ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফুটবল

বিশ্বকাপ আয়োজন করে কি লাভের মুখ দেখবে কাতার? 

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
বিশ্বকাপ আয়োজন করে কি লাভের মুখ দেখবে কাতার? 

প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল বিশ্বকাপ। অন্যান্য যেকোনো সময়ের থেকে ফুটবলপ্রেমীরা আরও বুঁদ হয়ে থাকেন সেই সময়ে।

ক'দিন বাদেই কাতারে বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের ২২তম আসর। পৃথিবীজুড়ে ৫০০ কোটিরও বেশি মানুষ চোখ রাখবেন তাতে।

টিকিট ও পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে কর্পোরেট স্পন্সরশিপ, প্রাইজমানি ও প্রচুর পরিমাণের অর্থ ব্যয় হবে টুর্নামেন্টকে ঘিরে। কিন্তু এর বিপরীতে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে তো আয়োজক কাতার?

সরাসরি বললে, এর উত্তর ‘না’-ই আসবে। অতীত ইতিহাস বলছে বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রস্তুতি, হোটেল নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদির পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে আয়োজক দেশ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খরচ করা সেই অর্থ আর ফিরে আসে না।

বিশ্বকাপ নিশ্চিতভাবেই টাকার খনি। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে টিভি স্বত্ব বিক্রি হয়েছিল ৪.৬ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু এর পুরোটাই যায় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার পকেটে।
টিকিট বিক্রির যে কোম্পানি তা শতভাগ ফিফার মালিকানাধীন থাকে। ২০১৮ চক্রে বিপণন খাত ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যে বিক্রি হয়। সেটাও নিজেদের কাছে রেখে দেয় ফিফা। যদিও টুর্নামেন্টের মূল খরচ তারাই বহন করে। এবার কাতারকে সেজন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলার দেবে তারা। সেখানে ৪৪০ মিলিয়ন ডলার প্রাইজমানিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে ।  

তবে বিশ্বকাপের জন্য অবকাঠামো, হোটেল ও অবকাশ যাপনের সুবিধা, সড়ক ও রেল ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে আলাদাভাবে ২০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে কাতার।  

প্রায় মাসব্যাপী এই টুর্নামেন্টে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে কাতারে। তাই পর্যটন ব্যবসা, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সেই খরচ তুলতে অতিরিক্ত সক্ষমতার প্রয়োজন। কেননা বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনে ব্যয় সাধারণত স্বল্প মেয়াদে উৎপন্ন রাজস্বের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তাই এই সংক্ষিপ্ত সময়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বকাপের সময় হোটেলে রুম ভাড়ার মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কর্মীদের বেতন সেই পরিমাণে বাড়ে না। তাই যাদের টাকা আছে তারাই কেবল টাকা কামাতে পারবেন। বিশ্বকাপ থেকে আসা পর্যটকরা পণ্য, পানীয় বা যা কিছু ক্রয় করে থাকেন; তার একটিও আয়োজক দেশের রাজস্বে যাচ্ছে না। কারণ বিশ্বকাপ বিডিং প্রক্রিয়ায় ফিফা ও তাদের স্পন্সর ব্র্যান্ডগুলোর জন্য প্রচুর ট্যাক্স বিরতির প্রয়োজন। ২০০৬ বিশ্বকাপের বিডের জন্য ২৭২ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স বিরতির দাবি করেছিল জার্মানি।
সাধারণ পর্যটকেরা মূলত আয়োজক দেশে ভিড়, ট্রাফিক ও মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গত ১ নভেম্বর থেকে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত টিকিট না থাকলে কোনো ব্যক্তি কাতারে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই স্বল্প মেয়াদে চিন্তা করলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখেই পড়বে আয়োজক দেশ। কিন্তু কিছু জিনিস আছে যা টাকার চেয়েও বড়।

বিশ্বকাপ আয়োজন করলে পুরো বিশ্বকে নিজের সক্ষমতা দেখানোর সুযোগ থাকে। যাতে করে বড় বড় ব্যবসায়ী এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবলে, কাতার যদি সঠিকভাবে টুর্নামেন্টটি পরিচালনা করতে পারে, তাহলে দেশটির অর্থনীতি আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত করার সুযোগ তৈরি হবে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুন সড়ক ও যোগাযোগ প্রকল্পগুলো দেশকে অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেবে।  

বড় আন্তর্জাতিক স্পোর্টিং ইভেন্টগুলো সামাজিক ভেদাভেদ দূর করে এক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে লোকগুলোকে একত্রিত করে তোলে। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০১৮ শীতকালীন অলিম্পিকের বেলায়। বৈরী সম্পর্ক থাকার পরও সেবার এক ছাতার নিচে ছিল দুই প্রতিবেশি দেশ দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়া।  

এই ইভেন্টগুলো শিশুদের খেলাধুলায় আরও আগ্রহী করে তোলে। যা একটি দেশকে অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়। তাই বিশ্বকাপ আয়োজন করা একটি দেশের জন্য টাকার চেয়েও বেশি গর্বের এবং সম্মানের। একইসঙ্গে প্রচারের উপযুক্ত  মাধ্যমও। কাতারের কাছে নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম নয়। সেজন্য দুই হাত খুলে বিশ্বকে স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
এএইচএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।