ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রেল যাচ্ছে কক্সবাজার

২১২ কোটির ১৯০ কোটিই পরামর্শকের পকেটে!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৫
২১২ কোটির ১৯০ কোটিই পরামর্শকের পকেটে! ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ’ প্রস্তুতি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ অর্থের মধ্যে শুধু পরামর্শক খাতেই ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।



শুধু তাই নয়, পরামর্শক সেবার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ আরও ৪২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে করে দেখা যাচ্ছে, প্রস্তুতিমূলক এ রেল প্রকল্পের সিংহভাগ টাকাই যাচ্ছে বিদেশি পরামর্শকের পকেটে। ২১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মধ্যে বিদেশি পরামর্শকের পকেটেই যাবে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরামর্শক সেবায় অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হলেও কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আইটেমসমূহ ও অন্যান্য আইটেমওয়ারী ব্যয় অনেক কম ধরা হয়েছে।

কারণ বাকি কাজগুলো দেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে সম্পন্ন করা হবে। যেমন যানবাহন, ফার্নিচার মেরামত ও সংরক্ষণ মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে যানবাহনের জ্বালানি ও লুব্রিকেন্ট ব্যয় ৫০ লাখ, ১৮ জন দেশীয় কর্মকর্তার বেতন এক কোটি টাকা, বিজ্ঞাপন ফি ৫ লাখ, বাস্তবায়নকালীন সুবিধা প্রায় ৪ কোটি, সভা সেমিনার ২ লাখ, ভেইকল ফিটনেস ১০ লাখ, দেশীয় কর্মচারীদের পারিশ্রমিক মাত্র দুই লাখ টাকা ধরা হয়েছে। অথচ বিদেশি পরামর্শক নিয়োগে আকাশচুম্বি ব্যয় ধরা হয়েছে।

এদিকে, পরামর্শক ব্যয়কে যৌক্তিক মনে করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ২১২ কোটি টাকার প্রস্তুতি প্রকল্পের মধ্যে ১৯০ কোটি টাকার পরামর্শক ব্যয় যৌক্তিক আছে। কারণ অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে মিল রেখেই আমরা পরামর্শক সেবা খাতের ব্যয় ধরেছি। তাছাড়া আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। ’

তবে, এই পরামর্শক খাতের ব্যয়কে অযৌক্তিক ও অবাস্তব মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশেনর দাবি, পরামর্শক খাতের ব্যয় আরও কমাতে হবে অন্যথায় প্রাথমিকভাবেই প্রকল্পটি নিয়ে নানা জনের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দেবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, উন্নয়ন প্রকল্পে ‘পরামর্শক’ পদটি বেশ লাভজনক। পরামর্শকদের সম্মানিও অনেক। সেই লক্ষে পরামর্শকের দায়িত্ব পেতে চলে নানা তদবির। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকাসহ উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে পরামর্শকের পেছনে বিপুল সংখ্যক টাকা ব্যয় ধরা হয়। তবে, পরামর্শক সেবার অতিরিক্ত ব্যয় বিষয়টি নজর এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক সভায় ‘বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কর্মসূচি’ শিরোনামের একটি প্রকল্পে পরামর্শক খাতের ব্যয় দেখে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে সংশোধন করতে ফেরত পাঠান তিনি।

সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কর্মসূচি’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৪৪০ কোটি টাকা। বাকি চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া যাবে বিশ্বব্যাংক থেকে। এই পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকার মধ্যে পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০১ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ১২ শতাংশ। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির পরামর্শক ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়ে একনেক সভা থেকে ফিরিয়ে দেন।  

পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, পরামর্শক সেবার ব্যয় না কমালে ঢাকা-কক্সবাজার পযর্ন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটিও একনেক সভায় অনুমোদন থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের পরিচালক মকবুল আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, ওদের টাকা(এডিবি) ওরাই খরচ করবে, যে কারণে পরামর্শক খরচা বেশি। বিদেশি পরামর্শকের বেতনও বেশি ধরা লাগে। এছাড়া ডলারে পরামর্শকের বিল পরিশোধ করতে হয় যে কারণে খরচ বেশি পড়ে যায়। সবাই বিদেশি পরামর্শক থাকে, দেশি পরামর্শক নেই বললেই চলে। দেশি টাকা বেশি লাগলেও ডলারে রুপান্তর করলে কম হয়ে যায়। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৫
এমআইএস/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ