ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু

সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৩
জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু

ঢাকা: আমরা যারা কর্মসূত্রে বা অন্যান্য কারণে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করি- তারা কতোটুকু নিরাপদ সেই চিন্তাটা সবার মাঝে ব্যাপকভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেননা কখন যে কার ঘাড়ে আজরাইল এসে হাজির হয় ঠিক নেই।

কি হরতাল কি বৃষ্টিপাত সামান্য বিষয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই।

নিশ্চিত জীবনের তাগিদে, দু’বেলা ভাতের সংস্থানে সুদূর গ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এসেছেন এই ঢাকা শহরে। যে যেখানে পেরেছেন কাজ খুঁজে নিয়েছেন।

অনেকের কাজ এমনই যে- যতো ঝড়-বাদল হোক না কেন কর্মক্ষেত্রে ছুটতে হবে। বরং ওইসব দিনে তাদের কাজের দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। দায়িত্ববোধ থেকে বা চাকরী বাঁচাতে কর্মক্ষেত্রে যেতেই হয় তাদের। নইলে চাকরী খোয়ানোর আশঙ্কা থাকে।

সেই চাকরী করতে গিয়েই যদি অপঘাতে জীবনটাই হারাতে হয়- তাহলে গাঁও ছেড়ে ইট-পাথরের শহরে এসে চাকরী কেন? জীবনটা যেমন-তেমনভাবে বাঁচানের আশা নিয়েই তো ঢাকায় এসেছিলেন আয়েশারা।

তারা চাকরী জুটিয়ে নিয়েছিলেন রানা প্লাজার গার্মেন্ট ও তাজরিনের মতো তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে। কিন্তু অর্থলিপ্সুদের দায়িত্বঞ্জানহীনতার কারণে সহস্রাধিক মানবসন্তান অপঘাতে প্রাণ হারালেন।

ওই অর্থলিপ্সুদের থেকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই যাদের কারণে গত বৃহস্পতিবার প্রাণ হারালেন আওলাদ ও শাহীন নামের দুই যুবক। তাদের কি মনে  ঘুর্ণাক্ষরেও প্রশ্ন জেগেছিল রাস্তায় ওৎ পেতে আছে আজরাইল।

না শুধু আওলাদ ও শাহীনই নয়- কারো মনের মাঝে সহসা এমন প্রশ্ন জাগে না। জাগে না যে এমন নয়। জাগে যখন হরতাল বা কোন পক্ষের জ্বালাও-পোড়াও কাণ্ডের মধ্য দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসা করেন।

তখন সব পরিবারের সদস্যরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন বাড়ির কর্তাব্যক্তিটি যাতে কাজ শেষে সহি-সালামতে ঘরে ফিরতে পারেন।

কিন্তু সেদিন এমন কোন ঘটনা ছিল না যে আওলাদ ও শাহীনের মনে মধ্যে এ প্রশ্ন জাগতে পারে। কিন্তু তার পরেও বলা নেই, কওয়া নেই বেঘোরে প্রাণ হারালেন হতভাগ্য আওলাদ (৩৫) ও শাহীন(৩২)।

অঝোরধারার বৃষ্টির মধ্যে শুধু আওলাদ ও শাহীনই নয়-  তাদের মতো পেশার লোকদের প্রকৃতির বিরুপ আচরনের মধ্যেও জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বেরুতে হয়।

অনেকেই বৃহস্পতিবার অঝোরধারার বৃষ্টির মধ্যে  ফকিরাপুল, দৈনিকবাংলার মোড়, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনের সড়ক ও পল্টনমোড়ের হাটু পানি ভেঙ্গে কর্মস্থলে যেতে হয়েছিল।

তবে তাদের কপাল ভালো যে পানির মধ্যে বিদ্যুতের ছেড়া তার পড়ে ছিলনা। থাকলে আমাদের কাউকে না কাউকে আওলাদ ও শাহীনের মতো খবর হয়ে যেতে হতো। পরিবারে নেমে আসতো ঘোর অনামিশা।

এটা হাড়ে হাড়ে দুঃখ-কষ্ট-বেদনা বুঝবেন যারা আওলাদ ও শাহীনের মতো ঘটনার শিকার হয়েছেন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমরা প্রতিনিয়ত সহি-সালামতে ঘরে ফিরতে পারছি।

তবে আওলাদ ও শাহীনের তাদের মৃত্যু তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের কারণে ঘটেনি। ঘটেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে। তবে এ মৃত্যুর জন্য ওই সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে দোষী সাব্যস্ত করে কৈফিয়ত বা কোন ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানা যায়নি?

আর এসব অকাল মৃত্যুর কারণে যদি শুধু নসিবের দোষে আখ্যায়িত করে দায় এড়ানো হয়- তাহলে এমন মৃত্যু অহরহ ঘটতেই থাকবে। আর এ ধরনের মৃত্যুর জন্য ছা-পোষা কর্মজীবীদের মেনে নিয়েই জীবন চালাতে হবে।

আওলাদদের চাকা থামিয়ে রাখলে পুরো পরিবারকে অভুক্ত হয়ে জীবন কাটাতে হবে।

পুরনো ঢাকার অভাগা বিশ্বজিতের কথা ধরা যাক। জীবনের প্রয়োজনে বিশ্বজিতকে রুটি-রুজির কারণে ছুটতে হয়েছিল দোকানের উদ্দেশ্যে। দোকানে যাওয়া হলনা। পথেই সন্ত্রাসীদের হাতে জীবন গেল।

তাও আবার যাদের হাতে যাবার কথা ছিল তাদের দ্বারা নয়। উল্টো স্রোতের হাতে জীবন গেল। হরতাল সমর্থকরাই বরং বিশ্বজিততে বাঁধা দিতে পারতো দোকানে না যেতে। তা নয় বরং হরতাল ভঙ্গকারীদের হাতেই অকালে প্রাণ হারালো বিশ্বজিতকে কর্মক্ষেত্রে যাবার পথেই।     

আর আওলাদ ও শাহীন প্রাণ হারান জলাবদ্ধ রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে। এটা তো দায়িত্ব ঞ্জানহীনতার কারণে হত্যা।

সেদিন নর্থসাউথ রোডের আল আরাফাহ ব্যাংকের সামনের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এ সময় পাশের বিদ্যুতের পোল থেকে একটি তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়লে ওই স্থানের পানিও বিদ্যুতায়িত হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মূলত কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দু’জনই বংশাল এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এর মধ্যে আওলাদের বাড়ি বংশালে আর শাহীনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী মালিটোলায়।

বাংলাদেশ সময় : ১৬১৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।