ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ ডোনেশনে ‘লিভিং উইলে’র আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ ডোনেশনে ‘লিভিং উইলে’র আহ্বান

ঢাকা: ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ বা ক্যাডাভেরিক ডোনেশনে ‘লিভিং উইলে’র আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীসহ দেশের বিশিষ্ট জনেরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ এর সারাহ ইসলাম ক্যাডভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, লিভিং উইলটা খুব প্রয়োজনীয় জিনিস। কেননা এক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার সঙ্গে যে কোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। আপনি হয়তো কথা বলতে পারবেন না, মুভ করতে পারবেন না, কিন্তু আপনার অর্গানগুলো কাজ করবে। তখন আত্মীয়রা চাইবে আমরা একে যতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু যদি অর্গান ও বডি তিনি যদি বলে যান, যদি লিভিং উইল আমরা দিয়ে যাই তাহলে তখন নিকটতমদের সিদ্ধান্ত নিতে এবং অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। কাজেই আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো- কার্ড করেন এবং যদি পারেন লিভিং উইল করে যান।

তিনি বলেন, আমি মুসলমান ও মুসলিম ধর্মেও বিশ্বাস করি। কিন্তু ধর্মের থেকেও বেশি হলো আমাদের একটা বিবেক আছে এবং আমরা সেই বিবেক দিয়ে চলার চেষ্টা করি। এজন্য আমি ধর্মীয় আলাপে যাচ্ছি না, আমি ইনডিভিজুয়াল চয়েসে বিশ্বাস করি। আপনারা যে যা মনে করেন, তার ওপর অন্য কারও কিছু করার নাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অ্যাকসিডেন্ট বা যেকোনো দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণেই অনেক রোগীকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকতে হয়। এ সময় অনেকেই ব্রেন ডেড হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক মারা যায়। এমন মস্তিষ্ক মৃত (ব্রেইন ডেড) ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি, কর্নিয়া ও লিভারসহ অন্যান্য আট ধরনের পৃথক অঙ্গ সংগ্রহ করে আটজন মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন সম্ভব। দেশে ১৯৮২ সালে জীবিত দাতার কাছ থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়। ‘ব্রেইন ডেড’ রোগীর কিডনি নেওয়ার ব্যাপারে আইনি সীমাবদ্ধতা ছিল। ২০১৮ সালে আত্মীয়দের সম্মতিতে 'ব্রেইন ডেড' রোগীর অঙ্গ সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে অঙ্গদান আইন সংশোধন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রথম সারাহ ইসলামের মাধ্যমে দেশে ক্যাডাভেরিক কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু হয়।

তিনি বলেন, মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলোতেও এখন ক্যাডাভেরিক অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। শীর্ষ দেশগুলোও আমাদের মুসলিম অংশীদারদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালাগুলো পরিমার্জন করতে পারি। অঙ্গ সংগ্রহ এবং এর প্রক্রিয়াগুলোকে সহজতর করতে পারি এবং অঙ্গ দানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে জনসচেতনতা বাড়াতে পারি। কেননা এ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্যু পথযাত্রী অন্য মানুষদের সম্পূর্ণ সুস্থ ও কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব। আর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখা হয়, তবে পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে, ‘যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো। ’

ক্যাডাভেরিক কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সুজন। আলোচনায় তিনি বলেন, আমি আগে অন্ধ ছিলাম, কিছুই দেখতে পেতাম না। এখন আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছি। একটা ছোট দোকান করে সংসার চালাচ্ছি।

ক্যাডাভেরিক ডোনার আব্দুল করিম বলেন, আমি জানতাম না বাংলাদেশ এ বিষয়ে এতটা পিছিয়ে আছে। আমি ভারতের অনেক খবর দেখেছি। তারা একটা বিশেষ সময়ের মধ্যেই সব কাজ করে ফেলে। কিন্তু বাংলাদেশে এটা বেশ পিছিয়ে আছে। আমি অনেকদিন থেকেই ভাবি মরণোত্তর অঙ্গ দান করবো। এজন্য বিএসএমএমইউ এবং ঢাকা মেডিকেলেও গিয়েছি, কিন্তু দেখলাম যে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থায় নেই। বাংলাদেশ যে এ সেক্টরে এতটা পিছিয়ে তা আমি জানতাম না।

আলোচনায় ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ বা ক্যাডাভেরিক ডোনেশনে কার্ড ও লিভিং উইলের আহ্বান জানান সব বক্তারা। এছাড়া এ বিষয় নিয়ে ধর্মীয় আরও আলোচনার জন্যও আহ্বান জানান তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ এর সারাহ ইসলাম ক্যাডভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেলের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান (দুলাল)। এ সময় দেশে মরণোত্তর দেহদানের অগ্রদূত সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানাসহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আলোচ্য সূচি সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।