ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

দর্শনার্থীদের ভিড় বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে 

টিপু সুলতান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২২
দর্শনার্থীদের ভিড় বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে 

পাবনা (ঈশ্বরদী): বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ব্রিটিশ আমলের নির্মিত শতবর্ষের পুরোনো রেল জংশন স্টেশন 'ঈশ্বরদী' অবস্থান করছে।  

বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘরে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জীবন, আদর্শ, অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম ও তার অসামান্য জীবন দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে 'ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর'।

 

ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনের দুই নাম্বার প্লাটফর্মে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ক্রমেই সববয়সী দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। যাদুঘরটি উন্মুক্তের শুরু থেকে অদ্যাবধি ঈশ্বরদীর বিভিন্ন জায়গার থেকে আসা শিক্ষার্থী, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি এতটাই বেশি। পরিস্থিতি অনুকূলে রাখার জন্য কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষকে।

ঈশ্বরদী শহরের শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ণমালা বিদ্যাপীঠের প্রায় অর্ধশতাধিক শিশু শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ঘুরে দেখেন। এসময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক মণ্ডলী উপস্থিত ছিলেন

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ঈশ্বরদী জংশন রেলস্টেশনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
 
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) থেকে শনিবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরটি সবার জন্য খোলা থাকবে।  

আগামী ১০ অক্টোবর সকাল থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) কার্যলয়ের সামনে প্রদর্শন করা হবে। পরে ১৪ অক্টোবর পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হবে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ ট্রেন জাদুঘর।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনে ভেরামারা থেকে ঈশ্বরদীতে আনা হয়েছে। বর্তমানে ওই ট্রেন জাদুঘরটি ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মের দক্ষিণ পাশে রাখা হয়েছে।
 
বুধবার (৫ অক্টোবর) পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটির উদ্বোধন করা হয়।  

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে এ জাদুঘরে গিয়ে দেখা, যায় শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বগিটি বেশ সুন্দর পরিপাটি। বগিতে উঠতেই কানে আসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। দরজার পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত মুজিব শতবর্ষের লোগো। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবন-আন্দোলনের সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভিডিওর মাধ্যমে।  
 
জাদুঘরে স্থান পেয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ার বাবার বাড়ি, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চশমা, দলীয় প্রতীক 'নৌকা', মুজিব কোট, মুজিব শতবর্ষের লোগো এবং বঙ্গবন্ধুর তামাক পাইপ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধের রেপ্লিকা।

জাদুঘরে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ-বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া জাদুঘরটিতে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে সৃজনশীল একটি বুকশেলফ। সেখানে শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়াচীনসহ তার কর্মময় জীবনের ওপরে রচিত গুরুত্বপূর্ণ বই। শোভা পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই 'শেখ মুজিব আমার পিতা'।

ঈশ্বরদী সাঁড়া মাড়োয়ারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাউফ ইসলাম অনিম ও তার বন্ধু রিয়াদ অনুভূতি জানিয়ে বলে, আমরা গর্বিত, আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করি। আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।  

ঈশ্বরদী শহরের সাঁড়া গোপালপুর এলাকা থেকে সপরিবারে এসেছেন প্রকৌশলী ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, এখানে এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি আরও বেড়েছে।  

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফিরদাউস জিম্মি বলেন, এক কথায় সত্যিই দারুন- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন বলেই আমরা স্বাধীন সার্বভৌম ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। সেই মানুষটির জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনকে স্বাগত জানাই।  

ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট (এসএস) মহিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

রেল জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য চিত্র ঈশ্বরদীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষের মধ্যে অনেকটা সাড়া ফেলেছে। সকাল-বিকেল বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ জাদুঘর পরিদর্শন করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।