বাকৃবি (ময়মনসিংহ): অনুষদীয় সহ-সভাপতি নির্বাচন ও ক্লাস পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিজেদের অন্তঃকোন্দলের জের ধরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সহপাঠীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন সাদায় ইবনে মোমতাজ নামে এক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে (ট্রমা মেডিকেল সেন্টার ও হাসপাতাল) তার লাশ পাওয়া যায়।
নিহত সাদ মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রাজশাহী জেলার বাসিন্দা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোববার (৩০ মার্চ) মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের একটি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার সঠিক সময়েই পরীক্ষা নেবেন বলে ওই অনুষদের শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।
এদিকে, ওই বর্ষের শিক্ষার্থী সুজয় কুমার কুন্ডু (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির আশরাফুল হক হলের সাংগঠনিক সম্পাদক) ও রোকনুজ্জামান রোকন ওই পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। পরে তারা সহপাঠীদের এসএমএস করে পরীক্ষা না দেওয়ার জন্য বলেন। এতে পরীক্ষার দিন মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এ ঘটনায় সাদের সঙ্গে পরীক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার ও ওই বর্ষের শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়।
এ ঘটনার জের ধরে সোমবার সন্ধ্যায় ১৫-২০ জনের একটি দল সাদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশরাফুল হক হলের ২০৫ নম্বর রুমে ডেকে এনে স্ট্যাম্প, লাঠি-সোটা দিয়ে মারধর করেন। এ সময় হাত, পা ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সাদ রক্ত বমি করতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আশরাফুল হক হল থেকে ডাক পেয়ে এক সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে হলে যাই। সেখানে গিয়ে সাদের অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেই।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৯টার দিকে আশরাফুল হক হলের মাস্টার্সের ছাত্র মিজানুর রহমান সাদকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে। পরে মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ড ভিজিটে গিয়ে সাদকে বেডে পায়নি। এর পর সকাল ১১টায় ট্রমা মেডিকেল সেন্টারে তার লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারওয়ার জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
অন্যদিকে, পুত্রশোকে কাতর রাজশাহী নিবাসী সাদের বাবা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচার কখনও হয়নি। তাই আমি কোনো মামলা করবো না এবং তার লাশও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতে দেবো না।
সাদের বন্ধুরা সুজয় ও রোকনকে এ হত্যার জন্য দায়ী করে বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা কোনো প্রকার ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড.মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.মো. শহীদুর রহমান খান বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাদকে মারধর করেছে বলে শুনেছি। সে নিজেও ছাত্রলীগ করতো।
এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুর্শেদুজ্জামান খান বাবু বলেন, অনুষদীয় ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনো-মালিন্যের জের ধরেই তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ভোরের দিকেও সাদ সুস্থ ছিল। কিন্তু পরে কে বা কারা তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় তা জানি না। পরে তার মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাই।
এদিকে প্রকৃত বিষয় উদঘাটনের জন্য মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহসীন আলীকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৪