ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ফখরুলের অপেক্ষায় খালেদা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৫
ফখরুলের অপেক্ষায় খালেদা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঢাকা: টানা চার মাস ধরে কারাগারে আটক দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির প্রহর গুণছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন এই সহকর্মীর অভাববোধ করছেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের অনুপস্থিতির কারণেই দলের নীতিনির্ধারনী ফোরাম ও ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডাকতে দেরি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
 
দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও গুলশান কার্যালয়ে দায়িত্বপালনরত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
 
সূত্রমতে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরের দিন ২৯ এপ্রিল আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফর উল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, শওকত মাহমুদ, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, কবি আব্দুল হাই সিকদার দেখ‍া করতে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যান।
 
ওই দিন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতারা খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চান, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ইস্যু করে নতুন কোনো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে কি না। জবাবে খালেদা জিয়া সাফ জানিয়ে দেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আটক শীর্ষ নেতারা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো কর্মসূচি দেওয়ার ইচ্ছা তার নেই।
 
গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়ার এক কর্মকর্তার উদ্দেশে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ বলেন, ম্যাডাম তো ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য ‘অস্থির’ হয়ে গেছেন। তিনি (ফখরুল) বের না হওয়া পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন না ম্যাডাম।
 
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার (০৭ মে) একাধিকবার ফোন দিলেও এই মুহূর্তে লন্ডনে অবস্থানরত শওকত মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।  
 
দলীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার (২ মে) গুলশান কার্যালয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াসহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠককেও নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের চেয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির বিষয়টিতে বেশি জোর দেন খালেদা জিয়া।
 
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন ৩ জন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থবির হয়ে পড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনার জন্য খালেদা জিয়া চান যত দ্রুত সম্ভব দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্ত করে আনতে। আইনজীবীদের তিনি (খালেদা) বার বার নির্দেশ দেন ফখরুলের মামলাগুলো যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হয়। শুনানির পরবর্তী তারিখেই যেন তার (ফখরুল) জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আটক নেতাদের মুক্তির ব্যাপারে ম্যাডাম আইনি লড়াইয়ের তাগিদ দিয়েছেন। দলের সাংগঠনিক কাজে গতি আনতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জামিনের বিষয়টিতে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আটক নেতাদের মুক্ত করে আনতে।
 
সূত্রমতে, কেবল দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেই নয়, ঢাকায় অবস্থানরত দুই জন বিদেশি কূটনীতিক সম্প্রতি দেখা করে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি বা করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে খালেদা জিয়া তাদেরকেও জানান, দলের মহাসচিবকে মুক্ত না করা পর্যন্ত নতুন কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছেন না তিনি। ফখরুলসহ আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তির পর নীতিনির্ধারণী ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত কঠোর কর্মসূচি না দিলেও বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণমিছিল, গণঅনশন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা ছিলো খালেদা জিয়ার।
 
কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কারাগারে থাকায় এসব কর্মসূচিও দিতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। কারণ, নিজের উপস্থিতির পরও যদি কর্মসূচিগুলোতে কাংক্ষিত লোক সমাগম না হয়, তাহলে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা সাধারণ মানুষের কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করেন খালেদা জিয়া। তাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মুক্ত করে এনেই পরবর্তী কর্মসূচিতে যেতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন।
 
দলীয় সূত্র মতে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য নেতাদের ওপর খুব বেশি আস্থা রাখতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। বিশেষ করে সম্প্রতিকালের আন্দোলনে শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় যারপরনাই হতাশ খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্থালাভিষিক্ত হওয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছেন তিনি। তাই তাকে (ফখরুল) কারাগারে রেখে দলের সাংগঠিনক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালনে খুব একটা আগ্রহ নেই বিএনপি প্রধানের।
 
এ ব্যাপারে জানতে  চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দলের সব নেতাই বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সহকর্মীদের মধ্যে কাউকে বেশি গুরুত্ব দেন বা কম গুরুত্ব দেন-এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। তবে সাংগঠনিক প্রয়োজনেই হয়তো এই মুহূর্তে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভাবটা তিনি (খালেদা জিয়া) বেশি বোধ করছেন।
 
বাংলাদেশ সময়:  ০৮০৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ