ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

অবহেলা আর বৈষম্যের শিকার এইচআইভি আক্রান্তরা

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৩
অবহেলা আর বৈষম্যের শিকার এইচআইভি আক্রান্তরা

ঢাকা: দেশের বহু নাগরিকই বিভিন্নভাবে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠী এইচআইভি আক্রান্তরা।



এইডস আক্রান্তরা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, চালচলন, রোগের অবস্থা ইত্যাদি কারণে সমাজে নিগৃহীত ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। শুধু এরাই নয়, সমাজ থেকে ঘৃণা ও অবজ্ঞা পাচ্ছেন হিজড়া জনগোষ্ঠীও। এরা প্রতিনিয়ত বিদ্রূপ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই বললেই চলে।  

হিজড়া জনগোষ্ঠী বাসস্থান, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, তথ্য ও আইনি সহায়তাসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। `ঘৃণা-অবহেলা-বৈষম্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন` এই ভয়াবহ দুষ্টচক্রের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এইডস আক্রান্ত ও হিজড়া জনগোষ্ঠীদের জীবন।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষ্যমের কারণে তারা সমাজের মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রান্তিক সীমানায় বসবাস করে বঞ্চিত হচ্ছে মানবাধিকার থেকে। বাংলানিউজের অনুসন্ধান থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অন্য সবার মতো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আইনি সহায়তা ও আশ্রয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে এইচআইভি আক্রান্তদের। এইচআইভি/এইডস কর্মসূচির ফলে আক্রান্ত মানুষ এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে এবং কিছু স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। কিন্তু তাদের জীবনের সার্বিক মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি এখনও উপেক্ষিত।

এইচআইভিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রোগের কথা জানার পর তার সংসার ভেঙে যাচ্ছিল। তার স্ত্রী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরা তার কাছ থেকে দূরে ছিলেন। এ অবস্থায় নি:স্বঙ্গভাবে দুঃসহ জীবন কটিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি সরকার বাজেট ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর কথা আলাদাভাবে এই পকিল্পনায় বিবেচনা ছিল না। এদের মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়গুলো বিশেষভাবে দেখার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, `মানবাধিকার লঙ্ঘন` এইচআইভি বিস্তারকে ত্বরান্বিত করে। তাই সমাজের মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা এসব জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নই পারে তাদের এইচআইভি ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে।

জনগোষ্ঠীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য দূর করতে না পারলে আমরা সভ্য হিসেবে দাবি করতে পারব না। এ ব্যাপারে সরকার এবং সংশি¬ষ্ট সকলে পদক্ষেপ নিলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।  

বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার এএসএম রহমত উল্লাহ বলেন, সমাজে বৈচিত্র্যতা রয়েছে। সেই বৈচিত্র্যতাকে অক্ষুন্ন রেখে কিংবা তা মেনে নিয়ে আমাদের বসবাস করতে হবে। এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সবাই জানে না। যে কারণে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। নিরবতা ভাঙলে সবাই এগিয়ে আসবে। সবাই এগিয়ে আসলে সুন্দরভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।  

তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে সবারই সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এখন সময় এসেছে দেশের এই সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের জন্য কিছু করার।
 
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, এদেরকে সমাজ থেকে আলাদা করার চেষ্টা চলছে। মূলত সচেতনতা না থাকার কারণেই এটা হচ্ছে। সমাজে অনেক অনিয়ম ঘটছে। সেদিকে মানুষের দৃষ্টি না থাকলেও এদের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এমনকি সমাজ থেকে এদের বিতাড়নের চেষ্টা চলছে। তবে এদের জন্য প্রচুর কাজ করার সুযোগ রয়েছে।  

এ বিষয়ে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ বলেন, সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। বৈচিত্র্যতাকে গ্রহন করতে হবে। বঞ্চিত এসব মানুষদের নিয়ে বেশি বেশি কথা বলতে হবে। কথা না বলার কারণেই সমস্যা হচ্ছে।

এ সম্পর্কে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, এইচআইভি/এইডস রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, তাদের প্রতিটি সন্তানের শিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। ব্যত্যয় ঘটলে রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যেতে পারে। মানুষের মর্যাদা যাতে ক্ষুন্ন না হয়, তা নিশ্চিতে অনেক ক্ষেত্রে করণীয় আছে।

তিনি বলেন, এইচআইভি পজেটিভদের প্রতি অপবাদ ও বৈষম্যের মধ্যেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বীজ নিহিত। প্রান্তিক পর্যায়ে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তিটিও রাষ্ট্রের মালিকানার দাবিদার। তাই রাষ্ট্রের মালিকদের প্রতি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৩    
আইএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।