বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাদ, উঁচু বাঁশ বা খুঁটির মাথায়, গাছের উপরে উড়ছে নানান দেশের পতাকা। এর মধ্যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের পতাকাই সবচেয়ে বেশি।
হাট-বাজারে চায়ের দোকানে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে প্রিয় দলের খেলার কৌশল নিয়ে। কে জিতবে রাশিয়া বিশ্বকাপ তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ছাদে, পার্শ্ববর্তী গাছে, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানে নিজ দলের সমর্থনে পতাকা উড়িয়ে দলের প্রতি সমর্থন জানান দিচ্ছে সমর্থকরা। একই চিত্র উত্তরের গোটা নীলফামারী জেলায়ও।
এ জেলার একদল খেটে খাওয়া মানুষ, যারা ক্ষেত-খামারে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন; তারাই ব্রাজিল দলের প্রতি সমর্থন জানাতে জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন। জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ও কামারপুকুর ইউনিয়নের একদল কৃষি শ্রমিক ২০১০ সালে বিশ্বকাপ চলাকালে ব্রাজিলের দলের খেলায় মুগ্ধ হন। এবার তারা ১৫টি জার্সি কিনেছেন। সেই জার্সি পরেই সবাই ধানের চারা লাগানো, ধান-পাট-গম কাটা ও মাড়াই, ক্ষেতের নিড়ানির কাজসহ সব কৃষি কাজ করেছেন।
কথা হয় ব্রাজিল সমর্থক ক্ষেতমজুর শ্রমিক দলটির নেতা মোকছেদুল ইসলামের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি জানান, ২০১০ সালে ব্রাজিল দলের খেলা দেখে ব্রাজিলভক্ত হন তারা সবাই। নিজেরা প্রথম জার্সি কিনে ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে থাকেন। দলটির ১৫ জন কৃষি শ্রমিকই জার্সি পরে সারাবছর ক্ষেতে-খামারে কাজ করেছেন।
ব্রাজিল দলের প্রতি তাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাদের ১০ হাজার টাকা ও ১৫টি জার্সি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। দলটি শুধু খেলা দেখাতেই সীমাবদ্ধ রাখেনি তাদের ঐক্য। সমবায় করে তারা প্রায় লাখ খানেক টাকাও জমিয়েছেন। সেই টাকা থেকে বিপদে-আপদে পরস্পরকে সাহায্যও করেন। সুবিধামতো সময়ে সেই টাকা পরিশোধও করে দেন তহবিলে।
১৫ সদস্যের দলটিকে রয়েছেন- আব্দুল কাদের, সাজু হোসেন, আইনুল হক, সাহানুর রহমান, সালেক, রাশেদ, আতাউর রহমান, মোকছেদুল (দুই জন), আকতারুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, হালিম, আনিস ও মোসাদ্দেক।
এসব কৃষি শ্রমিকদের সবার বাড়ি বাঙালিপুর ও কামারপুকুর ইউনিয়নের পাশাপাশি গ্রাম কোরানীপাড়া ও দলুয়া চৌধুরীপাড়ায়।
দলনেতা মোকছেদুল আরো জানান, তারা ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠী নামে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন। চলতি ইরি-বোরো ধান কাটার জন্য প্রতিবিঘা নিচ্ছেন ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। সমর্থক গোষ্ঠীতে সব সদস্যই কিছু করে টাকা জমা করেন। এভাবে তাদের নিজস্ব চাঁদার টাকায় চলছে তাদের সংগঠনটি। ব্রাজিলের জার্সি পরে কাজ করলে তাদের কাজে বেশ উদ্দীপনা আসে বলেও জানান তিনি।
ফুটবল খেলায় রেফারির বাঁশি দুটি দলকেই পরিচালিত করে থাকে। কিন্ত এই দলে বাঁশি নেই আছেন তাদের দলনেতা। তার কথা সবাই মেনে চলেন। কৃষি কাজের জন্য গৃহস্থরা তার হাতে পারিশ্রমিক ও অগ্রিম টাকা-পয়সা দেন। পরে সবাই তা বিলিবণ্টন করে নেন। কোনদিন কার কাজ হবে সেটাও ঠিক করেন দলনেতা।
মনের আনন্দে প্রিয় দলের জার্সি পরে ধান কাটছে ১৫ জনের কৃষি শ্রমিকের দলটি। তারা এবারে ভাড়া করে টিভি নিয়ে খেলা দেখবেন বলে ঠিক করেছেন। ২০১০ সাল থেকে তারা মিলেমিশে কাজ করছেন। নিজেদের মধ্যে কখনো ভুল বোঝাবুঝি হলে তা দ্রুতই মিটিয়ে ফেলেন তারা। ফলে তাদের ঐক্য বহাল রয়েছে এখনও।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
এমজেএফ