ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

বিষণ্নতা

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৩
বিষণ্নতা

বিষণ্নতা একটি রোগ। একথা যেমন সত্য তা থেকেও বড় সত্য এটি একটি সাধারণ অনুভূতি।

অন্য অনেক অনুভূতির মতই নিত্যদিনের সাধারণ সঙ্গী।

মর্মান্তিক কোনো ঘটনা বা শারীরিক কোনো আঘাতের পর মানুষ কষ্ট পাবে বা মন খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। আজকাল বিষণ্নতা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। যদি কোনো কারণে মন খারাপ হয়, তাহলেই আমরা মনে করি যে, এই বুঝি মানসিক রোগ হয়ে গেছে।

‘বিষণ্নতা একটি রোগ’ এ স্লোগানটিই হয়তো এ বিভ্রান্তি ছড়াতে সাহায্য করে। বাস্তবে মানুষের যত রকমের শারীরিক বা মানসিক অনুভূতি আছে সবই স্বাভাবিক। বরং উল্টো এসবই মানুষকে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

দুঃখ, কষ্ট, কান্না, ব্যথা, বেদনা, হিংসা, রাগ, হাসি, খুশি-- এ সব অনুভূতিই মানুষের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

ভেবে দেখুন আপনি হাঁটছেন, পায়ের নীচে ধারালো কিছু একটা পড়লো, আপনি কোনো ব্যথা অনুভব করলেন না, তাতে কি হতে পারে!! আর যদি ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে লাফ দিয়ে সরে যাবেন; পা’টা বেঁচে যাবে। একই ভাবে মন খারাপ বা বিষন্নতাও প্রতিদিনের অনেক বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী সময়ে চলতে সাহায্য করে।

বিষণ্নতা তিনভাবে মানুষের মাঝে থাকতে পারে।

এক. একটি প্রয়োজনীয় অনুভূতি হিসেবে।

দুই. একটি রোগ হিসেবে। যাকে বইয়ের ভাষায় বলা হয়-মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসর্ডার।

তিন. অন্য যেকোনো একটি মানসিক বা শারীরিক রোগের সাথে- তীব্রতম অনুভূতি বা আরেকটি সহরোগ হিসেবে।

বিষণ্নতা অন্য একটি মানসিক রোগের অংশ হিসেবেও থাকে, যার নাম ‘বাই পোলার এফেকটিভ ডিসর্ডার’। এ

রোগটির দুটি দিক থাকে, একদিকে ম্যানিক কন্ডিশান, অন্যদিকে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন। এ দুটি অংশ মিলেই এ রোগটি হয়। যা বাইপোলার এফেকটিভ ডিসওর্ডার নামে পরিচিত।

প্রতিদিনের সাধারণ অনুভূতির বাইরে কখন আমরা বিষণ্নতাকে রোগ বলবো?

যখন মন খারাপ হওয়ার ব্যাপারটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেক লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে। কিংবা, কারণে-অকারণে কমপক্ষে দু’সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে মন খারাপ চলতে থাকে। যখন আশপাশের সব কিছু থেকে আগ্রহ কমতে থাকে বা কোন কিছুতেই আর আনন্দ পাওয়া না যায়। সে সঙ্গে ঘুম, খাওয়া, মানুষের সাথে কথা বলাসহ পেশাগত বা ব্যক্তিগত কাজে মনোযোগ কমতে থাকে তখনই মনে করতে হবে কিছু একটা হচ্ছে বা হয়েছে। যাকে আমরা রোগের পর্যায়ে ধরতে পারি।

তবে, বিশেষ বিশেষ ঘটনা- যেমন নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুতে মানুষের মন খারাপ হবে এটা খুবই স্বাভাবিক।

সেক্ষেত্রে একে বিষণ্নতা বলা যাবে না। তবে এমন ঘটনায় একজন মানুষের যতটুকু বা যতদিন মন খারাপ থাকাটা স্বাভাবিকভাবে ধরে নিই, তার থেকে যদি বেশি মনে হয় বা অস্বাভাবিক কোনো আচরণ দেখা যায়, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

বিষণ্নতার অনুভূতি অতি সাধারণ হলেও রোগ বিষণ্নতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। পৃথিবীতে যত রকমের আত্মহত্যা হয় তার সবচেয়ে বেশি হয় এই বিষণ্নতা রোগের কারণে। মনে রাখতে হবে, উপদেশ দিয়ে রোগ সারানো যায় না।

বিষণ্নতার চিকিৎসার জন্য তিন ধরনের ব্যবস্থাই দরকার হতে পারে, পরিমাণ মত ওষুধ, সাইকোথেরাপি এবং সোশাল সাপোর্ট। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তিও হওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। অন্য কোনো কোনো শারীরিক রোগের সাথে যদি বিষণ্নতাও থাকে, তবে সেটিকেও সমান গুরুত্বসহ দেখতে হবে।

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর ও জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।