ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এগুচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ

ঘাটে ভিড়েছে ড্রেজার-ক্রেন, আসছে মালামাল

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪
ঘাটে ভিড়েছে ড্রেজার-ক্রেন, আসছে মালামাল ছবি : নাজমুল হাসান/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মাওয়া ঘাটে পৌঁছুতে তখনও মিনিট দশেক বাকি। চোখে পড়লো কন্টেইনারবাহী ট্রাক।

কন্টেইনারে কি আছে তা জানা গেলো একটু পরে যখন ট্রাক সরাসরি এসে থামলো পদ্মার পাড়ে। এবার নামছে ট্রাকের মাল। নিরাপত্তা হেলমেট মাথায় সতর্ক যত্নে লোহা-ইস্পাত-স্টিলের মালামাল নামাচ্ছে শ্রমিকরা। আর পদ্মার ঢেউ ডিঙিয়ে এসে ঘাটে ভিড়ে আছে বড় বড় ড্রেজার-ক্রেন।

এই চিত্র বলে দেয় কাজ শুরু হয়ে গেছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর। পুরোদমে কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মব্যস্ততায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ সেতুর রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মার চরে ঘুরে মূল সেতুর কাজ শুরুর নানামুখী প্রস্তুতি ও তৎপরতা দেখা গেছে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক, নদী শাসনের কাজ পুরোদমে চলছে।

মাওয়া-জাজিরা ঘুরে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রতিদিনই কন্টেইনারভর্তি যন্ত্রপাতি ও মালামাল পদ্মার তীরে আসছে। শিগগিরই পরিবর্তনের চিত্র চোখে পড়বে মানুষের।

এর আগে সকালে মাওয়া ঘাট পৌঁছে পরিবর্তনের চিত্র চোখে পড়া শুরু হয়। যে মাওয়া ঘাট ব্যস্ত থাকে নানা চাঞ্চল্যে এখন সেখানে তার লেশমাত্র নেই। শত শত দোকান রেস্টুরেন্ট উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে চলছে সেতু ভিত্তি (পাইল) বসানোর প্রাক মাটি পরীক্ষার কাজ।

মূলসেতুর ভিত্তি গড়ে তুলতে চারদিন হলো মাওয়া ঘাট শিমুলিয়ায় স্থানান্তর করা করে নেয়া হয়েছে। বাবু মিয়া নামে একজন দোকানদার সর্বশেষ তার দোক‍ানটি সরিয়ে নিচ্ছেন।

এসময় তিনি জানান, ব্রিজের কাজের জন্য মাওয়া ঘাটে প্রায় তিনশ’ দোকনপাট তুলে দেয়া হয়েছে। তিনিও সরে যাচ্ছেন। এখন সেখানে শুধু সেতু সংশ্লিষ্ট লোকজনই যাতায়াত করছেন।

আগের মাওয়া ঘাট ঘিরে এখন যে ব্যস্ততা দেখা যায় তা শুধু ব্রিজের। শনিবারও চলছিলো মাটি পরীক্ষার কাজ। এই ঘাটের উপর দিয়ে যাবে পদ্মাসেতু। গত ১ নভেম্বর থেকে মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। পদ্মা নদীর কয়েকটি স্থানে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। এরপরই শুরু হবে পাইলিংয়ের কাজ।  

মাওয়া ঘাটে কর্মরত প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সেতু নির্মিত হবে। ১৫০ মিটার পর পর বসানো হবে পিলার। এ ছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পাড়ে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরো ২৪টি পিলার বসানো হবে। মোট ৬৬টি পিলারের জন্য ৬৬ পয়েন্টে মাটি পরীক্ষা করা হবে।

এরই মধ্যে চায়না মেজর ব্রিজের জরিপ দল সেতুর ২৬৬ পিলারের মধ্যে মাওয়া পয়েন্টে ৬৬টি পিলারের ট্রায়েল পয়েন্ট চিহ্নিত করার কাজ শেষ করেছেন। অক্ষাংশ- দ্রাঘিমাংশ মেপে পিলারের স্থান চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। এখন এসব স্থানের মাটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় গভীরতা থেকে অত্যাধুনিক প্রকৌশল যন্ত্রের সাহায্যে তোলা হবে মাটি। দেখা হবে নদীর তলদেশ ও নদীতীরের মাটির স্তরগুলোর গঠন।

নমুনা মাটি পরীক্ষা শেষে মাটির গঠন প্রকৃতি বিচার করে চূড়ান্ত করা ডিজাইনে পদ্মার তলদেশের মাটির বুক চিরে শত শত ফুট নিচে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হবে সেতুর মূলভিত্তি (পাইল)। ডিজাইন অনুযায়ী একই স্থানে স্থাপন করা হবে বহু পাইল। পাইলগুলো প্রায় তিনশ' ফুট নিজে পা রেখে উঠে আসবে মাটির উপরে। নির্ধারিত উচ্চতায় এসে দলবেঁধে একটি মোটা স্টাব (পাইল ক্যাপ) মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। মূলত সেই স্টাবেই বসবে কোটি কোটি মানুষের এক একটি স্বপ্নের পিলার।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত চার শিপমেন্টে সেতু নির্মাণের কয়েক হাজার যন্ত্রপাতি দেশে এসেছে। শিপমেন্টগুলো চট্টগ্রামে খালাস হয়ে কিছু আসছে নদীপথে, কিছু কন্টেইনার ট্রাকে। আর মূল সেতুর জন্য সিঙ্গাপুর, চীন ও জার্মানিতে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার অংশ বাংলাদেশের পথে রওনা হয়েছে। ডিসেম্বরে মাঝামাঝিতে পদ্মার বুক চিরে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ আরও দৃশ্যমান হবে।

শনিবার দিনভর মাওয়া-জাজিরা ঘাটে পদ্মাসেতুর কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করে সন্ধ্যায় মাওয়া ঘাটের ডাকবাংলোতে বসে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, পাঁচটি প্যাকেজে সেতুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাপ্রোচ রোড এক এর জাজিরা অংশের ২৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোড-২ মাওয়া ঘাট অংশের ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

সার্ভিস এরিয়া ২—এর ২০ ভাগ শেষ আর মূল সেতুর অগ্রগতি শুরু হয়েছে মাত্র। আপাতত মোবিলাইশেজনের কাজ চলছে বলা যায়। সেই হিসেবে এক থেকে দুইভাগ অগ্রগতি হয়েছে মূল সেতুর-বলেন প্রকল্প পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই পদ্মাসেতুর কর্মযজ্ঞ বাড়ছে। ১০ নভেম্বর পদ্মাসেতুর নদী শাসনের চুক্তির পর চায়না, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইকুয়েডরের মালামাল আসা শুরু হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যরা জানান, এখন পযন্ত পদ্মাসেতুর প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর সার্বিক অগ্রগতি ২২ শতাংশ।

আগামী ছয় মাসের মধ্যে মূল সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ সবার চোখে পড়বে। এখন মূল সেতুর নির্মাণকাজ ততোটা চোখে না পড়লেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মূল সেতুর নির্মাণের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাসেতু প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার হাজার ৫২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পে আট হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিপরীতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭৯১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ

welcome-ad