ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ঢামেকের জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিন দুই সপ্তাহ ধরে বিকল

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
ঢামেকের জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিন দুই সপ্তাহ ধরে বিকল

ঢাকা: দুই সপ্তাহ ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিন। এতে জরুরি বিভাগের রোগীরা পড়েছেন দুর্ভোগে।

এই হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলায় আরেকটি সিটি স্ক্যান মেশিন থাকলেও সেখানে লম্বা সিরিয়ালের কারণে অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বেশি টাকা ব্যয় করে বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনছেন।

দেশের সব শ্রেণির মানুষের চিকিৎসার ভরসার জায়গা ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) গিয়ে জানা যায়, এখানকার সিটিস্ক্যান মেশিন ১২-১৪ দিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এটি সচল থাকলে ২৪ ঘণ্টাই সেবা দিয়ে থাকে। এখানে জরুরি বিভাগের রোগীদের পাশাপাশি অন্য বিভাগের রোগীদেরও সিটি স্ক্যান পরীক্ষা হয়ে থাকে। দিনে গড়ে ৮০-৯০ জন রোগীর সিটি স্ক্যান হয়ে থাকে এই মেশিনে। ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ রোগীর সিটি স্ক্যান করার রেকর্ডও আছে এখানে।

সিটি স্ক্যান হলো ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) সংস্করণের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের সবচেয়ে আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা পদ্ধতি। হাসপাতালে আসা রোগীর মাথায় আঘাতসহ অন্যান্য কারণে চিকিৎসকরা সিটি স্ক্যান করতে বলেন। প্রাথমিক চিকিৎসার দেওয়ার পাশাপাশি সিটি স্ক্যানের ওপর নির্ভর করে রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা মেলে।  

যাত্রাবাড়ীর মীর হাজিরবাগ এলাকার ১২ বছরের শিশু রাকিব হোসেন সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসে। হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসেন মা আলেয়া আক্তার।

তিনি জানান, রাকিব ওই এলাকার লেগুনার ধাক্কায় মাথায় আঘাত পায়। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক তার সিটি স্ক্যান করতে বলেন। কিন্তু জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান রুমে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। সেখানে অবস্থানরত একজন আনসার সদস্য জানান, সিটি স্ক্যান মেশিনটি অনেকদিন ধরে নষ্ট। পরে বাইরের অন্য হাসপাতাল থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রাকিবের সিটি স্ক্যান করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা পর সেই রিপোর্ট নিয়ে আবারও ঢামেকে এসে চিকিৎসকদের দেখানো হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের আঘাতটা গুরুতর ছিল না। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা সেটাই বলেছেন। আমার ছেলের আঘাতটা যদি গুরুতর হতো তাহলে বাইরে থেকে সিটি স্ক্যান করে আবার হাসপাতালে আনাটা খুব ঝুঁকির ছিল। তখন হয়তো ছেলের অবস্থার আরও অবনতি হতে পারতো।  

নোয়াখালীর বাসিন্দা পেয়ারা বেগম (৬৫) বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট বিধায় তার পরীক্ষার জন্য নতুন ভবনের নিচতলার মেশিনটিতে সিরিয়াল দিয়েছেন স্বজনরা।  

পেয়ারা পুত্রবধূ শ্রাবন্তী জানান, চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী সিটি স্ক্যান করাতে এসেছি, টাকাও জমা দিয়েছি। আনুমানিক দেড় ঘণ্টা পর সিটি স্ক্যান করার সিরিয়াল পেয়েছি।

জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান করার দায়িত্বে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা বলেন, হিটাচি কোম্পানির সিটি স্ক্যান মেশিনটির এখনো ওয়ারেন্টি আছে। সেই কোম্পানির ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করছেন। সম্ভবত কিছু পার্ট বাইরে থেকে আনা হয়েছে। আশা করা যায় কয়েকদিনের মধ্যেই জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান চালু হতে পারে।

জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট থাকার কারণে অনেক রোগী বাইরে থেকে পরীক্ষা করছেন, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলায় আরেকটি সিটি স্ক্যান মেশিন আছে। জরুরি বিভাগের মেশিনটি নষ্ট হওয়ার কারণে সেখানে চাপ অনেক বেড়ে গেছে। অনেক লম্বা সিরিয়ালের কারণে হয়তো রোগীরা বাইরে যাচ্ছেন, এটা সত্য কথা। কারণ জরুরি রোগীদের চিকিৎসা জরুরি। জরুরী রোগীরা কখনো লাইন ধরে সিটি স্ক্যান করবে না। তাই তারা স্বেচ্ছায় বাইরে থেকে সিটি স্ক্যান করে আনে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি স্ক্যানের ধরন অনুযায়ী খরচ নেওয়া হয়। মাথার সিটি স্ক্যানে নেওয়া হয় ২০০০ টাকা, বুকের জন্য নেওয়া হয় ২৫০০ টাকা এবং পেটের জন্য নেওয়া হয় চার হাজার টাকা। শুধু জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিনে ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ রোগীর সিটি স্ক্যান করারও রেকর্ড আছে। প্রাইভেট হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করলে এই টাকার দুই-তিন গুণ লাগে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, জরুরি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিনটি কয়েকদিন যাবত নষ্ট। কোম্পানির লোকজন কাজ করছে। আশা করি শিগগির সেটি চালু করা হবে। কারণ সেটির ওয়ারেন্টি আছে। এছাড়া হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলার আরেকটি সিটি স্ক্যান মেশিন চালু আছে। রোগীরা সেখান থেকে সিটিস্ক্যান করাচ্ছেন, যদিওবা সেখানে একটু চাপ আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।