘটে যায় নানা দুর্ঘটনা। আর এসব দুর্ঘটনার প্রভাব অনেক সময়ই হয় মারাত্মক।

শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি অনেক সময়ই বয়ে বেড়াতে হয় মানসিক পঙ্গুত্ব। আবার যারা এসব মানুষকে উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত থাকেন বা তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাদেরও দেখা দিতে পারে নানা মানসিক সমস্যা। আর এ কারণেই সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপই সমস্যা সমাধানের পাথেয় হতে পারে।

সাইকোলজিক্যাল ইনটারভেনশান বা মানসিক সহায়তার প্রধান লক্ষ:
দু’টি প্রধান লক্ষ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার পদক্ষেপগুলোকে সাজানো উচিত-
-    আক্রান্ত নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা কমিউনিটির পুনর্গঠন
-    নির্দিষ্ট মানুষটির জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য বা সহায়তা
(উদ্ধার কর্মী, ত্রাণকর্মীসহ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্যও প্রয়োজনীয় সহায়তা থাকা দরকার)।

ওপরে উল্লেখিত মূল দু’টি অবজেকটিভ বা লক্ষকে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, কাজগুলোকে সাজানো বা প্রয়োগ করতে হয়। সেসব নিচে বর্ণনা করা হলো-

প্রথমত: মনে রাখতে হবে, একজন মানুষের সঠিক মানসিক অবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তার নিজস্ব সেফটি ফিলিং বা নিরাপত্তা বোধ ও সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি।
-    খাবার, পানি, কাপড়চোপড় এবং থাকার ব্যবস্থা জরুরি।
-    তার অবস্থাগত সিকিউরিটিও জরুরি। এর অর্থ শুধু এই নয় যে, দুর্ঘটনা পতিত অবস্থা থেকে তাকে মুক্ত করা। ছিনতাই, অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ থেকে মুক্ত রাখা এবং নিজের ঘর বাড়ি বা সম্পদ রক্ষাও এসবের মধ্যে পরবে।
-    পারিবারিক সমন্বয় ও নিরাপদ অনুভব করার ব্যবস্থা করা।
-    তাৎক্ষণিক বিপদ মুক্তির পর, পরবর্তী উপার্যনের উপায়, বাড়ি ঘর ঠিকঠাক করা, সঠিক সামাজিক নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি।

এসব কার্যক্রম সঠিক ও সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য উদ্ধারকর্মী (রেসকিউ টিম) ও ত্রাণকার্মীদের (রিলিফ টিম) সঠিক মানসিক অবস্থা ধরে রাখা এবং বারবার পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। বেশিরভাগ সময় তাদের ওপরই নির্ভর করে সার্বিক কাজের সফলতা।

দ্বিতীয়ত: কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা দুর্ঘটনার পর মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিষয়গুলোকে প্রথমেই কোনো রোগের লক্ষণ বা নির্দিষ্ট লোকটির কোনো দুর্বলতা হিসেবে দেখা যাবেনা।

পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা না হলে মানুষ বরং উল্টো বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে যাবে। যেমন-সাপ দেখলে মানুষ ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। কারো প্রতিক্রিয়া কম হবে, কারো বেশি। নিশ্চয়ই একে আমরা কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখবো না!

একইভাবে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বিভিন্ন মানসিক প্রতিক্রিয়াকে মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখতে হবে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত মানুষগুলোকে সেভাবেই বর্ণনা করতে হবে।

মানসিক ইনটারভেনশনের আসল উদ্দেশ্য হলো, তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় কাজটিতে যাতে মনোযোগ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। সেই সঙ্গে পরবর্তী জীবন ধারণের ক্ষেত্রেও যাতে এসবের প্রভাব কম থাকে।

এসব কাজে সরাসারি মেন্টাল হেল্থ এক্সপার্ট ব্যবহার না করে, বিদ্যমান সাপোর্ট সিস্টেম এর সহযোগিতা করতে পারলে ভালো হয়। যেমন- হাসপাতাল, স্কুল-কলেজের শিক্ষক বা কমিউনিটি ওয়ার্কার।

অনেক সময় অনেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহজভাবে নিতে পারে না। তাই আগে থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সাধারণ মানুষই এ কাজের জন্য বেশি উপযোগী। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের সাপোর্ট।

তৃতীয়ত: আক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বিষয়গুলো অবশ্যই দুর্যোগের বিভিন্ন ধাপ বা পর্যায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আমরা জানি (পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে), কোনো বিপর্যয় বা দুর্ঘটনার পর মানুষের মন সাধারণত তিন ধরনের প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়েই পার হয়। তাই ধাপগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কাজের ধরন ঠিক হওয়া উচিৎ-

১. The ‘Rescue’ Stage বা উদ্ধারের প্রাথমিক র্পযায়ে মানসিক প্রতিক্রিয়া:  এপর্যায়ে যে দিকগুলোর ওপর নজর দেওয়া উচিত সেগুলো হল-

- শুরু থেকেই উদ্ধারকর্মী ও ত্রানকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা বলবৎ রাখা, তাদের চাপ (স্ট্রেস) সামলানোর জন্য বা যেকোনো ধরনের সংকট ( কনফ্লিক্ট) দূর করার ব্যবস্থা রাখা।

-    আক্রান্ত মানুষগুলোর জন্য খাবার, পানি, কাপড় এবং থাকার ব্যবস্থা করা।
-    যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পারিবারিক সমন্বয় ও নিরাপদ অনুভব করছে কিনা সেটি খেয়াল করতে হবে।
-    প্রয়োজনীয় তথ্য, সহায়তা, শারীরিক ও মানসিক স্বস্তি প্রদানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

২. The ‘Inventory” Stage বা উপলব্ধি র্পযায়: এ পর্যায়কে আবার দু’টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়-

The Early Inventory Stage বা প্রথম মাস– এসময় প্রথম ধাপের কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া, দুর্যোগের ধরনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে স্থানীয় লোক ও স্বেচ্ছাসেবীদের বিভিন্ন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা, দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আক্রান্ত মানুষদের ট্রেনিং ও প্রয়োজনীয় সাপোর্টের আওতায় নিয়ে আসা। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলোকে আলাদা করা ও প্রয়োজনীয় মানসিক সেবা প্রদান করা। সামাজিক নিরাপত্তাসহ, চাকরি, ঘরবাড়িসহ অন্যদিকগুলোর ওপর নজর দেওয়া।

The Late Inventory Stage বা দ্বিতীয় মাসের শুরু থেকে আগের কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া। বিশেষ কমিউনিটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে অন্যদের সাহায্য করার মতো করে তৈরি করা। বিভিন্ন সহায়ক সংগঠনের দ্বারা পরিচালিত, দলগত ও ব্যক্তিগত মানসিক সেবা প্রদান করা। স্কুল বা কমিউনিটির জন্য উপযোগ্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া।

৩. The ‘Reconstruction’ stage: এ পর্যায়ে মানসিক সহায়তা কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে। ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে আক্রান্ত মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রাখা এবং সেগুলো চালিয়ে যাওয়া। ইমারজেন্সি সুবিধা থাকতে হবে, যাতে ভুক্তভোগীরা যেকোনো সময় দরকারি সাহায্য পেতে পারেন। নিজেকে ফিরে পেতে এ ধাপের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা বজায় থাকতে হবে।

চতুর্থত: শুরু থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার দিকটি অন্যান্য উদ্ধারকাজের সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া উচিত।

বড় কোনো দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক অনেক বিষয় থাকে যেদিকে নজর দিতে হয়। যেমন-জীবন রক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে নজর রাখাসহ মেডিকেল সাপোর্ট আরো অনেক কিছু। যেসব করতে গিয়ে অনেক সময় মানসিক দিকগুলো অবহেলিত থেকে যায়। হঠাৎ করে মানসিক দিকগুলোকে একেবারে সামনে নিয়ে আসাও সবসময় প্রয়োজন হয়না।

তাই  কোথায়, কখন কি ধরনের মানসিক সহায়তা দরকার হবে সেসবের সমন্বয় খুবই জরুরি। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, উদ্ধার কর্মের ভেতরও অনেক সময় মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেসবের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে, যেমন যেসব গ্রুপ আগে থেকেই অবহেলিত তাদের মানসিক দিকগুলো খেয়াল না করা কিংবা শিশুদের তাড়াহুড়া করে বাবা-মা থেকে আলাদা করে ফেলা, অপ্রয়োজনে মানুষকে স্থানান্তর করা এসবও সমস্যার তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। এসবকে ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে।

পঞ্চম: মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যাতে কোনোভাবেই মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে আঘাত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ষষ্ঠ: নির্দিষ্ট কিছু টেকনিক বা ব্যবস্থা অবশ্যই কিছু কিছু সমস্যা বা কন্ডিশনের সঙ্গে সরাসারি সম্পর্কযুক্ত। সেসবও সময়মতো পরিবর্তন করতে হতে পারে। তারপরও, সাধারণভাবে যেসব পদ্ধতি মোটামুটি কার্যকর হয়, সেসবের কয়েকটি হলো-
    
কথা বলতে দেওয়া: ঘটনাটি নিয়ে কথা বলতে দিলে, মানসিক অনুভূতির তীব্রতা অনেক সময় কমে আসতে পারে। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেও অনেক সময় নিজের ভেতরের কষ্ট কমে আসে। নিজেকে অনেক মুক্ত মনে হয়। তবে অবশ্যই শতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে কথা বলা বা অভিজ্ঞতা বর্ণনা নতুন করে থিতিয়ে যাওয়া কষ্টকে বাড়িয়ে না তোলে বা কষ্টের সময় বাড়িয়ে না দেয়।

সঠিক তথ্য প্রদান করা: অনেক সময় বিভিন্ন গুজব বা ভুল তথ্য মানসিক সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে। মনের ভেতর ঘটে যাওয়া বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ভুল তথ্য দেওয়া বা তথ্যকে ঘুরিয়ে না বলাই ভালো। তবে অবশ্যই আক্রান্ত মানুষটির সহ্য ক্ষমতা এবং তার মানসিক অবস্থাকে বুঝে, ধীরেধীরে সঠিক তথ্য দিতে হবে।

নিজস্ব ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখার ব্যবস্থা করা: অনেক সময় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার পর নিজেকে সম্পূর্ণ আসহায় মনে হয়। নিজের ওপর, এমনকি নিজের পূর্বের ক্ষমতার ওপরও মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। নিজের ওপর কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ কাজ করে না। ঠিক সেই সময় তাকে, তার নিজস্ব ক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। তার ক্ষমতা বুঝে তাকে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে ও মতামত দিতে উৎসাহ প্রদান করা যেতে পারে। এতে ধীরে ধীরে নিজের কার্যক্ষমতার ওপর বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে।

স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা: দুর্ঘটনার পর ঘটে যাওয়া মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলো যে স্বাভাবিক সে ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্যও জোগান দিতে হবে। কখনো বাড়তে পারে বা কেমন লাগতে পারে সেই বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা উচিত। বিশেষ দিনে, বর্ষপূর্তিতে, দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিশেষ কিছুর সংস্পর্শে আসলে এমনটি হতেই পারে।
    
সোশ্যাল সাপোর্ট: প্রায় প্রতিটি স্তরেই এ সাপোর্ট এর ভূমিকা অপরিসীম। কথা বলতে দেওয়া, বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক মনে করা, সঠিক তথ্য দেওয়া, বিশেষ গ্রুপের জন্য বিশেষ সাহায্যের ব্যবস্থা করা, এসবের সবই সোসাল সাপোর্টের এক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে। সেই সাপোর্টের সদস্য যদি, কাছের কোনো মানুষ হয়, তবে তা আরো ভালো হয়। কারণ ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা এবং প্রয়োজনীয়তা তাদেরই বেশি জানা থাকে। তবে, আবারো সেই কথা, বারবার ও বেশিবেশি মনে করিয়ে দেওয়াও অনেক সময় ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

মানসিক সমস্যা ও উপসর্গ দূর করা: যেসব সমস্যা চলতে-ফিরতে মনে বিভিন্ন কষ্ট বয়ে নিয়ে আসে এবং যেসব কষ্ট বারবার হয়, সেগুলোকে অবশ্যই দূর করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রোগের পর্যায়ে পরলো কিনা, সেটিও সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। যাদের আগে থেকেই সমস্যা ছিলো, তাদের অবশ্যই বিশেষ বিবেচনার মধ্যেই রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে দেরি না করাই ভালো। সাইকোথেরাপি, ওষুধ, এমনকি প্রয়োজনে হাসপাতালেও ভর্তি করা যেতে পারে।
    
বিদ্যমান সামাজিক সুবিধাগুলোর দ্রুত ব্যবহার করা: নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সমাজের বিশ্বাস, সুবিধা অসুবিধা ও শক্তিশালী দিকগুলোকে দ্রুত সনাক্ত করা ও ব্যবহারের উপযোগ্য করতে হবে। নির্দিষ্ট মানুষটি, তার পূর্ব অভ্যস্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে। অবশ্যই সেই সঙ্গে নিজেকে দ্রুত ফিরে পেতেও সাহায্য করবে।
    
সপ্তম: বিশেষ বিশেষ গ্রুপের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, অনুসন্ধান ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষ নজর দিতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, রিফিউজি বা শরণার্থী, মানসিক রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, দুর্ঘটনায় সন্তানহারা বাবা-মা, বাবা-মা হারা শিশু, অঙ্গহানি হওয়া মানুষ, এমন কি উদ্ধার ও ত্রাণকর্মীদের জন্য থাকতে হবে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা।

এসব গ্রুপের প্রয়োজনীয়তাগুলো অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে, গ্রুপগুলোর নির্দিষ্ট চাহিদা দ্রুত পূরণ করতে চেষ্টা করতে হবে।

ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো মূলত, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মানুষের, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য কি কি করা উচিত সেসব নিয়েই বর্ণনা করা। নির্দিষ্ট মানুষটির জন্য বা গোষ্ঠীর জন্য, বিশেষ করে যাদের বিশেষ সেবার ভিতর আনতে হবে, তাদের দ্রুত সনাক্ত করে বিশেষ সেবার আওতায় আনাকে দ্রুতই নিশ্চিত করতে হবে।

সেবার ধরন ও প্রয়োগ, বিশেষজ্ঞের মাধ্যমেই ঠিক করা উচিত। ওষুধ, কাউন্সিলিং, সাইকোথেরাপি, রিলাক্সেশনসহ আরো অনেক টেকনিক্যাল বিষয় আছে যেসব নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির জন্য প্রয়োজনীয় হবে, সেসব যথাযথভাবে নির্ণয় করাও বিশেষজ্ঞের কাজ।

তবে প্রাথমিকভাবে বিপদমুক্ত করা, সঠিকভাবে সমস্যা ও সমস্যাগ্রস্ত মানুষ বা গোষ্ঠীকে আবিষ্কার করার কাজগুলো উদ্ধারকর্মী ও ত্রানকর্মীদের ওপর নির্ভর করে। তাই বিষয়গুলোতে তাদের যথাযহ জ্ঞান থাকাও জরুরি।

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: এসএটি/বিএসকে [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।