বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যবহার হতে যাওয়া প্রযুক্তিগত দিকগুলো তুলে ধরা হলো:
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)
ফিফা আয়োজিত পদ্ধতিটি প্রথম প্রয়োগ হয় ২০১৬ সালের ক্লাব বিশ্বকাপে। পরের বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ও কনফেডারেশনস কাপেও প্রয়োগ হয়।
আইএফবিএর পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৮০৪টি ম্যাচে ভিএআর ব্যবহার করা হয়েছে। যার মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত এসেছে ৯৮.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে। প্রত্যেক ম্যাচে গড়ে পাঁচ কিংবা তার কমবার ভিডিও রেফারি ব্যবহৃত হয়েছে এবং ৬৮.৮ শতাংশ ম্যাচে কোনো রিভিউ নেওয়া হয়নি।
মূলত ২০১০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের একটি গোল বাতিল করে দেওয়া হলে সেই গোল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় রেফারিকে। এরপর প্রথমবার ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে পরীক্ষামূলকভাবে ভিএআর প্রযুক্তি নিয়ে আসা হয়। তবে এবারের বিশ্বকাপে সেই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করা হয়েছে।
সেবারের রেফারির ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন তখনকার ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে এরকম ভুল ঠেকাতে তাই ২০১৪ বিশ্বকাপেই সংযোজন করা হয় গোললাইন প্রযুক্তি।
ম্যাচ চলাকালেই ফুটবলারদের তথ্য পাবে দলগুলো
রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচে মাঠে প্রত্যেক ফুটবলারের এবং বলের অবস্থান বিশ্লেষণ করা ও সে তথ্য দলগুলোকে দেওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে রাশিয়া বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২ দলকেই দুটি করে ট্যাব দেওয়া হবে। এর একটি ট্যাব দিয়ে অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে গ্যালারিতে বসা দলের বিশ্লেষকরা তাদের বিশ্লেষণ পাঠাবেন মাঠের ডাগআউটে। সেখানে আরেকটি ট্যাবে তা দেখতে পাবেন দলের সহকারী কোচরা।
দুটি অপটিক্যাল ট্র্যাকিং ক্যামেরা দিয়ে খেলোয়াড় ও বলের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন বিশ্লেষকরা। প্রয়োজনে তিনি স্থিরচিত্র এবং ড্রয়িংও পাঠাতে পারবেন ডাগআউটে। এছাড়া সহকারী কোচের সঙ্গে লিখিত বার্তা বা ওয়াকিটকির মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে।
নতুন এ প্রযুক্তিতে পাওয়া উপাত্ত খেলা চলাকালে, বিরতিতে এবং খেলার পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন কোচিং টিমের সদস্যরা। প্রযুক্তির এই ব্যবহারের ফলে প্রতিটি দলই ম্যাচ চলাকালীন নিজেদের টুকটাক ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাবে।
সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সামরিক প্রযুক্তি
ইউক্রেন এবং সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব উন্নত প্রযুক্তির পরীক্ষা করা হয়েছে বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামগুলোর বাইরে সেসব ড্রোন প্রযুক্তি স্থাপন করবে রাশিয়া। যার সবই সামরিক প্রযুক্তি। সন্ত্রাসীরা যাতে মাঠে কোনো ধরনের হামলা বা বোমা হামলা চালাতে না পারে সেজন্যই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে আয়োজক দেশটি।
এসব ড্রোন সরঞ্জাম বিশেষভাবে ডিজাইন করা, যা রাশিয়ান সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। যেসব ড্রোন ব্যবহার হবে তাতে জিএসএম মোবাইল, জিপিএস ডিভাইস এবং স্যাটেলাইট সংযোগের সঙ্গে রেডিও-ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহের জন্য ড্রোনে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবস্থাও। এই ড্রোন বিমান হামলা ঠেকাতেও কাজে দেবে।
ফক্স স্পোর্টসের বিশেষ প্রযুক্তি
মার্কিন সম্প্রচার সংস্থা ফক্স ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তির জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের বাছাই থেকে বাদ পড়ে যাওয়ায় সে অর্থ পাওয়া নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। সে অর্থ পাওয়া যাবে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত না জানা গেলেও রাশিয়া বিশ্বকাপ সম্প্রচারের জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করছে ফক্স স্পোর্টস। তারা মোট চারটি শো করার জন্য একটি বিশেষ স্টুডিও সাজিয়েছে। স্টুডিওতে থাকবে রোবটিক ক্যামেরা, ১৮০ ডিগ্রি ভিজুয়াল অ্যাঙ্গেল। সেখানে ব্যবহার হবে ৩৭টি ক্যামেরা। বিশ্বকাপের বিভিন্ন ভেন্যুতে থাকবে ফক্স স্পোর্টসের ৮০টি মাইক্রোফোন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
এমকেএম/এমএমএস/এমজেএফ