![]() ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল। ছবি: সংগৃহীত |
সেমিফাইনালে ১০২ জ্বর নিয়ে খেলেছেন ইভান রাকিটিচ। প্রয়োজনে এক পা নিয়ে হলেও মাঠে নামবেন, কথাটি তার মুখেই মানায়। রাকিটিচের এই কথাতেই ফাইনাল নিয়ে ক্রোয়েটদের মনোভাব টের পাওয়া যায়। ফুটবল ইতিহাসে ক্রোয়েটদের প্রথমবার ফাইনালে পৌঁছানোর পথটাও সহজ ছিল না।
অথচ ফাইনাল খেলতে যাওয়া এই দলটি নিয়েই বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব খেলা নিয়েই ছিল শঙ্কা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর আর কোনো আসরেই নকআউটে ওঠা হয়নি তাদের। তাই এবারও এই শঙ্কাই কাজ করছিলো। গ্রুপ পর্বে এসেও তাদের পড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার মতো দলের সামনে।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে এই দলগুলোকে হারিয়েই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে রীতিমত আলোড়ন তোলেন মদ্রিচ-রাকিটিচরা। শুরুটা হয় নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে। রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে রীতিমতো আর্জেন্টিনাকে কাঁপিয়ে দেয়। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় পায় ক্রোয়েশিয়া!
জয় পায় আইসল্যান্ডের বিপক্ষেও। তাদের ২-১ গোলের সেই জয়ের ফলেই অবশ্য আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় পর্বে উঠতে পেরেছিল।
নকআউট পর্বে প্রথমেই ডেনমার্কের মুখোমুখি হতে হয় ক্রোয়েশিয়াকে। আর এই ম্যাচেই খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। খেলা শুরুর প্রথম মিনিটেই জর্গেন্সনের গোলে এগিয়ে যায় ড্যানিশরা। যদিও তিন মিনিট পরই মারিও মানজুকিচ গোল করে সমতা ফেরান। এরপর আর গোল না হওয়ায় আরও ৩০ মিনিট যোগ হয়। কিন্তু তাতেও কোনো ফলাফল পাওয়া না যাওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারের দিকে।
এ পর্যায়ে দারুণ পারফরম্যান্স দেখান ডেনমার্ক ও ক্রোয়েশিয়ার দুই গোলরক্ষক। কিন্তু শেষপর্যন্ত দুই শট আটকে দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে কোয়ার্টারে তোলেন গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুভাসিচ।
কোয়ার্টারে আবারও সেই অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচ। রাশিয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচে ৩১ মিনিটে ডেনিশ চেরিশেভের দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় রাশিয়া। যদিও ৮ মিনিটেই গোল পরিশোধ করে দেয় ক্রোয়েশিয়া। খেলা চলে যায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ১-১ গোলে সমান হয় দুই দল। আবারও টাইব্রেকারে যায় ম্যাচ।
এদিনও সুভাসিচ নায়ক হয়ে দাঁড়ায়। শুট আউটে ৩-৪ গোলে জিতে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিতে ক্রোয়েশিয়া। সেখানে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ৫ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় ইংলিশরা। ৬৮ মিনিটে সেই গোল শোধ করে ক্রোয়েটরা। আবারও অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ। টানা তৃতীয়বারের মতো ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যায় জ্লাতকো দালিচ শিষ্যরা। তবে এই সময়ের মধ্যেই গোল দিয়ে জয় নিশ্চিত করে তারা। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনাল নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়েশিয়া।
২০১৬ ইউরোর ফাইনালে পর্তুগালের কাছে ১-০ গোলে হারের শিক্ষা আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই ফ্রান্সকে টেনে এনেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব থেকেই অবশ্য তাঁতিয়ে ছিল ফ্রান্সের এই তরুণ দলটি। পুরো টুর্নামেন্টে এক সুইডেনের কাছে হার ছাড়া কোনো ম্যাচেই পরাজয় দেখেনি লা ব্লুজরা।
পল পগবা, কিলিয়ান এমবাপ্পে, উসমানে ডেম্বেলেদের নিয়ে গড়া দলটি অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় প্রথম ম্যাচে। দ্বিতীয় ম্যাচে আরও করুণ দশা। পেরুর মতো দলের বিপক্ষে জিততে ঘাম ছুটে যায় ফরাসিদের। ৩৪ মিনিটে এমবাপ্পের গোলে দলটি উদ্ধার পায়।
ডেনমার্কের বিপক্ষে একদম প্রাণহীন ফুটবল খেলেছেন গ্রিজম্যান-এমবাপ্পেরা। সমালোচনায় ভরা সেই ম্যাচের পরই অবশ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে দলটি। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে গতিময় ফুটবল, ছন্দময় পাস আর আক্রমণের যেন মেলা বসায় ফ্রান্স। একসময় ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষপর্যন্ত ৪-৩ ব্যবধানে জিতে সেরা আটে যায় ফরাসিরা। জোড়া গোলে বিশ্বের নজর আরও একবার নিজের দিকে টেনে নেন এমবাপ্পে।
কোয়ার্টারে উরুগুয়ের বিপক্ষে দলগত এক ফ্রান্সের দেখা পাওয়া যায়। এডিনসন কাভানিবিহীন উরুগুয়েকে রুখে দিতে একসঙ্গে জ্বলে ওঠে দলটি। দারুণ প্রদর্শনীর পর ফলাফল ২-০ গোলের জয়। সেমিফাইনালের বেলজিয়ামের বিপক্ষে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে থেকেও শেষপর্যন্ত জয়টা দেখে দেশমের দলই। তারকা ফরোয়ার্ড থাকা স্বত্ত্বেও দলকে জেতাতে এগিয়ে আসতে হয় স্যামুয়েল উমতিতিকে। এই ডিফেন্ডারের হেডেই সেমির বাধা পার হয় ফ্রান্স। পৌঁছায় ফাইনালে।
রোববার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় সমকোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দেশ দুটি। এই ম্যাচ শেষে বিশ্ব পেয়ে যাবে তার নতুন চ্যাম্পিয়নকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৮
এমকেএম/এনএইচটি