ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বেহাল দশায় চিড়িয়াখানা-২

সীমানাপ্রাচীর নেই, দুর্বৃত্তদের অবাধ আনাগোনা

জান্নাতুল ফেরদৌস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৫
সীমানাপ্রাচীর নেই, দুর্বৃত্তদের অবাধ আনাগোনা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মিরপুর চিড়িয়াখানার দু’টি লেকের চারপাশে সীমানাপ্রাচীর বলে কিছু নেই। দুর্বৃত্তরা তাই বিভিন্ন সময় অনায়াসে চিড়িয়াখানার ভেতরে ঢুকে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায় বলে অভিযোগ আছে।



দর্শনার্থীদের বিরক্ত করা থেকে হামলা, ছিনতাই, লাঞ্ছিত করাসহ নানান অপকর্ম করে বেড়ায় তারা।

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, যথেষ্ট লোকবল না থাকার কারণে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে।  

চিড়িয়াখানার ভেতরের ব্যবসায়ীরা জানান, চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, দু’টি লেকের একপাশেও সীমানাপ্রাচীর না থাকা। দক্ষিণ দিকের লেক দিয়ে খুব সহজেই চিড়িয়খানার ভেতরে ঢোকা যায়।

চিড়িয়াখানার ভেতরের চটপটি-ফুচকার দোকানদার সাগর বাংলানিউজকে বলেন, সীমানাপ্রাচীরের সমস্যা বহুদিনের। ঊর্ধ্বতনরা বদলি হয়ে আসেন আর চলে যান। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে কেউই সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেন না।

শুধু লেকের পাশেই নয় চিড়িয়াখানার লাগোয়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক পাশ দিয়ে খুব সহজেই ভেতরে ঢোকা যায় জানিয়ে সাগর আরও বলেন, দুর্বৃত্তরা অপরাধ সংঘটিত করে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ওইদিকের রাস্তাটাকেই বেশি নিরাপদ মনে করে।

এছাড়াও সীমানাপ্রাচীর না থাকায় সহজেই আশপাশের এলাকা ও বস্তির বর্জ্য এসে দূষিত করছে লেকের পানি। এতে চিড়িয়াখানার চারপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তাছাড়া এসব দূষণের ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে আনা জীবজন্তুর অসুখ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। দুর্বৃত্তরা বর্শি ও জাল ফেলে লেকের চাষ করা মাছ শিকার করে নেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। সব অপকর্মই চলে কতৃর্পক্ষের চোখের সামনে। অভিযোগ আছে, এসব অপকর্মের সঙ্গে চিড়িয়াখানা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

এতোটা অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর যখন চিড়িয়াখানার পরিবেশ, তখন কর্তৃপক্ষ পশুপাখিদের জীবন বাচাঁতে মোড়ের পাশে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড টাঙিয়েই নিজের দায়িত্বপালন শেষ করেছেন। গালভরা বুলির বাইরে কাজের কাজ তারা কিছুই করছেন না। এর জন্য অজুহাতেরও কমতি নেই কোনো।
চিড়িয়াখানার ভেতরের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানালেন, লেকের পাশে দুর্বৃত্তরা ঘাপটি মেরে বসে থাকেন। যখনই চিড়িয়াখানার কোনো কর্মী নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে যান, তখন তারা ঢিল ছুঁড়তে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, এর আগেও এরকম কিছু ঘটনা  ঘটেছে। কিন্তু টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। তারা সব সময়ই দেখেও না দেখার ভান করেন। নিজেদের কাজ ফেলে তারা প্রজেক্টের আশায় হাত গুটিয়ে বসে আছেন। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে চিড়িয়াখানায় দুর্বৃত্তদের প্রভাব কমবে না।
এসব অপরাধের পেছনে পাশের বস্তির বখাটেরা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন চিড়িয়খানার তথ্য কর্মকর্তা খুরশীদ আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরাধ যাতে কম হয় সেজন্য তিনবার মন্ত্রণালয়ের নোটিশ এনে লেকের পাশের বস্তি উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। কয়েকদিন পার হলেই আবার যেই সেই। তারা একই কর্মকাণ্ড ঘটাতে থাকেন।

এ সম্পর্কে চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা অলিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ২০ জন আনসার ও ৩০ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু চিড়িয়াখানার মোট নিরাপত্তাকর্মীর পদ ৪৫টি। ৪৫ জন নিরাপত্তাকর্মীও চিড়িয়াখানার এতো বিশাল এলাকার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ ৪৫টি পদের ১৫টিই খালি পড়ে আছে। এজন্য বাইরে থেকে আসা দুর্বৃত্তদের হাতেনাতে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

সীমানাপ্রাচীর না থাকা চিড়িয়াখানার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি -স্বীকার করে চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এটি চিড়িয়াখানার অনেক বড় সমস্যা। মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ সম্পর্কিত বিলও পাশ হয়ে গেছে। আশা করছি, জুন মাসেই সীমানাপ্রাচীরের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০৫ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৫
জেএম/আরএম

** খাঁচার পর খাঁচা শূন্য! নতুন প্রকল্পের দোহাই!!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ