ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডেভিড বার্গম্যানকে সাজা

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল

ঢাকা: ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের জরিমানা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া ৫০ বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল, তারা তাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে এক বিবৃতিদাতা ট্রাইব্যুনালে স্বীকার করেছেন।

২৩ বিবৃতি দানকারীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি করা রুলের শুনানিকালে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিশিষ্ট নাগরিক শহিদুল আলম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন।



রুল পাওয়া ২৩ জন হলেন- মাসুদ খান, সাংবাদিক ও লেখক আফসান চৌধুরী, অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মাদ, সঙ্গীতশিল্পী আনুশেহ আনাদিল, সংস্কৃতিকর্মী লুবনা মারিয়াম, অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, অ্যাডভোকেট এ এ জিয়াউর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নারী অধিকারকর্মী শিরিন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. সি আর আবরার, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. বিনা ডি কস্টা, নৃ-বিজ্ঞান গবেষক রেহনুমা আহমেদ, আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম, সংস্কৃতিকর্মী লিসা গাজী, ড. জরিনা নাহার কবির, আলাল ও দুলাল ব্লগের সম্পাদক তীব্রা আলী, লেখক শবনম নাদিয়া, লেখক মাহমুদ রহমান, নৃ-বিজ্ঞানী দেলোয়ার হোসেন, আলী আহম্মেদ জিয়াউদ্দিন  ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ এ্যানি।

আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১ এপ্রিল এ রুল জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২৯ এপ্রিল ওই ২৩ জনের মধ্যে ২১ জন রুলের লিখিত জবাব দেন। ১৫ জন সশরীরে হাজির হয়ে ও বিদেশে থাকা বাকি ৮ জনের মধ্যে ৬ জন ডাকযোগে রুলের জবাব দেন। হাজির থাকা ১৫ জনের মধ্যে ১০ জনের পক্ষে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ও ২ জনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম জবাব দাখিল করেন। বাকি ৩ জন জবাব দাখিল করে নিজেরাই শুনানি করবেন বলে জানান।

এরপর গত ৬ মে, ১১ মে ও বৃহস্পতিবার (১৪ মে) তিনদিনের শুনানিতে অভিযুক্ত ১০ জনের পক্ষে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান এবং ২ জনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও রেহনুমা আনাম শুনানি করেন। ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শিরিন হক ও ড. শহীদুল আলম- এ তিনজন নিজেরাই শুনানি করেন। বাকি ৮ জন বিদেশে আছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন ট্রাইব্যুনালের রুলের জবাবে তাদের বক্তব্য ডাকযোগে পাঠিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।    

শুনানি শেষে আগামী ১০ জুন এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করে রুল পাওয়া ২৩ জনের মধ্যে দেশে অবস্থানরতদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হতে বলেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
 
শেষ দিনের শুনানিতে শহিদুল আলম বলেন, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, এ বিবৃতি প্রদানকালে আমাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল, দায়িত্বহীনতা ছিল।
তিনি বলেন, আমি একজন ব্লগার। আমার প্রতি মৃত্যুর হুমকি রয়েছে। তারপরও আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে চাই। বাকস্বাধীনতার (ফ্রিডম অব স্পিস) চেতনায় আমরা এ বিবৃতিতে সমর্থন দিয়েছি। আমরা বাকস্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছি।

এর আগে লেখক রেহনুমা আহমেদ ও আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম।

তার কাছে আদালত জানতে চান, সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে সাজা দেওয়ায় তারা এতো উদ্বেগ কেন প্রকাশ করলেন? এ উদ্বেগের কারণটা কি?

উত্তরে তিনি বলেন, ডেভিড বার্গম্যানকে দেওয়া সাজার বিষয়ে  আমরা ডিফেন্স করিনি। তবে বিষয়টি অন্যভাবে আসা উচিত ছিল।  

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ফ্রিডিম একপ্রেসের ওপর আপনারাতো দেশ-বিদেশের অনেক উদাহরণ দেখিয়েছেন। কিন্তু আপনারা এতো উচ্চ দায়িত্ববোধ সম্পন্ন ব্যক্তি হয়েও দায়িত্বহীনতার পরিচয় কেন দিলেন?

বিবৃতিতে কি বলা হয়েছে তা কি আপনারা দেখবেন না?

এ সময় আইনজীবী আক্তার ইমাম বলেন, মাননীয় আদালত, অনেকেতো বিবৃতি দেখেনও নাই, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মনে হয় পড়েনও নাই। তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচও বিবৃতি দেয়।

এরপর নারী অধিকার কর্মী শিরিন পারভীনের দাখিল করা জবাব দেখে আদালত অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল।

শিরিন হক তার জবাবে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতির সম্পূর্ণ নাম না লেখে বিচারপতিত্রয় লেখায় আদালত বলেন, বেয়াদবির একটা সীমা আছে।

বিচারপতিত্রয় লেখেছেন কেন? আইনজীবী না নিয়ে নিজে শুনানি করতে এসেছেন, কিন্তু কোর্টকে কিভাবে অ্যাড্রেস করতে হয়, তাতো জেনে আসবেন। এভাবে কোর্টকে কেউ অ্যাড্রেস করে? নাম লিখলে তিনজনের পূর্ণ নাম লেখতে হয়। আইনজীবীরা কিভাবে করেন, সেটা জানতে হবে। পরে শিরিন হক এ বিষয়ে দু:খ প্রকাশ করলে ট্রাইব্যুনাল তার জবাব গ্রহণ করেন।

এ সময় উপস্থিত বিবৃতি প্রেরণকারী হানা শামস আহমেদকে ডেকে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি প্রথম আলোতে যে বিবৃতি পাঠিয়েছেন তাতে তো দুইজন অস্বীকার করছেন। হানা শামস বলেন, মেইলের মাধ্যমে সবাই আমাকে কনসেন্ট দিয়েছেন।

আদালত বলেন, আপনারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, মাননীয় আদালত, বাংলা ও ইংরেজি বিবৃতির মধ্যে কি পার্থক্য আছে তা আপনারা দেখবেন। তারপরও আমরা বলছি, বাংলা বিবৃতির মধ্যেও আদালতের মর্যাদাহানির প্রভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, বিবৃতিদাতারা ব্যক্তিগতভাবে স্বনামধন্য হতে পারেন। কিন্তু এখন যেহেতু আদালতে বিচার হচ্ছে, তাহলে সেটি আদালতের দেখার বিষয় নয়।

তুরিন আফরোজ বলেন, বিবৃতিদাতারা রায় পড়েননি, রায় নিয়ে গবেষণাও করেননি। এর মাধ্যমে তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের এ দায়িত্বহীনতার কারণে যদি এ কোর্টের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় তাহলে তার দায়িত্ব কে নেবে?- এমন প্রশ্ন করেন রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোয় ‘বার্গম্যানের সাজায় ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ’ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়েছিল, এ রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

এ প্রতিবেদন নজরে এলে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোকে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ওই বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এরপর ১৪ জানুয়ারি বিবৃতি দানকারী ৫০ বিশিষ্টজনের নাম-পরিচয় ও তাদের বর্তমান অবস্থানস্থল সম্পর্কে লিখিতভাবে জানান ড. শাহদীন মালিক। এর আগের দিন ১৩ জানুয়ারি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ৫০ বিশিষ্টজনের স্বাক্ষরিত বিবৃতির মূল কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রথম আলো। এছাড়া বিবৃতিটি প্রথম আলোর মেইলে ই-মেইল করে পাঠানো হয়েছিল লেখক ও সংগঠক হানা শামস আহমেদেরেই-মেইল থেকে। প্রথম আলো হানা শামস আহমেদের সম্পর্কেও জানায় ট্রাইব্যুনালকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
এজেডকে/এএসআর

** ২৩ জনের বিষয়ে আদেশ ১০ জুন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ