ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টিকাদান কর্মসূচি সফল করার আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৪
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টিকাদান কর্মসূচি সফল করার আশা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ঢাকা: সংসদ সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টিকাদান কর্মসূচি শতভাগ সফল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। বুধবার (০৮ মে) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সভায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের আয়োজনে এবং ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের কৌশলগত অংশীদারত্বে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে টিকাদান কর্মসূচি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সামন্ত লাল সেন বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু রোধ এবং টিকাদান কার্যক্রমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি শিশুর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতোমধ্যে টিকাদান কার্যক্রমের সফলতায় প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরো সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, সারা দেশে টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য একদল পরিশ্রমী কর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমরা জানি, এ জনবল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিগগিরই জনবল বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অব্যাহত সমর্থন ও ভূমিকা রেখে চলার জন্য ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের (গ্যাভি) সিএসওর ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নিজাম উদ্দীন আহমেদ।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ৫০ বছর পূর্তির এ মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশের টিকাদান সাফল্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। টিকাদান কার্যক্রমের সফলতার পাশাপাশি আমরা অনেক জায়গায় পিছিয়ে আছি। এর মূল কারণ টিকাদান কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত জনবল সংকট। পাশাপাশি অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, টিকার সংকট, দুর্গম এলাকায় টিকা পরিবহনের জটিলতা ও সময়মত টিকা না পাওয়াসহ অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেক শিশু ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।  

তিনি আরও বলেন, সমস্যা সমাধানে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদন করা জরুরি। অবস্থানভেদে নতুন পদ সৃষ্টি এবং সেখানে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে টিকাদান প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই) সহায়তা করবে। ২০৩০ সালে থেকে স্ব-অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।       

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ ইমা ব্রিংহাম বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এ কর্মসূচির ফলেই দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।  

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি তৃণমূলের স্বাস্থ্যকর্মী-মাঠকর্মীদের আন্তরিকতা আর কমিউনিটির জনগণ, বিশেষ করে মায়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণেই সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে সাফল্য আনা সম্ভব হয়েছে। সরকার দেশের সব শিশুকে শতভাগ টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা করছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।  

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, টিকাদান কর্মসূচিতে আমাদের বেশ কিছু বাধা আছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ইপিআই কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আমাদের এ বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। বাংলাদেশ টিকাদানে একটি সক্রিয় দেশ। টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখ লাখ শিশুর জীবন রক্ষা পাচ্ছে, এবং সুস্থ-সবল হিসেবে শিশুরা বেড়ে উঠছে। এ শিশুরাই আগামী দিনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, কানন আরা বেগম, অনিমা মুক্তি গোমেজ, নাদিয়া বিনতে আমিন, ফরিদা ইয়াসমিন ও দ্রোপদী দেবী আগারওয়াল।

এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের চিফ অব হেলথ মায়া ভ্যানডেনেন্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (টিকাদান) ডা. রিয়াদ মাহমুদ, গ্লোবাল ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের (গ্যাভি) পূর্ব-এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান স্যাম মুলার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি ও এএইচ) মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।

সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা  সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের সমন্বয়ক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৪
আরকেআর/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।