ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮

রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিএআর’র সফলতা-ব্যর্থতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিএআর’র সফলতা-ব্যর্থতা ...

রাশিয়া বিশ্বকাপে নতুন একাধিক প্রযুক্তি নিয়ে আসে ফিফা। এর মধ্যে ভিএআর সবচেয়ে নতুন। প্রথমদিকে এই পদ্ধতিটি সবার কাছে পরিষ্কার না হওয়ায় কিছুটা সমালোচনায় পড়লেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে ওঠে সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা। 

মূলত মাঠে রেফারির যে সব সিদ্ধান্ত (যেমন- লাল কার্ড, পেনাল্টি, গোল) ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারে, সেগুলো যতোটা পারা যায় নির্ভুল করার জন্যই ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) পদ্ধতি নিয়ে আসা হয় রাশিয়া বিশ্বকাপে। ২০১৬ থেকেই বিভিন্ন টুর্নামেন্টে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও রাশিয়া বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতি বড় কোনো আসরে ব্যবহার করা হলো।

একটি ভিডিও নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রেফারির চারজন সহকারী বসে দু’ডজন ক্যামেরায় বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে তোলা ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেন। মাঠে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে, তারা ইয়ারপিসে রেফারিকে সেই ফুটেজ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। এমনকি রেফারি চাইলে খেলা থামিয়ে মাঠের পাশে বসানো স্ক্রিনে স্লো-মোশনে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের ফুটেজগুলো দেখতে পারেন। চাইলে আগের দেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারবেন। রেফারির নিজের সন্দেহ হলেও সহযোগী ভিডিও রেফারির সহযোগিতা চাইতে পারবেন।

এই পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। যেমন গ্রুপ ‘বি’ এর পর্তুগাল-ইরানের মধ্যকার ম্যাচ। এই ম্যাচে পর্তুগাল পেনাল্টিতে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার সময় ইরানের সায়েইদ এযাতোলাহি পেনাল্টি বক্সে ধাক্কা দেন রেনালদোকে। তখন খেলা চালিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর মাঠের রেফারি এনরিকে কেসেরেস সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। রেনালদোর পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন ইরান গোলরক্ষক।

এই ম্যাচেরই দ্বিতীয়ার্ধে বল দখলের লড়াইয়ের এক পর্যায়ে রোনালদোর ডান হাতের আঘাত লাগে মোর্তেজে পওরালিগাঞ্জির মুখে। ভিএআর থেকে রোনালদোকে হলুদ কার্ড দেওয়া হলেও অনেকের দাবি এটি লাল কার্ডের মতো অপরাধ।

ইনজুরি সময়ে পর্তুগালের ডি বক্সে সরদার আজসউনের নেওয়া হেড সেড্রিকের হাতে লাগলে পেনাল্টির আবেদন করে ইরান। রিভিউ শেষে তাদের দাবিতে সাড়া দেন রেফারি কেসেরেস। বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচ ড্র করে ইরান।

গ্রুপ পর্বে এশিয়ার প্রতিনিধি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় পায় সুইডেন। বলা হয় শুধু ভিএআর পদ্ধতির কারণেই এই ম্যাচে জিতেছে সুইডেন। ম্যাচে পাওয়া একমাত্র গোলটি তারা পেয়েছে পেনাল্টি থেকে। অথচ রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দেননি। পরে ভিএআর পদ্ধতিতে রিপ্লের মাধ্যমে পুনরায় দেখে সিদ্ধান্ত নেন রেফারি। পুরো ম্যাচে দারুণ খেলেও হার মানতে হয় দক্ষিণ কোরিয়াকে।

ভিএআর নিয়ে সন্দেহ ও সমালোচনা এমন পর্যায়ে চলে যায়, ব্রাজিল ফিফার কাছে জবাবদিহিতা চেয়ে বসে। গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচে শুরুটাও ভালো করে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের ১১ মিনিটেই কুতিনহোর গোলে এগিয়ে যায় দলটি।  

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গোল খেয়ে বসে তারা। আর এই গোল নিয়েই ঝামেলার শুরু। গোল দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ডিফেন্ডার মিরান্দাকে ধাক্কা দেয় সুইজারল্যান্ডের স্টিভেন জুবের। শুধু এটিই নয় ডি বক্সের মধ্যে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকেও ইচ্ছে করেই ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করে ব্রাজিলীয়রা। ভিএআরের আবেদনও করে। কিন্তু দু’টি ঘটনাতেই রেফারি সাড়া দেয়নি। তারা ফিফা বরাবর প্রশ্ন করে, ভিএআর পদ্ধতি থাকতেও কেনো তা ব্যবহার করা হয়নি?

তবে ভিএআরের প্রথম সফলতা পায় ফ্রান্স। এ প্রযুক্তিতে প্রথম পেনাল্টি সুবিধা পায় দলটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই পেনাল্টি থেকে গোল আদায় করে নেন ফরাসি ‘নম্বর সেভেন’ আঁতোয়া গ্রিজমান।

১৬ জুনের ম্যাচে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আলোচিত ভিএআর সুবিধা নিয়ে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে জশ রিডসনের কাছ থেকে বল নিয়ে ডি বক্সের দিকে এগিয়ে যান গ্রিজমান। রিডসন বল ধরে রাখার চেষ্টায় ফাউল করে বসেন। রেফারি ঠিকমতো বুঝতে না পারায় সাহায্য নেন ভিএআর’র। তাতে পেনাল্টি কিকের সুযোগ পেয়ে যায় ফ্রান্স। খুব সহজেই গ্রিজমান গোল পেয়ে যান। ইতিহাসের পাতায় নাম উঠে যায় ফ্রান্স ও গ্রিজমানের।  

এই পদ্ধতিতেই মরক্কোর বিপক্ষে হারতে হারতে জয় পায় স্পেন।  

তবে যত সমালোচনাই হোক, ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার দাবি, সম্পূর্ণ সফল ভিএআর পদ্ধতি। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ফিফা জানানো হয়, এই বিশ্বকাপে তারা ৯৯.৩ শতাংশ সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আর ‘ভিএআরের’ কল্যাণেই প্রায় শতভাগ সফল তারা। ‘ভিএআরের’ সাহায্য এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে মোট ৭টি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। এছাড়াও দু’টি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হলেও পরে এই ‘ভিএআরের’ কল্যাণেই গোল দেওয়া হয়।

ফিফার এই নতুন প্রযুক্তির সফলতা নিয়ে কথা বলেন ফিফার রেফারির কমিটির প্রধান পায়ারলুইগি কলিনা। বলেন, প্রায় শতভাগ সফল আমরা। প্রায় ৯৯.৩ শতাংশ সঠিক সিদ্ধান্ত এসেছে এই ‘ভিএআরের’ সাহায্য নিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ এর সর্বশেষ