ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

নিরলস চেষ্টা হাসপাতালে

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
নিরলস চেষ্টা হাসপাতালে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে: ত্রি-ভূবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে ভিড় লেগেই রয়েছে। ভূমিকম্পের পর (২৫ এপ্রিল) একটি বিছানাও আর খালি হয়নি।

হাজার সীমাবদ্ধতার মধ্যে আহতদের সুস্থ করতে নিরলস কাজ করে চলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সব তদারকি করছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাম ভান্ডারী।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দেশে ৭ হাজার ৬৭৫ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। এর মধ্যে বিদেশি ছিলেন ৬৬ জন। আর এ হাসপাতালে ৩০৩ জন মৃতের ৩১ জনকে এখনো আত্মীয়রা নিতে আসেননি। হয়তো দুয়েক দিনের মধ্যেই মরদেহগুলো হস্তান্তর হয়ে যাবে।
 
সেবায় রয়েছেন নেপালের সেনা সদস্যরাও। ২৫ এপ্রিল থেকে হাসপাতালের সামনে স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন অল্পবয়সী কয়েকজন ছেলেমেয়ে।
 
তাদের অন্যতম সুহেশ কাটেল বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমদিকে তাঁবুতেও রোগী রাখতে হয়েছে। ডিসচার্জ ও রেফার হওয়ার পর এখন বাকিরা বিছানা পেয়েছেন। ভূমিকম্পের শিকার রোগীদের ভিড় লেগেই রয়েছে।  
 
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৫০ হাজার রোগীকে তারা পানি, কাপড়সহ প্রয়োজনীয় টুকটাক সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেসব রোগী আসেন, তারা খুবই দরিদ্র। তাদেরকে এসব সহযোগিতা দেন তারা।
 
অপর সদস্য সমিতা মর্গ বলেন, প্রথমদিকে জরুরি বিভাগে ভয়াবহ অবস্থা ছিল। অনেক রোগী, খুব অদ্ভূত অবস্থা হয়ে পড়েছিল তখন। সবাই দিশেহারা ছিল। এখন কিছুটা ভালো হচ্ছে।
 
বিভিন্ন মানুষের দেওয়া সহযোগিতার সামগ্রী এক করে এখানে রোগীদের বিতরণ করেন তারা।
 
সমিতা মর্গ বলেন, এখানে প্রচুর রোগী ভর্তি রয়েছে। সবাই এমনভাবে আহত যে, সারাজীবন মানসিক ও শারীরিক ধকল একটু হলেও বয়ে বেড়াতে হবে।

আর এক সদস্য সুষমা শ্রেষ্ঠ বলেন, কেউ মাথায় আঘাত নিয়ে ভর্তি, কারও হাত বা পা ভেঙেছে। কেউবা মুখ ও দাঁতের ভেতরের দিকে আঘাত পেয়েছেন।
 
তিনি বলেন, এখনো ‘ডেডবডি’ বের করতে দেখি। বড় আঘাত পেয়েছেন যারা, তাদের অনেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন। বাকিদের বেশিরভাগই জানেন না কতদিন থাকতে হবে বা এরপর কোথায় যাবেন।
 
১৪ বছরের কিশোরী প্রিয়া বিকো। হেতড়া এলাকায় বাড়ি। চেহারা দেখে বোঝা যায়নি, চাদরের ভেতরে বাম পা’টি নেই। কেটে ফেলা হয়েছে। কারণ ভূমিকম্পে ঘরের মোটা কাঠটি তার ছোট্ট পায়ে এসে পড়ে। মাথায় হাত দিয়ে ক্ষীণস্বরে প্রিয়া বলে, ইহাপারভি চোট লাগা।
 
মাথার তালুতে সেলাই দেখা গেল বেশ কয়েকটি।
 
হেতড়া স্কুলে নবম শ্রেণীতে সবেমাত্র ক্লাস শুরু হয়েছে তার। একটি পা কেটে ফেলায় স্কুল যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় প্রিয়ার মা।
 
তিনি বলেন, ‘পড়নে লিখনেমে কিতনা আচ্ছা হ্যায় মেরি লাড়কি। আব উসকি ক্যায়া হোগা, ক্যায়সে যা পায়েগী ইস্কুল (পড়ালেখায় কত ভালো ছিল আমার মেয়ে! এখন কী হবে? কীভাবে যাবে স্কুলে’।
 
মাঝবয়সী উমা শর্মা। মাথায় বড় আঘাত পেয়েছেন, হাত ভেঙেছে, ঠোট ও ডান চোখের উপরে কেটে গেছে। অসংখ্য সরু সেলাই নিয়ে কথা বলার অবস্থা নাই তার।
 
স্বামী উমেশ শর্মাকে ইশারায় বলেন, উমেশ সেটি ব্যাখ্যা করেন।
 
উমেশ জানান, ভূমিকম্প টের পেয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হতে চায় উমা। কিন্তু তার আগেই তার গায়ে ভেঙে পড়ে ঘর।
 
তিনি জানান, উমার মাথার সেলাই পেকে গেছে। সেগুলো পরিষ্কার করে দেখবে ডাক্তার। অবস্থা বেশি খারাপ দেখলে হাসপাতালেই থাকতে হবে আরও দীর্ঘদিন।
 
সিন্দুলী গ্রামের তুলসা কাফলে। পাশের বাড়ির দেয়াল ভেঙে তার কোমর ও পিঠের হাড়ে চিড় ধরিয়ে দিয়েছে। জানেন না, কবে ছাড়তে পারবেন হাসপাতাল।
 
ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এ পর্যন্ত ভূমিকম্পের ভিকটিম ৪৯ জন নারী রোগী পেয়েছেন এ একটি ওয়ার্ডেই। ২৯ জন ডিসচার্জ ও ট্রান্সফার হলেও বাকিরা রয়েছেন।
 
বাম ভান্ডারী বলেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হাজার নেপালীর ঠিকানা এখন হাসপাতাল। ঘর-বাড়ি হারানো আহত মানুষগুলো বিছানায় শুয়ে এটাও ভাবছেন, ডিসচার্জ হয়ে কোথায় যাবেন।
 
‘যাই হোক, চেষ্টাতো করছে সবাই। রাতদিন খাটছে। যতজনের উপকার হয়, সেটাই সার্থকতা’ – বলেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
এসকেএস/জেডএম

** ঘর বানাই দৌ, গোরি খানে দৌ
** জীবন এখানে এমন!
** বিধ্বস্ত নেপালে বাংলাদেশি সংবাদকর্মীরা
** শোকের ১৩ দিন, তবু জীবনের জয়গান
** নিস্তব্ধ পশুপতি, ভিড় কেবল চিতাঘাটে
** আড়ালেই ঝুরঝুরে নিম্বু-ভূতুড়ে ধর্মস্থালী
** দরবার স্কয়ার এখন তাবুর স্কয়ার
** বিমানবন্দর থেকে বেরুতেই নাকে লাশের গন্ধ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ