ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

পরিচালক ব্রি. জেনারেল নাজমুলের উদ্যোগে তেলাপোকা মুক্ত ঢামেক

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
পরিচালক ব্রি. জেনারেল নাজমুলের উদ্যোগে তেলাপোকা মুক্ত ঢামেক ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পোকামাকড়ের যন্ত্রণায় যুগের পর যুগ ধরে অতিষ্ঠ ছিল রোগীরা। সারা হাসপাতাল জুড়ে ছোট ছোট কোটি কোটি তেলাপোকা বিছানার আনাচে কানাচে দেওয়াল, জানালা এমন কোনো জায়গা ছিল না যে তেলাপোকার অস্তিত্ব ছিল না।

রোগীদের কাপড়-চোপড়, বিছানা, খাবারে সব সময় তেলাপোকা ঘুরঘুর করত।

এ অবস্থায় বর্তমান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই পোকামাকড় নিধনের দায়িত্ব দেয় একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারা মাসব্যাপী  কাজ করে এই তেলাপোকাগুলো নিধন করতে প্রায় সক্ষম হয়েছেন। এখন ওয়ার্ডের পাশাপাশি হাসপাতালের অন্য কোথাও পোকামাকড় দেখা যাচ্ছে না।

হাসপাতালের তিন ভবন বার্ন ইউনিট, নতুন ভবন ও পুরাতন ভবন এখন প্রায় পোকামাকড় মুক্ত। যুগের পর যুগ, এমনকি গত ২৫ দিন আগেও এই কোটি কোটি তেলাপোকা দেখা যেত হাসপাতালের সব জায়গায়। অনেকে বলছেন হাসপাতাল প্রতিনিয়ত উন্নত হলেও ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে থাকা কোটি কোটি পোকামাকড় মুক্ত কখনোই হতে দেখা যায়নি। গত কয়েকদিন যাবত এইবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে পোকামাকড় মুক্ত হাসপাতাল ও রোগীরা।

বুধবার (১২ এপ্রিল) ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে কোটি কোটি সেই তেলাপোকার অস্তিত্ব তেমন পাওয়া যায়নি। ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডের লতা মজুমদার চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী, বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত ১২ বছরের চাকরির জীবনে ওয়ার্ডের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে ও হাসপাতাল জুড়ে প্রায় সব জায়গায় ছোট ছোট  কোটি কোটি তেলাপোকা চোখে পড়তো। ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে কোনো পোকামাকড় ওয়ার্ডে আর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে হাসপাতালের পরিচালক স্যার। তিনি একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছেন এই তেলাপোকা নিধনের জন্য, তারা কাজ করে যাচ্ছে। মাত্র ২০-২৫ দিনেই পোকামাকড় প্রায় মুক্ত হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড।

১০৯ নম্বর প্রসূতি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স ভগবতী রায় ও ঝুমুর বলেন, এক বছর যাবত এই ওয়ার্ডে ডিউটি করে যাচ্ছি। কিছুদিন আগেও ওয়ার্ডে লাখ লাখ তেলাপোকা বিভিন্ন আনাচে-কানাচে দেখা যেত। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ওষুধ ছিটানোর পর পোকামাকড়গুলো এখন আর দেখা যায় না। ১৫ থেকে ২০ দিন যাবত তেলাপোকা ও পোকামাকড় মুক্ত ওয়ার্ড।

পুরাতন ভবনের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা আব্দুল মজিদ নামে এক ব্যক্তি জানান, একমাস আগেও ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে লাখ লাখ তেলাপোকা ছিল। বেশ কিছুদিন যাবত ওষুধ ছিটানোর পর থেকে কোনো পোকামাকড় ওয়ার্ডের ভিতরে আর দেখা যায়নি। এখন পর্যন্ত পরিষ্কার পোকামাকড় মুক্ত ওয়ার্ড।

ওই ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর বেডের রোগী নাসিরের স্ত্রীর তাসলিমা জানান, স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে ২০ থেকে ২২দিন যাবত  চিকিৎসাধীন আছেন। কিন্তু কোনো পোকামাকড়ের অস্তিত্ব চোখে পড়েনি।

এদিকে ২০১২ সাল থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালে পরিচালক ছিলেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কোটি কোটি তেলাপোকা-ছারপোকা ছিল। সে সময় একটি কোম্পানিকে চুক্তির মাধ্যমে নির্মূলের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সেগুলি হাসপাতালে সব জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছিল, কোম্পানির লোকজন পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি।

৪ বছর আগে বরিশালের বনানীপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় কাজল নামে এক কিশোর। তারপর থেকেই ধাপে ধাপে চার বছর যাবত ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রথমে ছিল হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে, তারপরে সার্জারি ২১৭ ওয়ার্ডে। এরপরে ১১৪ ওয়ার্ডে।

তার মা পলি বেগম জানান, মাসের পর মাস আমার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলাম। তখন ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে কোটি কোটি তেলাপোকা আমরা দেখেছি। কাপড়চোপড় খাবার-দাবারে সব সময় তেলাপোকা ঘুরঘুর করত। কিন্তু এখন শুনে অবাক হলাম, হাসপাতালে কোনো পোকামাকড় নেই। ঈদের পরে আর একটা অস্ত্রোপচার করতে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাব। তখন দেখব আসলে এই ঘটনা সত্য কিনা। কারণ এটা অবাক করার বিষয় কোটি কোটি তেলাপোকা কীভাবে নিঃশেষ হলো।

২০০৭ সালে অবসরে যাওয়ার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল মতিন জানান, পুরো হাসপাতালে ছোট ছোট কোটি কোটি তেলাপোকা দেখেছি। অনেকে অনেক সময় উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেগুলা নিধনের জন্য, কিন্তু সফল হননি। বছরের পর বছর চাকরি করেছি। চাকরির শুরুতেও দেখেছি তেলাপোকা, চাকরি শেষে অবসরে যাওয়ার দিনও দেখেছি হাসপাতালে তেলাপোকা-ছারপোকা।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, একদম বাস্তব ৩০ থেকে ৪০ বছর যাবত ধরে হাসপাতালে কোটি কোটি তেলাপোকার রাজত্ব ছিল, সেটা এখন একদম জিরো। হাসপাতাল এখন পোকামাকড় মুক্ত।

তিনি বলেন, আমরা যখন রোগীর কাছে যাই, এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন সময় সেবা নিয়েছেন তারা আমাদের কাছে অভিযোগ করেন হাসপাতালে ঝাঁকে ঝাঁকে তেলাপোকার কারণে অতিষ্ঠ, পাশাপাশি ইঁদুরের অত্যাচার। এসব পোকামাকড়ের কারণে নোংরাও একটি বিষয় ছিল।

এসব কারণে আমরা বিভিন্ন হাসপাতাল অবজারভ করে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেই তেলাপোকা নিধনের জন্য। পুরো হাসপাতাল জুড়ে তারা মাসব্যাপী কাজ করেছে। আমরা ভালো ফল পাচ্ছি, ঢামেক হাসপাতাল এখন তেলাপোকা মুক্ত। পোকামাকড় নিধনের এ কাজ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২,২০২৩
এজেডএস/এমএমজেড

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।