ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও হল ছেড়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে তারা বলছেন, এরমধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হল পরিদর্শনে যদি না আসেন তাহলে দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবে।
রোববার (২২জুন) দুপুরে দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা আজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম আলোচনার টেবিলে। কীভাবে এর দ্রুত সমাধান করা যায় এবং কাজের অগ্রগতি ও গতকালে যে হল ত্যাগের নোটিশ ছিল সে বিষয়ে জানতে। হল ত্যাগের যে নোটিশ ছিল, আমরা সেটার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা হল ত্যাগ করছি না। আমরা মনে করছি, আমাদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্যই হল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আজকের মিটিংয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এ কারণে আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামে জানাচ্ছি যে, আগামীকাল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও তার সহযোগী টিম যদি সশরীরে কলেজে হলের ভগ্নদশা পরিদর্শনে যদি না আসেন, তাহলে আমাদের চলমান আন্দোলন কঠোর থেকে আরও কঠোরতর হবে।
তিনি বলেন, আমরা শঙ্কা করছি আমাদের আন্দোলন দমনের জন্য হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবনের কোনো সংস্কারের জন্য নয়। যেহেতু ভবনের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না, সেহেতু আমরা হল ত্যাগ করছি না। আমরা আশা করছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হবে। তারা পরিদর্শন করবেন। এ যে আমাদের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে, আমরা যদি আন্দোলন থামিয়ে দেই, তবে আমাদের এ জায়গায় থাকতে হবে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি যদি স্বাস্থ্যের অভিভাবক হয়েও তার সন্তানেরা মানে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এ ঝুঁকি নিয়ে থাকবে, তাহলে দায়ভার ওনাকেই নিতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম বলেন, আপনারা জানেন যে, বেশ কিছুদিন যাবৎ শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজের ভৌত অবকাঠামো যে ঝুঁকি হোষ্টেল ও একাডেমিক ভবন নিয়ে একটা দাবি তুলে আন্দোলন করছে। তাদের দাবির সঙ্গে কলেজের প্রশাসন তথা শিক্ষক মণ্ডলীরা একমত আছে। বিগত ১৫ বছর ধরে হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করে যে একটা মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হযেছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে। বাস্তবে গত ১৫ বছরে সেটা একনেকে পাস হয়নি। সেই মেগা প্রকল্পের স্বপ্ন দেখানোর কারণে কোনো সংস্কার ঢাকা মেডিকেলে হয়নি। যে কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এ দুর্দশা। এর ভেতরে ফজলে রাব্বি হলের মেন বিল্ডিংয়ের চারতলায় অবস্থা খুবই খারাব যেটা আপনারা দেখেছেন। সেই চারতলা পিডব্লিউডি কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে এ পরিত্যক্ত ভবনে কোনো ছাত্র থাকার কথা না ।
তিনি বলেন, আমাদের যে বাকি তিনটা ব্লক আছে, সেগুলো এখনো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। সেখানে আমাদের ছাত্ররা অবস্থান করছে কিন্তু ছাত্রদের ভেতরে সিনিয়র ছাত্রদের একরকম চাহিদা আছে। কেউ এক রুমে দুজন থাকতে চায়, কেউ এক রুমে তিনজন থাকতে চায়। তার চেয়ে বেশি থাকবে না। তারা সবাই যদি একমত হতো, আমার মেডিকেলে যে নতুন ব্যাচ আসার কথা, সেই ব্যাচ মিলে পুরো ছয়টা ব্যাচের ছাত্র সংখ্যা ৭৫৫ জন। ওই চারতলা বাদ দিয়ে,যে গণরুমের কথা বলা হচ্ছে তা বাদ দিয়ে ছাত্ররা যদি আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে থাকে তাহলে ৭৫৫ জন ছাত্রের অ্যালটমেন্ট দেওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ ভঙ্গুর অবস্থার ভেতরে থাকতে চাই না। আমাদের দুটো কনসার্ন, একটা ছাত্রদের নিরাপত্তা আরেকটা দ্রুত একাডেমিক কাজে ফিরে আসা। সেজন্য একাডেমি কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা। শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে । ওই চারতলা থেকে আজকেই সবাইকে নামতে হবে এবং হলে শিক্ষকরা যেভাবে ছিট বণ্টন করবে, সে অনুযায়ী ছাত্ররা যদি ওঠে তাইলে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এসব বিষয়ে আমরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
এজেডএস/জেএইচ