ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফুটবল

কলসিন্দুর থেকে বসুন্ধরা কিংসে

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
কলসিন্দুর থেকে বসুন্ধরা কিংসে

নিন্দুকের চোখা মন্তব্য এখন আর শোনা যাচ্ছে না। মেয়েদের সাফ ফুটবল শিরোপার রঙে হয়তো তারাও মিশে গেছে।

এ তো আর নিছকই একটি ট্রফি নয়, একদল অদম্য নারীর জীবনের গল্প। এই অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুরে, যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও মেয়েরা নিয়েছিল ফুটবল দীক্ষা।

এরপর সোনালি এই গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে বসুন্ধরা কিংস ক্লাব। তাদের ফুটবল পেশাদারির ছোঁয়ায় আরো শাণিত হয়েছেন মেয়েরা, সুবাদে সাফ শিরোপায় পূর্ণতা পেয়েছে নারী দলের অর্জন।

নারী ফুটবলের বিপ্লবের শুরু হয়েছিল ধোবাউড়া উপজেলার অখ্যাত কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৩ থেকে ২০১৫—টানা তিনবার বঙ্গমাতা ফুটবলের শিরোপা জেতে স্কুলটি। সাফল্যের কারিগর স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক মফিজ উদ্দিন। সানজিদা, মারিয়া মান্ডা, মার্জিয়া, শামসুন্নাহারদের নিয়েই তাঁদের প্রিয় ‘মফিজ স্যার’ তৈরি করেছিলেন সাফল্যের এক অপূর্ব রসায়ন। টানা তিনবার শিরোপা জয়ের এই কারিগর স্মৃতির সরণিতে হেঁটে বলছেন, ‘সেসব দিন ছিল অন্য রকম। প্রতিবন্ধকতা ছিল নানা রকমের। প্রথমত বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান, এর সঙ্গে মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রতি বিরুদ্ধাচরণ। আজ আর মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বলার লোক নেই। ’

বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টের বৈতরণি পার হওয়ার রেসিপি দিয়ে তো আন্তর্জাতিক সাফল্য আসবে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লড়তে হলে আরো উন্নতি দরকার সানজিদা-মারিয়াদের। সেটা বুঝেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ২০১৬ সাল থেকে চালু করে মেয়েদের আবাসিক ফুটবল ট্রেনিং ক্যাম্প। এর সুফল মিলছিল বয়সভিত্তিক ফুটবলে। কিন্তু হোঁচট খাচ্ছিল সিনিয়র দলে গিয়ে। আগের পাঁচ সাফের মধ্যে মাত্র একবার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশের মেয়েরা। অনুশীলনের পাশাপাশি ঘরোয়া ফুটবলে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দরকার, সেটা ছিল না। ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুটি লিগ হওয়ার পর ছেদ পড়ে। ছয় বছরের বিরতির পর ২০১৯ থেকে ফের শুরু এবং ঘরোয়া ফুটবলের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মেয়েদের তৈরি করে দিয়েছে বড় মঞ্চের জন্য।

সাফ ফুটবলে হাতেনাতে সুফল পেয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও বলছেন, ‘আবাসিক ক্যাম্পের পাশাপাশি ঘরোয়া লিগও আমাদের অনেক এগিয়ে দিয়েছে। মূল দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই দুই বছর ধরে খেলছি বসুন্ধরা কিংসে। এক ক্লাবে একসঙ্গে খেলাটাও আমাদের জাতীয় দলের কম্বিনেশনের জন্য ভালো হয়েছে। ’ গত পরশু নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে খেলা ১৪ জনের (বদলিসহ) মধ্যে ১৩ জনই সর্বশেষ লিগে খেলেছেন বসুন্ধরা কিংসের হয়ে। কেবল মার্জিয়াই খেলেছেন অন্য ক্লাবে।

মেয়েদের ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস যোগ হওয়ার পর গুণগত কিছু পরিবর্তন এসেছে। খেলোয়াড়দের ভালো পারিশ্রমিকের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে পেশাদারির পাঠও। কিংস কোচ আদিতি শরীফাও মনে করেন, ‘ছেলেদের ফুটবলের মতো নারী ফুটবলও কিংস পরিচালনা করে পেশাদারির সঙ্গে। পারিশ্রমিক থেকে শুরু করে তাদের নিয়মিত ট্রেনিং, খাওয়াদাওয়া কোনো কিছুতেই এতটুকু ঘাটতি থাকে না। নিয়মিত না হলেও ট্রেনিং ক্যাম্পে থাকেন অস্কার ব্রুজোন ও ট্রেনার সানচেজ। এ রকম যদি আরো দু-তিনটি ক্লাব থাকত, তাহলে মেয়েদের ফুটবল তরতরিয়ে এগিয়ে যেত। লিগে দেখবেন, রানার্স আপ দলটির সঙ্গে কিন্তু গতবার আমাদের ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লড়াই এবং মেয়েদের ম্যাচ টেম্পারামেন্টের জন্য এ রকম ম্যাচ খুব দরকার। ’

খেলার মাঠে ধারাবাহিক সাফল্যে অত্যাবশ্যকীয় পেশাদারি। সেই পেশাদারির সুতায় বাঁধা পারিশ্রমিক। নারী ফুটবলে রোজগারের সেই পথ খুলে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। অঙ্কটা নারী ফুটবলারদের জন্য আকর্ষণীয় বলেই প্রায় পুরো জাতীয় দল খেলে কিংসে। তাই মেয়েদের লিগেও সেরা বসুন্ধরা কিংস।

গত ডিসেম্বরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল জয়ের পর বাংলাদেশ দলকে সংবর্ধনা দিয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রত্যেক সদস্যকে অর্থ পুরস্কারও দেওয়া হয়েছিল। এবার সাবিনা-কৃষ্ণাদের সাফল্যকেও বিশেষভাবে উদযাপন করতে চান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। ‘আমাদের চেয়ারম্যান (আহমেদ আকবর সোবহান) মনে করেন, খেলোয়াড়রাই হলো দেশের সবচেয়ে বড় দূত। এ জন্য সাফজয়ী দলকে আমরা অক্টোবরে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকেই আমাদের মেয়ে ফুটবলারদের পুরস্কৃত করবেন’, গতকাল জানিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান।

কলসিন্দুর থেকে বঙ্গমাতা ঘুরে বাফুফের আশ্রয় আর বসুন্ধরা কিংসের ছায়ায় বেড়ে ওঠা সেই সাবিনা-কৃষ্ণারা আজ ফিরছেন গৌরবের মশাল জ্বালিয়ে। সে আলোয় ভাসবে পুরো দেশ।

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ সময় : ১৩০৪, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।