ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শব্দ দূষণ

মানসিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৫
মানসিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: শব্দ দূষণ একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। ক্রমাগত শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে যায়, ফলে এক সময় মানুষ স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না।

বিশেষ করে এতে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় ও তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে।

বর্তমানে ঢাকা নগরীতে শব্দ দূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার ফলে এমনই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এ শহরের শিশুরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত শব্দের মাত্রা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই মাত্রা বিরাজ করছে কয়েকগুণ বেশি। শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আইন থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
 
শব্দ দূষণের কারণ
পরিবেশেবাদী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণের প্রধান কারণগুলো হলো- যানবাহনের জোরালো হর্ন ও ইঞ্জিনের শব্দ, যানবাহন চলাচলের শব্দ, বিভিন্ন নির্মাণ কাজের শব্দ, মেশিনে ইট ও পাথর ভাঙার শব্দ, ভবন ভাঙার শব্দ, কলকারখানা থেকে নির্গত শব্দ, গ্রিলের দোকানে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, নির্বিচারে লাউড স্পিকারের শব্দ, অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ আওয়াজে গান বাজানোর শব্দ, উড়োজাহাজের শব্দ ইত্যাদি।

শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শব্দ দূষণ শিশু,  গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কারণ। এর ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আকস্মিক উচ্চ মাত্রার শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশীর সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়াও শ্রবণশক্তি কমে যায়, এমনকি বধির হওয়ার মতো অবস্থারও সৃষ্টি হতে পারে, মাথা ব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ, মস্তিষ্কের রোগও হতে পারে।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দের মাত্রা রাত ও দিনে ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবেলের মধ্যে থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে ২০০৬ সালে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করে। এতে এলাকা ভিত্তিক শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে, নীবর এলাকায় দিনে ৪৫ ডেসিবল ও রাতে ৩৫ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
এ বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। পরবর্তীতে একই অপরাধে ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান যুক্ত হয়েছে।
 
কিন্তু বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা যায়, শব্দ দূষণের মাত্রা ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৮৬ ডেসিবল থেকে ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত রয়েছে।
 
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা প্রণয়নের পর ২০০৭ সালে রাজধানীতে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছু দিনের মধ্যে সেই উদ্যোগে সরকার শিথিলতা দেখায়।
 
পরে এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা দেখা না গেলেও পরিবেশে বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ঢাকা মহানগরে শব্দ দূষণের ওপর গত দেড় বছর আগে (২০১৩ সালের নভেম্বর) একটি জরিপ করে।
 
এ জরিপে দেখা যায়, নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা ৭৫ থেকে ৯৭ ডেসিবল, যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণের বেশি। আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা ৭৬ থেকে ৮৭ ডেসিবল যা দেড়গুণেরও বেশি। শিল্প এলাকায় এ মাত্রা ৭৩ থেকে ১০২ ডেসিবল যা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দেড়গুণের বেশি। বাণিজ্যিক এলাকায় এ মাত্রা ৭১ থেকে ১০৭ ডেসিবল, এখানেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে দেড়গুণ বেশি।
 
এ জরিপের মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন তাদের মন্তব্য বিশ্লেষণে বলেছে, প্রাপ্ত ফলাফলে শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এভাবে শব্দের দূষণ চলতে থাকলে রাজধানীতে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়বে এবং তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে।
 
পরিবেশে বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় শব্দ দূষণ নিয়ে পবা একটি জরিপ করেছে। এতে দেখা যায়, রাজধানীতে শব্দ দূষণের অবস্থা ভয়াবহ।
 
তিনি বলেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে শুধু পরিবেশ অধিপ্তরের একার পক্ষে সম্ভব না। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে।
 
ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকনোমিক্সের চাইল্ড ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল রিলেশন বিভাগের প্রধান ফরিদা আকতার বলেন, শব্দ দূষণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিনিয়ত উচ্চ মাত্রার শব্দের কারণে শিশুরা কানে কম শোনা, লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা ভুগতে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে এক সময় তারা বধির ও মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পরার ঝুঁকি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৫
টিএইচ/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ