ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলানিউজকে নাছিমা বেগম

ডিজিটাল মাইক্রোক্রেডিট ইতিহাস বদলে দেবে

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪
ডিজিটাল মাইক্রোক্রেডিট ইতিহাস বদলে দেবে নাছিমা বেগম / ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মাইক্রোক্রেডিটের নামে আর দরিদ্র হতে হবে না। এবার সত্যিকারের মাইক্রোক্রেডিট পুরো সমাজটাকেই দারিদ্র্যমুক্ত করবে।

কার্যত দারিদ্র্যের ইতিহাসই বদলে দেবে ডিজিটাল এই মাইক্রোক্রেডিট।
 
এ মন্তব্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগমের। সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধুর গড়ে দেওয়া পথে দারিদ্রমুক্তির এই আশার বাণী শোনান তিনি।

নাছিমা বেগম বলেন, মাইক্রোক্রেডিটের এই ধারণাটি নতুন নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে যে মাইক্রোক্রেডিট শুরু করেছিলেন, তারই পুরো রূপ দেখা যাবে এ ব্যবস্থায়। আর এতে যোগ করা হবে নতুন মাত্রা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রাখতে এই কর্মসূচি চালু হবে অনলাইনে।
 
তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে ‘পল্লীসমাজ সেবা কার্যক্রম’ (আরএসএস) নামে একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে। ওই কর্মসূচিকে এবার অনলাইনভিত্তিক করে দেশের সাত বিভাগে গ্রাম পর্যায়ে সাতটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
 
নাছিমা বেগম বলেন, এই আরএসএস কর্মসূচিটি চালু থাকলেও আগে তা ব্যাপকভাবে চালু করতে পারেনি সরকার। এরই আদলে সমাজে আজ নানা মাইক্রোক্রেডিট চলছে।
 
আগে জানুন আরএসএস কর্মসূচি
দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ‘পল্লীসমাজ সেবা কার্যক্রম’ (আরএসএস) কর্মসূচির আওতায় এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ঋণ পাবেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়। কোনো ধরনের বন্ধকি ডকুমেন্ট ছাড়াই এই ঋণ পাওয়া যাবে। ঋণ নেওয়ার দুমাস পর থেকে কিস্তি শুরু হবে। প্রতি কিস্তিতে মাসে জমা দিতে হবে দুই হাজার দুইশ টাকা।

ক্ষুদ্র ব্যবসার লাভের অংশ থেকে মূল ঋণের ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে ঋণ নেওয়া ওই ব্যবসায়ীকে।

তবে ওই ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে টাকা আদায় করবে না সরকার। লভ্যাংশ থেকেই সার্ভিস চার্জসহ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। লোকসান হলে ওই ব্যবসায়ীকে সময় দিয়েই টাকা উত্তোলন করা হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায় ২০ হাজার টাকার কম নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

বর্তমান ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অনলাইনে চালানো হবে এ প্রকল্পের কার্যক্রম।
     
এবার পড়ুন সমাজকল্যাণ সচিবের সঙ্গে বাংলানিউজের কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ।

বাংলানিউজ: সমাজ পরিবর্তনে এই মন্ত্রণালয়ের নতুন পদক্ষেপ কী?
 
নাছিমা বেগম: অনেক কর্মসূচি আমাদের রয়েছে। নতুন করে কিছু কাজ হাতে নিচ্ছি। এর মধ্যে একটি মাইক্রোক্রেডিট। মাইক্রোক্রেডিট কর্মসূচি অনলাইনে দেওয়া হবে। তা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

দেশে মাইক্রোক্রেডিট প্রথম শুরু করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সমাজ সেবার লক্ষ্য নিয়ে সমবায় ভিত্তিতে আরএসএস প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুই মাইক্রেক্রেডিট শুরু করেন। সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় ওই সময়। সমাজ উন্নয়নের প্রথম এই পদক্ষেপকে মডেল হিসেবে ধরেই সরকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এবার শুরু হবে ভিন্নভাবে। যোগ হবে নতুন মাত্রা।  

পল্লীসমাজ সেবা কার্যক্রম যেটি চালু রয়েছে এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আমরা সাত বিভাগে সাতটি উপজেলাকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়ে এটি চালু করতে চাইছি। অনলাইনভিত্তিক এই কাজটি করা হবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে। ওই সব এলাকা দারিদ্র্যমুক্ত এবং ভিক্ষুকমুক্ত করাও সম্ভব হবে। আমরা তাই দ্রুতই এই কাজটি শুরু করতে করতে চাই।

অনলাইনে ঋণগ্রহীতা তার তথ্য দেখতে পাবেন। কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, কত টাকা জমা হলো, মাঠকর্মীরা ঠিকমতো জমা দিচ্ছেন কিনা তাও জানতে পারবেন। এর পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে অনলাইনভিত্তিক।
 
বাংলানিউজ: প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

নাছিমা বেগম: প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন করা করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় ট্রাস্ট্রি বোর্ডও গঠন করেছি। ট্রাস্ট তার নিজস্ব আঙ্গিকে কাজ শুরু করছে।

নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী তহবিল ১৫ কোটি টাকা। আর চলমান তহবিল ৬ কোটি টাকা। এই সেক্টরে বৃহৎ বরাদ্দ বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
 
প্রতিবন্ধীদের সেবা দিতে অভিভাবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে সরকার। প্রতিবন্ধী বিষয়ক ই-কাউন্সেলিং শুরু করতে যাচ্ছি। যেসব বাবা-মায়েরা প্রতিবন্ধীদের সেবা বিষয়ে জানেন না, তাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশ্নও নেওয়া হবে অভিভাবকদের কাছ থেকে।
 
আগে  ২০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্রকে উপবৃত্তি দেওয়া হতো। বর্তমানে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার করা হয়েছে। আমরা শনাক্তকরণ জরিপ করছি। এরইমধ্যে ১৭ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুরো জরিপ কাজ শেষ হলে দেশের কোন এলাকায় কী ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কতোজন রয়েছে তা জানা যাবে। সে হিসেবে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।

হিজড়ারা লিঙ্গ প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বর্তমান সরকারের সময়। হিজড়াদের উন্নয়নে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। শিশু হিজড়াদের জন্য শিক্ষা ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। হিজড়াদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
 
বাংলানিউজ: সমাজের অবহেলিত শিশুদের উন্নয়নে সরকারের নতুন কোনো পদক্ষেপ আছে কি?   
 
নাছিমা বেগম: শিশুপরিবারের শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে নার্সের সংকট মোকাবেলা এবং অবহেলিত এই শিশুদের পুনর্বাসনে বড় একটি কাজ হবে। তাছাড়া বিদেশে পাঠ‍ানোর মতো প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
 
বাংলানিউজ: আর কোনো উদ্যোগ আছে কি?
 
নাছিমা বেগম: শিশুপরিবারের শিশুরা ভবিষ্যতে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারবে। আমরা এখন থেকেই সেভাবেই প্রশিক্ষণ শুরু করেছি, ভালো কিছু লক্ষও করেছি। এসব অবহেলিত শিশুর পুনর্বাসন ছাড়াও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে তারা ভালো ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি।
 
বাংলানিউজ: সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা কবে?
 
নাছিমা বেগম: রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করবেন। তিনি নিজেও সিনিয়র সিটিজেন। তবে সিনিয়র সিটিজেনদের বিশেষ জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে সবার হাতে তা তুলে দেওয়া হবে। আগামী ১ অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবসে এ ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল।

পরে রাষ্ট্রপতি যেদিন সময় দেবেন সেদিন সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করা হবে।
 
বাংলানিউজ: বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
 
নাছিমা বেগম: বাংলানিউজ এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।  
 

** প্রেসক্রিপশনের ইতিহাস থেকে ফিরছে ওরা
 
** পুরুষরা দুষ্টু

** প্রাথমিকে চ্যালেঞ্জ আছে, ব্যর্থতা নেই

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি-ব্যবসা এর সর্বশেষ