ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গুডবুকে সাঈদ খোকন-রহমতউল্লাহ

ডিসিসিতে রাজনৈতিক প্রশাসক!

সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪
ডিসিসিতে রাজনৈতিক প্রশাসক! সাঈদ খোকন ও রহমতউল্লাহ

ঢাকা: রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। কিন্তু স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, কোন সিটি করপোরেশনে প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা ব্যতীত প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান নেই।

বিষয়টি মাথায় রেখে আইন-কানুন পরীক্ষা করেই সরকার রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আর সম্ভাব্য রাজনৈতিক মেয়র হিসেব প্রয়াত মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ও সংসদ সদস্য একেএম রহমত উল্লাহ এর নামই বেশি আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।
 
সূত্রমতে, কার্যত ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে বিভক্ত করেও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি অর্জন করতে না পারায় সরকার রাজনৈতিক প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে মূলত প্রতিষ্ঠান দু’টিকে আরো কার্যকার করারই কৌশল নিয়েছে।

কেননা, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুয়ায়ী, এখন যাদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয় তারা প্রশাসন ক্যাডারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব)। তারা ছয় মাসের বেশি স্থায়ী হতে পারেন না। এজন্য নগরবাসীর দুর্ভোগ ও জনসমস্যা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে পারেন না। পরিকল্পনা নিলেও বাস্তবায়নের আগেই বদলি হয়ে যান। মানুষের সেবার দিকটি বিবেচনা করে তাই নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

আর বৃহত্তর কল্যাণের কথা মাথায় রেখে এমন লোকদেরই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাব‍া হচ্ছে, যারা দল গুছিয়ে পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনও করতে পারবেন।

আর এ বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগের জন্য দলের গুডবুকে আছেন প্রয়াত মেয়র হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ও সংসদ সদস্য একেএম রহমত উল্লাহ। সাঈদ খোকনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও সংসদ সদস্য একেএম রহমত উল্লাহকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

সিটি করপোরেশনের প্রশাসক পদে রাজনীতিক নিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বাংলানিউজকে বলেন, সরকার সিটি করপোরেশনে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে শুনেছি। তবে, এ ব্যপারে আমি কিছু জানি না।

যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে রাজনীতিকরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ কারণে প্রশাসক পদে রাজনীতিক নিয়োগের চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করার আগে আইন-কানুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অতীতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রশাসক পদে রাজনীতিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সরকারের উচ্চপর্যায়ে সে বিষয়টি নিয়েও পর্যালোচনা চলছে।
 
২০১২ সালের ৩১ মে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক পদে নতুন নিয়োগ দেয় সরকার। ডিসিসি উত্তরের প্রশাসক হন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক শাহজাহান মোল্লা। ডিসিসি দক্ষিণের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিল্লার রহমান। বর্তমানে তাদের কেউই ওই পদে নেই।
 
এর আগে ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় 'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন ২০১১’ চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। তার আগে ১৭ অক্টোবরের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পরে ২৯ নভেম্বর সংসদে 'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) বিল, ২০১১' পাস হয়।

ওইদিন ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভক্ত করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন করা হয়। এর পর ২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর দুই অতিরিক্ত সচিবকে দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
 
পাস করা বিলে ২৫(১) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সব সিটি করপোরেশনে মেয়াদ শেষে পছন্দমতো যে কোন ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সিটি করপোরেশনে প্রশাসকের মেয়াদ হবে ১৮০ দিন, আর পুরনো বা বিভক্ত করা সিটি করপোরেশনে মেয়াদ হবে ৯০ দিন। এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। বিলে এ বিধানটি সংযুক্তির ফলে প্রস্তাবিত আইন অনুসারে প্রশাসক নিয়োগের ৯০ দিনের মধ্যে বিভক্ত হওয়া ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো ভাবনা পরিলক্ষিত হয়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ