ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গণতন্ত্র এখন ১০০ ফুট মাটির নিচে: এরশাদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
গণতন্ত্র এখন ১০০ ফুট মাটির নিচে: এরশাদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: গণতন্ত্র এখন মাটির নিচে সমাহিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও ‍জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।   সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ।



বৃহস্পতিবার নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির মহানগর শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এরশাদ।  

তিনি বলেন, গণতন্ত্র মাটির নিচে সমাহিত হয়েছে।   ১০০ ফুট মাটির নিচে সমাহিত হয়েছে।   গণতন্ত্র মানে কি? ভোট দেয়ার অধিকার, কথা বলার অধিকার, লেখার অধিকার, বাঁচার অধিকার।  

‘কিন্তু সেই অধিকার নেই।   লেখার অধিকার নেই।   সাংবাদিকরা অনেক কিছু রেকর্ড করে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু লিখতে পারবেন না।   কন্ঠ রুদ্ধ, কলম রুদ্ধ, বাক রুদ্ধ। ’ বলেন এরশাদ।  

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, আমরা মানুষকে মুক্তি দেব।   নতুন জীবন দেব।   দেখেন, এখানে কতজন সংসদ সদস্য এসেছেন।   হাজার হাজার মানুষ বসে আছে বক্তব্য শোনার জন্য।  

‘এর থেকে কি প্রমাণিত হয় ? মানুষের আস্থা ফিরে আসছে।   কথা দিচ্ছি, এই আস্থা কোনদিন ভঙ্গ হবে না।   জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ’ বলেন এরশাদ।   jatiyo_party_council_3

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, নতুন সূর্য উঠছে।   একটা সূর্য ডুবছে, আরেকটা উঠছে।   ক্ষমতা বেশি দূরে নয়।   সুদিন আসছে।   সুদিন আসছে বলেই যারা আমাদের ছেড়ে গিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে।  

এরশাদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আপনারা দেখছেন।   আমরা সরকারের বিরুদ্ধে বলছি।   সরকারের কঠোর সমালোচনা করছি।   যেটা বলা উচিৎ, যেটা মানুষ বলতে পারছেনা, যেটা সাংবাদিকরা লিখতে পারছেনা সেটাই আমরা বলছি।   আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।   আমি বলব।   আমি চাই দেশে শান্তি ফিরে আসুক।

‘মানুষকে বলতে দিতে হবে।   মানুষ বলতে না পারলে, সরকারের সমালোচনা করতে না পারলে সেই সরকার জনগণের সরকার হয়না। ’ বলেন এরশাদ।

‘এই চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান খুন হয়েছিলেন।   তাকে খুন করেছিলেন মঞ্জুর।   সেই মঞ্জুর হত্যার আসামি করা হয়েছে আমাকে।   ১৪ বছর ৯ মাস পর আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।   আমার পায়ে শৃঙ্খল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এই শৃঙ্খল আমি একদিন ভেঙে ফেলবই। ’ বলেন এরশাদ।

ব্যাংক কেলেংকারির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বেসির ব্যাংকে যে লুটপাট হয়েছে সবাই জানে কারা এর সঙ্গে জড়িত।   ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে অথচ চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।   অর্থমন্ত্রী যিনি মাঝে মাছে উদ্ভট কথা বলেন, তিনি বললেন তিন-চার হাজার কোটি টাকা নাকি বেশি টাকা নয়।   আরে এই টাকা কি আপনার টাকা ? এটা তো জনগণের টাকা।  

‘ব্যাংকে লুটপাট হল, শেয়ারবাজারে লুটপাট হল, এগুলো কাদের টাকা আপনারা জানেন।   এর বিচার হয়ত কোনদিন হবেনা।   কিন্তু উপরে আল্লাহ আছেন।   আল্লাহ নিশ্চয়ই এর বিচার করবেন। ’ বলেন এরশাদ।   jatiyo_partu_council_2

তিনি বলেন, অনেকে বলেন এরশাদ স্বৈরশাসক।   আমি রাষ্ট্রপতি ছিলাম, সেজন্য আমাকে স্বৈরশাসক বলা হচ্ছে।   এদেশে বঙ্গবন্ধু, জিয়া, সাত্তারও রাষ্ট্রপতি ছিলেন।   কিন্তু আমার ভয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়েছে।   যদি আবার কোনদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়, আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি আমাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা, এরশাদই হবে রাষ্ট্রপতি।  

তিনি বলেন, আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই।   আমি সেনাপ্রধান ছিলাম ৮ বছর, রাষ্ট্রপতি ছিলাম ৯ বছর।   আমাকে আল্লাহ অনেক কিছুই দিয়েছে।   আমি জনগণের জন্য বাঁচতে চাই।   আমরা ধর্ষণ, খুন, গুমমুক্ত দেশ চাই।   সেই দেশ দিতে পারবে জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির মহানগর শাখার আহবায়ক ও সংসদ সদস্য মাহজাবিন মোরশেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাংসদ জিয়াউদ্দিন বাবলু, সাংসদ সালমা ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, নোমান মিয়া ও মো.ইলিয়াছ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান এবং উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান (এরশাদ) জেলে থেকে পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।   এরপরও তথাকথিত সুশীল সমাজ তাকে স্বৈরাচার বলে।   অথচ তার হাতে কোন রক্তের দাগ নেই।   সারাদেশে জাতীয় পার্টি জেগে উঠেছে।   চট্টগ্রামকে জাতীয় পার্টির দুর্গে পরিণত করতে হবে।  

জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের গায়ে হাত দিয়েছে।   ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে।   তারা কেন ভ্যাট দেবে ? শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার।   শিক্ষার জন্য একজন ছাত্রকে ভ্যাট দিতে হবে কেন ?

‘আমরা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চায়।   এজন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই আমাদের একমাত্র ভরসা।   তিনিই একমাত্র আমাদের মুক্তির পথ।   আওয়ামী লীগ-বিএনপির দু:শাসন, দলীয়করণ থেকে মুক্তি দিতে এরশাদকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে হবে। ’ বলেন বাবলু।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংসদ মাহজাবিন মোরশেদকে সভাপতি এবং এয়াকুব হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেন এরশাদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৫
আরডিজি/আইএসএ/টিসি

** বিএনপি এখন কফিনে: এরশাদ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ