ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফলের বাজারে মাছি-মৌমাছি!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
ফলের বাজারে মাছি-মৌমাছি!

খুলনা: খুলনার বাজার ঠাসা রসে ভরপুর, সুমিষ্ট ও সুস্বাদু মৌসুমী নানা ফলে। রসালো এসব ফলের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ।

লোভ সামলানোর উপায় বড় দায়। ফলপ্রেমী বাঙালিরা এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন সারা বছর।
 
এবার খুলনার বাজারে মৌসুমী ফল আম, কাঁঠাল, জামরুল, জাম, লিচু বিষমুক্ত হওয়ায় মাছি ও মৌমাছির দেখা মিলছে। মাছি দেখে ক্রেতারাও নিশ্চিন্ত হয়ে ফল কিনছেন।

সোমবার (১৫ জুন) সরেজমিন খুলনার ফলের বাজার ও আড়ৎ ঘুরে মৌসুমী ফলে মৌমাছি ও মাছি বসার এমন দৃশ্য দেখা গেছে।  

আমে মাছি ভেড়াতে মিষ্টিজাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ফলের আড়তে শত শত মণ আমেও মাছি ও মৌমাছি বসতে দেখা গেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের খুলনার সহকারী পরিচালক শাহিদুর আলম বাংলানিউজকে জানালেন, এবার খুলনার ফলের বাজার বিষমুক্ত।

কোথাও বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোরে খবর পাওয়া যায়নি। সে কারণে আমরাও নিয়মিত বাজার থেকে ফল কিনছি। সাধারণ ক্রেতারাও আগের বছরের তুলনায় অনেকেটা নিশ্চিন্তে মৌসুমী ফল কিনছেন।

ফল বিক্রেতারা জানালেন, গরমের হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যেও রসনা তৃপ্ত করতে বাহারি মৌসুমী ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ ঐতিহ্য মেনে প্রিয়জনের বাসায় থলে ভর্তি ফল পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

ফলের দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষেরাও এবার ফলের স্বাদ নিতে পারছেন।

আড়তে ফল কিনতে আসা বিমা কর্মকর্তা কবীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এবার দোকানের ফলে মাছি ও মৌমাছি বসছে। তাই, আড়তে এসেছি ফরমালিনমুক্ত ফল হিসেবে প্রমাণ করতে গিয়ে বিক্রেতারা ক্রেতাদের ধোঁকা দিচ্ছেন কিনা তা দেখতে। কিন্তু নাহ, এখানে এসে মৌমাছি দেখে বুঝতে পারলাম, এবারের আমে কোনো বিষাক্ত কেমিক্যাল নেই।

খুলনার ফল আমদানিকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির বাংলানিউজকে বলেন, খুলনার ফলের বাজার বিষমুক্ত। নিয়মিত পরীক্ষায় কোনো ফলে ফরমালিন ধরা পড়ছে না। আড়ৎ কিংবা কোনো বাজারের ফলে ফরমালিন নেই।

তিনি আরো বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘খুলনার বাজার ফরমালিনমুক্ত’ ঘোষণা করেছি। ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদফতরর, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযান চালাতে অনুরোধ করেছি।

আলমগীর কবির বলেন, এবারের ফল খুবই সস্তা। বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, কলা। গত বছর যেখানে আম খুচরা বিক্রি হয়েছে, ১২০ টাকা কেজি দরে এবার সেই ফজলি আম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০-৫০ টাকা কেজি।

খুলনা কাঁচাপাকা মাল আড়ৎদার সমিতির সহসভাপতি গৌরাঙ্গ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, অনেক রকমের দেশি মৌসুমী ফলে ভরে গেছে খুলনার বাজার। গুণ, মান ও পুষ্টিতে দেশি এ সব ফলের জুড়ি নেই।

তিনি জানান, এখন বাজারে রয়েছে, নানা জাতের আম, লিচু, আনারস, কাঁঠাল, জামরুল ও কালো জাম।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর ও নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, লকনা আম ট্রাক ভরে খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ ফলের আড়ৎ কদমতলায় আসছে।

গৌরাঙ্গ সাহা জানালেন, খুলনার কদমতলায় ৫০টি ফলের আড়ৎ  রয়েছে। এখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুইশ মেট্রিক টন আম আসে। আড়ৎ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সবচেয়ে ভালো আম এক হাজার ২শ থেকে এক হাজার ৩শ টাকায় মণ বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া শ্রেণিভেদে ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরেও মণ বিক্রি করা হচ্ছে।
 
তিনি জানান, এবার সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়েই সর্বসাধারণ ফল কিনছেন।

নগরীর তারেরপুকুর পারের খুচরা ফল বিক্রিতা মো. নুরু জানান, প্রকার ভেদে খুচরা প্রতি কেজি আম ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে, ৩০ থেকে ১০০ টাকা পিস দরে।
 
তিনি জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ফলের দাম খুবই কম। সে কারণে সব শ্রেণির ক্রেতারা আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ মৌসুমী ফল কিনছেন। শুধু বাজারে নয়, মধুমাসের নানান ফল নিয়ে ফেরিওয়ালারাও ব্যস্ত মাথায় করে, ঠেলাগাড়িতে, ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রি করতে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৫
এমআরএম/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ