ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮

১৯৫৪ বিশ্বকাপ: টেলিভিশনে সম্প্রচারিত প্রথম আসর

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৮
১৯৫৪ বিশ্বকাপ: টেলিভিশনে সম্প্রচারিত প্রথম আসর ছবি: সংগৃহীত

ফিফা পঞ্চম বিশ্বকাপ মাঠে গড়ায় ১৯৫৪ সালে। ১৬ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ আনুষ্ঠিত হয়। এই আসরটি ইতিহাসের পাতায় এখন অব্দি আলাদা একটি স্থানে রয়েছে। টুর্নামেন্টটিতে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে খেলা সম্প্রচার হয়। 

এছাড়া আগের সব আসরের গোলের সকল রেকর্ড ভেঙে যায়। যেখানে প্রতিটি ম্যাচে গোল গড়ও ছিল সবচেয়ে বেশি।

ফাইনালে ফেভারিট হাঙ্গেরিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় পশ্চিম জার্মানি।

১৯৫০ আসরের মতো এবারও আয়োজক ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দেশ সরাসরি খেলার সুযোগ পায়। ফলে ঘরের দেশ সুইজারল্যান্ড ও শিরোপাধারী উরুগুয়েকে বাছাই পর্বের বাঁধা টপকাতে হয়নি। ১৬ দলের বাকি থাকে ১৪ দেশ। যেখানে ইউরোপ থেকে বরাদ্দ হয় ১১টি দেশ, আমেরিকার দুটি ও এশিয়ার একটি। ট্রফি নিয়ে পশ্চিম জার্মানি দল-ছবি: সংগৃহীতএই আসরে স্কটল্যান্ড, তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। যদিও তুরস্ক ও স্কটল্যান্ড ১৯৫০ আসরে সুযোগ পেয়েও নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। আর ১৯৩৪ সালের পর প্রথম যোগ্যতা অর্জন করে অস্ট্রিয়া। কিন্তু ১৯৫০ আসরের তৃতীয় ও চতুর্থ দল সুইডেন ও স্পেন যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। বাছাইয়ে তুরস্কের কাছে অঘটনের শিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা হয়নি ফেভারিট স্পেনের।

এই আসরে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে আবারও বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ করে দেয়া হয়। দুয়ার খোলে জাপানেরও। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই দেশগুলোকে ১৯৫০ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও পূর্ব জার্মানি নিজেদের অভ্যন্তরীন ঝামেলার কারণে বাছাইয়ে খেলেনি। অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিশালী দেশ আর্জেন্টিনা টানা তৃতীয় বিশ্বকাপে খেলতে অস্বীকৃত জানায়।

১৯৫৪ বিশ্বকাপে অংশগ্রহনকারী দেশগুলো হলো, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, চেকস্লোভিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, স্কটল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড (আয়োজক), তুরস্ক, উরুগুয়ে (ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন), পশ্চিম জার্মানি ও যুগোস্লাভিয়া। এই আসরে ব্যবহৃত বল-ছবি: সংগৃহীতভিন্ন ফরম্যাটের কারণে আবার এই বিশ্বকাপকে সবাই মনে রাখবে। ১৬টি দল চার ভাগে ভাগ হয় চারটি গ্রুপ হয়। প্রতিটি গ্রুপে ‍দুটি বাছাইকৃত দল ও দুটি অ-বাছাইকৃত দল থাকে। তবে প্রতিটি গ্রুপে মাত্র চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাছাই দল খেলছিল অ-বাছাই দলের বিপক্ষে। যেখানে রাউন্ড রবিন পদ্ধিতিতে স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিটি দল একে অপরের বিপক্ষে খেললে ছয়টি ম্যাচ হতো।

গ্রুপ পর্বে আরেকটি অদ্ভুত নিয়ম ছিল, খেলা নির্ধারিত ৯০ মিনিটে শেষ না হলে অতিরিক্ত সময়ে গড়াতো। জয়ী দলের জন্য দুই পয়েন্ট, আর ড্র হলে এক পয়েন্ট ছিল। গ্রুপের সেরা দুই দল নকআউট পর্বে যাওয়ার সুযোগ পায়। যদি প্রথম ও দ্বিতীয় দলের পয়েন্ট সমান হয়, তবে নিয়ম ছিল ড্রয়ের ফলে শীর্ষ দল নির্বাচন করা। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলের পয়েন্ট যদি সমান হয়, সে ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্লে অফ খেলে দ্বিতীয় দল নির্বাচন করা নিয়ম হয়।

এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে সম্ভাবনা নিয়ে খেলতে আসে হাঙ্গেরি। ফেরেঞ্জ পুসকাস-কোস্চিসদের গড়া দলটি গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৯-০ গোলে হারানো পর বিশ্ব যুদ্ধের ‍পর অনেকটা দুর্বল দল পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারিয়ে দেয়। কোয়ার্টারে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় ও সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে একই ব্যবধানে হারায়। কিন্তু ফাইনালে কি যেন হয়ে যায় হাঙ্গেরির। গ্রুপ পর্বে হারানো পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়। আর প্রথমবারের মতো ট্রফির স্বাদ পায় পশ্চিম জার্মানি। অনেকের মতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ তারা বিশ্বকাপ জিতে নিল।

১৯৫৪ আসরটি সুইজারল্যান্ডের মোট ছয়টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। ভেন্যু গুলো হলো: বের্নের ওয়াঙ্কড্রফ স্টেডিয়াম, বাসেলের সেন্ট জ্যাকোব স্টেডিয়াম, লাউসান্নের স্তাদে অলিম্পিকু ডি লা পন্টাইস, জেনেভার চারমিলেস স্টেডিয়াম, লুগানোর কর্নারেডো স্টেডিয়াম ও জুরিখের হার্ডট্রাম স্টেডিয়াম।

আরও কিছু রেকর্ড:
•    পুরো টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৪০টি গোল হয়েছিল।
•    ম্যাচ প্রতি গড়ে ৫.৩৮ গোল হয়।
•    দলীয়ভাবে হাঙ্গেরি সর্বোচ্চ ২৭টি গোল করে।
•    হাঙ্গেরির প্রতি ম্যাচে ৫.৪টি গোলের রেকর্ড ছিল।
•    ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন হাঙ্গেরির সান্দোর কোস্চিস।
•    সবচেয়ে বেশি গোল হজম করে দক্ষিণ কোরিয়া (১৬)।
•    অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২টি গোল হয় (অস্ট্রিয়া ৭, সুইজারল্যান্ড ৫)।
•    টুর্নামেন্টে দর্শক সমাগম হয় মোট ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৭ জন। প্রতি ম্যাচে গড়ে ২৯ হাজার ৫৬২ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ২৮ মে, ২০১৮
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ এর সর্বশেষ